Sagardighi

বিধায়ক কিনলো তৃণমূল, ক্ষোভে ফুঁসছে সাগরদিঘি

জেলা

 তৃণমূল কিনেনিল। সাগরদিঘির মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তৃণমূলে যোগ দিলেন মাত্র তিন মাস আগে সেখানকার বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। সোমবার ঘাটালে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিয়ে বায়রন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগদানের কথা জানিয়েছেন।
  ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি সাগরদিঘি থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে জিতেছিলেন সুব্রত সাহা, ভোটে জিতে একাধিকবার মন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি। সেই সাগরদিঘিতেই তিন মাস আগের উপনির্বাচনে ২২, ৯৮০ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস ব্যানার্জি হেরেছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের কাছে। বিজেপি প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছিল। তৃণমূল এবং বিজেপি’কে হারাতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের একসঙ্গে লড়াইকে সাগরদিঘির মানুষ এভাবেই সমর্থন জানিয়েছিলেন। বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক হয়ে ওঠেন বায়রন বিশ্বাস। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পরাজয়কে মানতে না পেরে বলেছিলেন, ‘সাগরদিঘিতে টাকার খেলা হয়েছে।’ কিন্তু বায়রন বিশ্বাস জেতার পরেও প্রথমে তাঁর শপথ গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকেই শুরু হয় ‘ঘোড়া কেনা’র খেলা। এরপরে স্বয়ং অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে সেই বিতর্কিত মন্তব্য করেন, ‘বায়রন তো তৃণমূলেরই’। তখনও পর্যন্ত বায়রন বিশ্বাস জানিয়েছিলেন যে তিনি তৃণমূলে যাবেন না। কিন্তু সোমবার সাগরদিঘি বিধানসভার মানুষের ‘তৃণমূল-বিজেপি’ বিরোধী রায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তিনি সেই তৃণমূলেই যোগ দিলেন। 
   সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’কে হারাতে আমরা সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলাম এবং সেখানকার মানুষও তা সমর্থন করেছিলেন। এখন মানুষের রায়কে উলটে দিতে তৃণমূল যা করল, তাতে মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়বে। এভাবে ওরা রেহাই পাবে না। অভিষেক ব্যানার্জির ক্ষমতা থাকলে মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে বায়রনকে দলে গ্রহণ করলেন না কেন? কেন ঘাটালে বসে করতে হলো?
   বায়রনের তৃণমূলে যোগদানে বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের যৌথ লড়াইয়ের কৌশল ধাক্কা খাবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, কেন? অভিষেকের সঙ্গে বায়রনের মিলন হয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের মিলন তো হয়নি। সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের প্রার্থীকে বামফ্রন্টের সমর্থনের সিদ্ধান্ত সেখানকার মানুষও সমর্থন করেছিলেন। এখন অভিষেক ব্যানার্জি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই তাড়া খাচ্ছেন। তাই অমিত শাহের কাছে নিজের ওজন বাড়াতে অন্য দলের বিধায়ক ভাঙাচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জি, মুকুল রায় আর শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে বিধায়ক সাংসদ কেনার দোকান খুলেছিলেন, সেই কেনাবেচা এখনও চলছে। তৃণমূল আর বিজেপি’তে যাওয়া আসা চলছে, আর লোকসভার অধ্যক্ষ এবং বিধানসভার অধ্যক্ষ দলত্যাগ দেখতেই পাচ্ছেন না। 
