Basirhat labour died

বাবাকে হারানোর শোক নিয়ে পরীক্ষা দিল কাশ্মীর

রাজ্য

প্রবীর দাস: বসিরহাট 
 

পেটের তাগিদে ভিনরাজ্যে গিয়ে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় একই গ্রামের ৭ যুবক ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে‌। মৃতদের সবার বাড়ি উত্তর ২৪পরগনার বসিরহাটের নেহালপুর গ্রামের সরদারপাড়ায়।
মৃত সাত যুবক হলেন সুরজ মণ্ডল (৪৩), আমিরুল আলি সরদার (২৬) করিম সরদার (২৬), মহম্মদ আরিফ সরদার (২৭), জাহাঙ্গির সরদার (৩২), মোয়াজ্জেম সরদার (৩২) মহম্মদ আমজেদ আলি সরদার(২৫)। আরিফ, মোয়াজ্জেম, জাহাঙ্গির— মৃতদের এই তিনজন একই পরিবারের। বাকিরা আত্মীয়-স্বজন একে অপরের। 
   শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে ওডিশার জাজপুর জেলার ধর্মশালা থানার চণ্ডীপুরে, জাতীয় সড়কের উপর। গাড়ির চালক ছিলেন সুরজ মণ্ডল। বাকিরা ছিলেন যাত্রী। নেহালপুরের গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মৃত যুবকরা শুক্রবার বিকাল ৩টে নাগাদ ওই গাড়িতে রওনা দেয় মুরগির বাচ্চা আনতে। তাঁদের গন্তব্য ছিল কটক। চণ্ডীপুর জাতীয় সড়কের উপর পিছন থেকে একটি ডাম্পার সজোরে ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়িটিকে। গাড়িটি গিয়ে ধাক্কা মারে সামনের একটি গাড়িকে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় গাড়ির চালক, খালাসি সহ ৬ যুবকের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওডিশার কটক মেডিক্যাাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অন্য এক যুবকের মৃত্যু হয়। ওডিশা পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে ধাক্কা মেরেছে মিনি ট্রাক। কোনও ডাম্পার নিহতদের গাড়িতে ধাক্কা মারেনি। 
  মৃত ৭ যুবকই বসিরহাটের মাটিয়া থানার নেহালপুরের সরদারপাড়ার বাসিন্দা। তাঁরা সকলে একে অপরের আত্মীয়। একই পাড়ায় ১০০-১৫০গজের মধ্যে তাঁদের বসবাস। মৃত যুবকরা কারোর স্বামী, আবার কারোর সন্তান। ঘরে তাঁদের একটি প্রতিবন্ধী সন্তানও রয়েছে। শনিবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ মাটিয়া থানার পক্ষ থেকে ওই পরিবারগুলিতে খবর পৌঁছায়। খবর আসা মাত্রই সাতজন যুবকের পরিবার সহ কার্যত গোটা এলাকা কান্নায় ভেঙে পড়ে। শোকার্ত পরিবারের আত্মীয়স্বজন ওডিশার উদ্দেশ্যে এদিন সকালেই রওনা দেয় মৃতদেহগুলি আনতে।
গ্রামে খবর আসতেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে নেহালপুর গ্রাম। তবে গাড়ির চালক সুরজ মণ্ডলের মৃত্যুর খবরের ধাক্কা কোনরকমে সামলে নিতে বাধ্য হয় ছেলে কাশ্মীর মণ্ডল। সে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাকে যেতে হয় বাদুড়িয়ার বুনোর আটি ইউসুফ মেমোরিয়াল হাইস্কুলে। এদিন ছিল তাঁর ভূগোল পরীক্ষা দিতে। কাশ্মীর ধান্যকুড়িয়া হাইস্কুলের ছাত্র।
  শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল অরন্ধনে সরদারপাড়া। চারিদিকে শুধু কান্নার রোল। ওই এলাকায় বেশিরভাগ যুবক এই কাজে যুক্ত। কাজে নিরাপত্তা নেই। একাধিকবার এমন ঘটনার সাক্ষী এই নেহালপুরের সরদারপাড়া। গত কয়েক বছরে প্রায় কুড়িটি যুবকের তাজা প্রাণ চলে গিয়েছে পথ দুর্ঘটনায়। কিন্তু গরিব পরিবারগুলির কিছু করার নেই। কারণ, অন্য কাজের কোনও সংস্থান নেই। গ্রামে রেগার কাজ নেই। নেই তাঁদের ছোট ব্যবসায় স্বনির্ভর করে তোলার জন্য সরকারের কোনও উদ্যোগ। প্রশ্ন উঠছে, কোনরকম বিশ্রাম না দিয়ে কেন দিনের পর দিন পোলট্রি মুরগির বাচ্চা আনতে পাঠায় কোম্পানিগুলি? অন্যদিকে, গরিব পরিবারের এই যুবকরা পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে বাধ্য হয় বিশ্রামহীন এই নিরন্তর কাজে।
   কর্মরত অবস্থায় মর্মান্তিক এই মৃত্যুর খবর পেয়ে মৃত শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান সিপিআই(এম) উত্তর ২৪পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। তিনি মৃত শ্রমিক পরিবারগুলির ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন। যে কোম্পানির হয়ে শ্রমিকরা কাজ করছিল, তাঁরা যেহেতু কর্মরত অবস্থায় মারা গিয়েছে, ফলে আইন অনুযায়ী তাঁদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। সরকার যেন এই ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা পালন করে সেই দাবিও এদিন তিনি রাখলেন। এদিন বিকালে সরদারপাড়ায় যান সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। তাঁরা সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি পাশে থেকে সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দেন। 
  বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ওডিশা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, মৃতদেহগুলি সেখান থেকে নিয়ে আসা সহ যাবতীয় কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ‘সবরকম সহযোগিতা’র আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এদিন। তবে কোনও ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়নি।
 

Comments :0

Login to leave a comment