Elephant Attack

জঙ্গলমহলে হাতির তাণ্ডবে কৃষকের মৃত্যু, প্রশাসনকে ঘিরে বিক্ষোভ

রাজ্য

চিন্ময় কর

জমির ধান বাঁচাতে গিয়ে হাতির পালের তাড়ায় পুকুরে পরে কৃষককের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ। ওই কৃষকের মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভে জড়ো হয়েছেন গ্রামের মানুষ। ঘটনাটি ঝাড়গ্রাম জেলার বড়চাঁদাবিলা মৌজায়। ৪০-৪৫ টি হাতির দল ধানের জমিতে নেমে তাণ্ডব চালানোর সময় ধান জমি রক্ষা করতে গিয়েছিলেন কৃষকরা। হাতির তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েও প্রাণ বাঁচাতে পারলেন না। পরনের পোশাক জড়িয়ে পুকুরের জলে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয় পরীক্ষিত মাহাতো (৪২) নামে এক কৃষকের। বাড়ি ঝাড়গ্রাম থানার অন্তর্গত বড়চাঁদাবিলা গ্রামে। গত এক বছরে জঙ্গলমহলে হাতির আক্রমণে প্রাণহানি হয়েছে ৬৯ জনের। ফসলের ক্ষতি সহ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে ধান চাল লুটের ঘটনা দেড় শতাধিক। পথ অবরোধ বিক্ষোভ, বিট অফিস ঘেরাও বিক্ষোভ করে সমস্যার কোনও প্রতিকার হয়নি। উলটে হাতির হামলা বাড়ছে। মানুষের মৃত্যু, জমির ফসল নষ্ট এবং ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে।


বড়চাঁদাবিলা থেকে মাত্র ২কিমি দূরে বন দপ্তরের ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের পুকুরিয়া বিট দপ্তর। বন দপ্তর থেকে হাতিকে তাড়ানোর কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় কৃষকরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এলাকার কৃষকরা। হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সেই পুরানো আমলের নিয়মকে সামনে রেখে সামান্য অর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় তাও আবার বছর পার হলে। এতে চাষের খরচের দশ ভাগের এক ভাগ টাকাও আসে না। এর প্রতিকার চেয়ে বিক্ষোভ চলে দীর্ঘক্ষণ। ক্ষতিপূরণ এবং হাতি তাড়ানোর দাবি নিয়েই কৃষকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
২৮০টির বেশি  দলমার  হাতির দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে  পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করে। হাতির পালের তাণ্ডবে সর্বস্বান্ত কৃষক সমাজ সহ প্রান্তিক মানুষ। বন দপ্তর সহ প্রশাসন নির্বিকার। গত ১২বছরে জঙ্গলমহলে ২২ ভাগ জঙ্গলের পরিমাণ কমেছে। গাছ কেটে পাচার সহ বনভূমিতে অবৈধ পাথর মোরাম খাদান ব্যবসার সিন্ডিকেট রাজে শাসক দল ও প্রশাসনের মাথারা যুক্ত। দলমার পাহাড় সহ ছোটনাগপুর মালভূমির তটভূমিতে বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড ও বাংলার সীমানায় পাহাড় ফাটিয়ে খনিজ ধাতব আকরিক লৌহ, জিঙ্ক, তামা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি দেদার লুটের কারণে গভীর খাত তৈরি হওয়ায় হাতির পালের চলাচলের করিডর ধ্বংস হওয়ায় আর হাতির পাল ফিরে যেতে পারছে না। অপর দিকে জঙ্গল ধ্বংস হওয়ায় খাদ্য সঙ্কটে হাতির পাল। এর ফলেই লোকালয়ে আবাসিক হিসাবে সারা বছর ধরে থেকে যাচ্ছে দলমার হাতির দল। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর জাম্বনী, মানিকপাড়া লালগড় এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের কঙ্কাবতী, মণিদহ, চাঁদড়া, ধেড়ুয়া, শালবনী ব্লকের পীড়াকাটা, ভীমপুর, কলসিভাঙা, সিরসা, দেবগ্রাম এবং গোয়ালতোড় ব্লকের একাধিক এমন গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় হাতির পাল সারা বছরই দাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাদ্য সঙ্কটে হিংস্র হয়ে লোকালয়ে হানা সহ সড়কের ওপর পণ্যবাহী লরি আটক করে খাদ্যদ্রব্য লুট করছে। 


পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী একদিকে ওডিশা, অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড দুই রাজ্যর সীমানাতে এবং বাংলার মাটিতে ময়ূরভঞ্জ থেকে জামাইমারি পর্যন্ত মালভূমির একাধিক আস্ত পাহাড় আজ নিশ্চিহ্ন হয়েগেছে। মালভূমির চড়াই উৎরাই মাঝে তৈরি হয়েছে গভীর খাদ। প্রশাসন ও শাসক দলের যৌথ মদতে গড়ে উঠেছে খনিজ পদার্থ লুটের সিন্ডিকেট বাহিনী। পাহাড় ফাটিয়ে লুট হয়েছে খনিজ তামা, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ আকরিক সহ ক্যালসিয়াম নানান ধাতব পদার্থ। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ঘুর পথে দলমার হাতির পাল বাংলার এই বনাঞ্চলে চলে এলেও ফেরার করিডরে এমন গভীর খাদ তৈরি হওয়ায় তারা আর দলমা ফিরে যেতে পারছে না। হাতির হানা নজরদারি করতে বন দপ্তরের বিট ও রেঞ্জ অফিসগুলিতে হাতে গোনা ৩-৫ জন করে কর্মী রয়েছেন। শূন্যপদে লোক নিয়োগ নেই। একজন বিট বা রেঞ্জ অফিসারের ঘাড়ে ৩-৫টি এলাকার দায়িত্ব রয়েছে। ফলে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। মৃত্যু হচ্ছে সাধারণ মানুষের। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও প্রান্তিক মানুষ।

Comments :0

Login to leave a comment