no beef in Sabir's hut

গোমাংস ছিলই না সাবিরের ঝুপড়িতে

রাজ্য

ভুয়ো গুজব ছড়িয়ে পরিযায়ী শ্রমিক সাবির মালিককে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পিটিয়ে খুন করার দু’মাস পর শনিবার হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পুলিশ জানাতে বাধ্য হলো, তাঁর বাড়ি থেকে গোমাংস পাওয়াই যায়নি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র খবর অনুযায়ী, ভাদরা পুলিশের ডেপুটি সুপার ভারত ভূষণ এদিন বলেন, ‘সাবিরের ঝুপড়িতে রান্না হওয়া মাংসের নমুনা ফরিদাবাদের এক গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি এবং জানতে পেরেছি সেটি গোমাংস ছিল না।’ চারখি দাদরির পুলিশ সুপার পূজা বশিস্ত দাবি করেন, ‘সাবিরকে খুনের অভিযোগে দশ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। শীঘ্রই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ কিন্তু তার বহু আগেই উত্তর প্রদেশের দাদরির মহম্মদ আখলাক থেকে পেহলু খান, জুনেইদ খানদের সঙ্গেই দীর্ঘ এই তালিকায় সাবিরের নাম লেখা হয়ে গিয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ভুয়ো গুজব ছড়িয়ে তাণ্ডবের শিকার হতে হলো আরও এক তরতাজা যুবককে। এর দায় কার? সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্য পুলিশ বা প্রশাসন কেউই দিতে পারেনি। 
আগস্ট মাসের ২৭ তারিখ পশ্চিমবঙ্গের বছর বাইশের সাবিরকে হরিয়ানার চারখি দাদরিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পিটিয়ে খুন করে। পেটের তাগিদে পশ্চিমবঙ্গের বাসন্তী থেকে হরিয়ানা গিয়ে কাগজ কুড়োনোর কাজ করতেন সাবির। থাকতেন বাধরা গ্রামের কাছে। এফআইআর থেকে জানা গিয়েছে, সেদিন একদল হিন্দুত্ববাদী সাবিরকে মিথ্যা কথা বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। ওকে বলা হয়েছিল, বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি দোকানে প্রচুর ফেলে দেওয়া কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল সহ অনেক জিনিসপত্র বিক্রি করা হবে। সেটা যে আসলে ফাঁদ ছিল, বোঝেননি সাবির। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতেই শুরু হয় বেধড়ক মারধর। পিটিয়ে ওখানেই তাঁকে মেরে ফেলে হিন্দুত্ববাদীরা। সাবিরের সঙ্গেই আসামের বাসিন্দা আরেক পরিযায়ী শ্রমিক আসিরুদ্দিনকেও বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে গিয়ে মারধর করে তারা। কিন্তু সেখান দিয়ে যাতায়াত করা কয়েকজন বাধা দিলে বাইকে চাপিয়ে দু’জনকেই অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সাবিরের দেহ পাওয়া যায় ভান্দোয়া গ্রামের এক খালের ধার থেকে। আর আসিরুদ্দিনের দেহ উদ্ধার হয় অন্য জায়গায়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী, আসিরুদ্দিন কোনওরকমে পালিয়ে যান। আর সাবিরের দেহ পাওয়া যায় ওঁর ঝুপড়ির কাছেই। 
সাবিরের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই ফোন যায় পুলিশের কাছে। বলা হয়, সাবির যে ঝুপড়ি থাকে, সেখানে গোমাংস রান্না-খাওয়া চলছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই মাংস তুলে ফরেন্সিক পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে দেয়। সেই নমুনা পরীক্ষা করেই এতদিন পর জানা গেল, তা গোমাংস ছিল না। নিহত শ্রমিকের পরিজনরা জানান, পুলিশ তাঁদেরও ডেকে জেরা করেছে। তাঁরা গোমাংস খেয়েছেন কি না বারবার সেই প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ এই অভিযোগ পেয়ে কেন তখনই সাবির বা আসিরুদ্দিনের খোঁজ করল না? কেন উলটে সাবিরের আত্মীয়-প্রতিবেশীদের ডেকে জেরা করা হলো?
হংসওয়াস খুর্দ গ্রামের এক ঝুপড়িতে সাবির তাঁর স্ত্রী এবং দু’বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে থাকতেন। কোনওক্রমে স্বল্প রোজগারে দিন কাটত। গুজব ছড়িয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবের জেরে এভাবেই একের পর এক মা-বাবার কোল খালি হয়ে গিয়েছে, আবার কেউ হারিয়েছেন স্বামীকে, কেউ বাবাকে। নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে উগ্র হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী এই স্বঘোষিত গোরক্ষকদের দাপট বাড়তে শুরু করে। বেছে বেছে পিটিয়ে খুনের ঘটনা বেড়ে যায়। মোদী রাজত্বের দশ বছরে অভিযুক্ত একজন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরও কোনও শাস্তি হয়নি। উলটে অভিযুক্তদের মাথায় ছাতা ধরা হয়েছে বারবার।

Comments :0

Login to leave a comment