  দল পালটে বায়রন বিশ্বাস বলেছেন, আমি নিজের জোরে জিতেছি, কংগ্রেসের জোরে নয়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছেন, কংগ্রেসের প্রতীকের জোরে মানুষের ভোট পেয়ে এসব কথা মানায় না। সাগরদিঘির ভোটে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে মমতা ব্যানার্জিকে, তৃণমূল এবং বিজেপি’কে পরাস্ত করা যায়। এটাই সবচেয়ে বড় কথা। সাগরদিঘির মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। মমতা ব্যানার্জি দল ভাঙানোর খেলায় সিদ্ধহস্ত সকলেই জানে। আগেও কংগ্রেস ভাঙিয়ে বিধায়কদের দলে নিয়েছেন। আবারও করলেন। 
   ঠিক কীসের বিনিময়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন তা বায়রন বিশ্বাস প্রকাশ করেননি, শুধু বলেছেন আরও বেশি কাজের সুযোগের জন্য দল পালটেছেন। কিন্তু সাগরদিঘির মানুষ তাঁর এই কাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছেন। উপনির্বাচনে সাগরদিঘির ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ টিতেই হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস ব্যানার্জি। ১টি পঞ্চায়েতে দুই প্রার্থীই পেয়েছিলেন সমান সমান ভোট। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য কোনও অপেক্ষা না করে এখনই জবাব দিতে চাইছেন স্থানীয়রা। দল বদলু বায়রনের পদত্যাগ করে ক্ষমতা থাকলে তৃণমূলের প্রতীকে জিতে আসুক বলে দাবি করেছেন তাঁরা। কারণ তাঁকে জেতাতে তৃণমূল সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হয়েছে সাগরদিঘির মানুষকে। ভোটের দিন তৃণমূলের বহিরাগরদের ঢুকতে বাধা দিয়েছেন বাড়ালার মানুষ। সেদিন সামনের সারিতে ছিলেন বাড়ালার ইসরাফিল মল্লিক। ইসরাফিল মল্লিকের কথায়, তৃণমূল ও বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমি না ছাড়াই ছিল এই নির্বাচনে আমাদের আসল লক্ষ্য। সেটা মানুষ করে দেখিয়েছেন। বিধায়ল দল বদলালেও বিধায়কের নিজস্ব কোনও সংগঠন নেই এলাকায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বায়রন বিশ্বাসকে নিজেদের উত্তর জানিয়ে দেবেন সাগারদিঘির মানুষ।
একই সুর শোনা যাচ্ছে শেখদিঘির হাইওয়ে লাগোয়া চায়ের দোকানে। সেখান থেকে প্রবীণ বাসিন্দা ইয়ার আলি বলছেন, গ্রামের মানুষের কথা খুব স্পষ্ট। যিনি দল পালটেছেন তাঁর উচিত পদত্যাগ করে ভোটে লড়া। তবেই কত ধানে কত চাল বোঝা যাবে।
  সাগরদিঘির সিপিআই(এম) নেতা রজব আলি মল্লিকের কথায়, উনি তো আগেই জানতেন উনি রাজ্যের বিরোধী বিধায়ক হবেন। সেই কাজ করার জন্যই সাগরদিঘির মানুষ কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। আমরাও মাঠে ময়দানে পরিশ্রম করেছি। এই যোগদানে কর্মীদের হতাশার কোনও জায়গা নেই। সাগরদিঘিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গোবর্ধনডাঙ্গার বাসিন্দা আল আমিন শেখ বলেছেন, যদি উনি নিজের জোরেই ভোটে জিতে থাকেন, তবে পদত্যাগ করে আরেকবার লড়েই দেখান না। 
  সাগরদিঘিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস দেখিয়েছিলেন পাটকেলডাঙ্গার মানুষ। এই পাটকেডাঙ্গাতেই তাড়া খেয়েছিল তৃণমূলের বাহিনী। সোমবার পাটকেলডাঙ্গায় কংগ্রেস অফিস থেকে সরিয়ে ফেলা হয় বায়রন বিশ্বাসের ছবি। সাগরদিঘি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি সাইদুর রহমান জানান, সিপিআই(এম)’র সাথে যৌথভাবেই পঞ্চায়েতে লড়তে আগ্রহী দলের কর্মীরা। পঞ্চায়েতের লড়াইয়েই জবাব দেওয়া হবে দলত্যাগী বিধায়ককে।
 

Comments :0

Login to leave a comment