EDITORIAL FOR 16TH JANUARY

গ্রামবাংলা কথা বলছে

সম্পাদকীয় বিভাগ

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

প্রাক-নির্বাচন ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু হয়েছিল প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে। মানুষজন ফোন করে দেখেছিলেন ঘণ্টা কেটে যায়, কেউ কিছু শোনে না। যদি বা শোনে তার সমস্যার কোনও প্রতিকার হয় না। তবে ভোটের আগে নিশ্চয়ই সেই কায়দায় কিছু ফল উঠেছিল তৃণমূলের ঘরে। এবার ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’, দিদির দূত হয়ে গ্রামে পৌঁছাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের। সরকার তাদের, পৌরসভা তাদের, পঞ্চায়েত তাদের, হেন কোনও সংস্থা বা কমিটি নেই যা তাদের নয়। তবুও তাদের সঙ্গে মানুষের নাকি দেখা হয় না। তাই গ্রামে যেতে বলা হয়েছে। 


কিন্তু অভিজ্ঞতা যা হচ্ছে, তা শাসক দলের নেতাদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামে গেলেই মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। কোথাও কোথাও রীতিমতো তাড়া খেতে হচ্ছে। কোথাও পালাতে হচ্ছে। সাংসদকে শুনতে হচ্ছে, আপনার বিধায়ক এ পথের ছায়া মাড়ান না, প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়ে সরে পড়েছেন। কোথাও বিধায়ককে শুনতে হচ্ছে, সাংসদ কোথায়, ডেকে নিয়ে আসুন, কেমন দেখতে হলো একটু দেখি। পঞ্চায়েতের নেতা, স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে ক্যামেরার সামনেই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন মানুষ। রেগার কাজ, আবাস যোজনা, রাস্তা তৈরি, সেচ— সব নিয়েই প্রবল ক্ষোভ। দুর্নীতির ঢালাও অভিযোগ। পরিস্থিতি এই যে এখন আর মুখ খুলতে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন না। গ্রামে শাসক দলের দুর্বৃত্ত নেতারা এখনও দাপট দেখাচ্ছেন এ যেমন সত্যি তেমনই সঙ্ঘবদ্ধ মানুষের সাহস বেড়েছে, এও তেমন বাস্তব।

 
গ্রামবাংলার ছবি কী, তা উঠে আসছে শাসক দলের এই কর্মসূচি থেকেই। জোর করে পঞ্চায়েত দখলের পর থেকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকেই লাটে তুলে দিয়েছে তৃণমূল। নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদেরও কোনও অধিকার নেই। সেখানে কাজ করছে শাসক দলের সিন্ডিকেট। নানা খাতের সরকারি বরাদ্দ লুট হয়ে যাচ্ছে, তৃণমূলের নেতাদের সম্পদ বাড়ছে। এমন প্রকট, কুৎসিতভাবে বাড়ছে যে আড়াল করার কোনও সুযোগ নেই। চুরি ছাড়া এই সম্পদ হতে পারে না। কিন্তু শুধু ব্যক্তিবর্গের চুরির বিষয় নয়, সরকারি ব্যবস্থাই এমন ভাবে চলছে যে চুরির রাস্তা করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের যা প্রাপ্য তা পাচার হয়ে যাচ্ছে লুটেরা শাসকের হাতে। প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এই বিপুল লুণ্ঠনের কাঠামো গড়ে তোলা অসম্ভব। মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন, ক্ষোভ জমা হয়েছে, তার সামান্য প্রতিফলন পড়ছে এই বিক্ষোভে। 


সামান্য, কেননা এর থেকে অনেক বড় মাত্রায় ক্ষোভের বিস্ফোরণের জন্য তৈরি থাকতে হবে তৃণমূলকে। এই বঞ্চনা, এই শোষণ মানুষ কতদিন মুখ বুজে সহ্য করবেন? একটি বিকল্প দৃশ্যও কিন্তু গত তিন মাসে নজরে পড়েছে। বামপন্থীরা গ্রামে গ্রামে পদযাত্রা করেছেন। সেই পদযাত্রায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। কোথাও কোথাও পদযাত্রার শেষে সভা-সমাবেশে লোক উপচে পড়েছে। এমনকি বামপন্থী সংগঠকরা ভাবতেও পারেননি এমন সংখ্যায় জনজমায়েত হয়েছে। বিক্ষিপ্ত কয়েকটি জায়গায় হামলা হয়েছে, পুলিশের সাহায্য নিয়ে কোথাও কোথাও আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু বামপন্থীদের পদযাত্রা বা কর্মসূচি ভেঙে দেবার হিম্মৎ হয়নি শাসক দলের। হয়নি কেননা তারা জানে তেমন হলে জনরোষের মুখে পড়তে হবে। 


বাংলার গ্রামে মানুষের জাগরণ ঘটছে। কোনও নাটকেই এখন তা রুদ্ধ করা যাবে না।

Comments :0

Login to leave a comment