Panchayat vote 2023

গতবার যে বিজেপি এবার তৃণমূল, গতবার যে তৃণমূল এবার বিজেপি

জেলা

 গতবারের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি’র প্রতীকে জেতা প্রার্থী এবারে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। আবার গতবার বিজেপি’র টিকিটে জিতে তৃণমূলে চলে গেছিলেন যিনি, তিনিও ফের বিজেপি’র প্রার্থী এবার।
উলুবেড়িয়া-২ নং ব্লকের বানীবন পঞ্চায়েতের করাতবেড়িয়াতে ২০১৮-তে বিজেপি’র জেতা প্রার্থী অপর্ণা মণ্ডল। এবারে আবার সেই তিনিই বানীবন পঞ্চায়েতের ২০ নং গ্রাম সংসদের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী।
গ্রামে গ্রামে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে লোহা ভাঙা-টিন ভাঙা কিনে তা বিক্রি করে দিনের শেষে তারক ঘোড়ুই এর উপার্জন ১৫০/২০০ টাকা। গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি’র হয়ে বুথে খাটা তারক ঘোড়ুই এর অভিজ্ঞতা, বিজেপি’র পঞ্চায়েত সদস্যা হয়েও তৃণমূলের হয়ে গিয়েছিল অপর্ণা মণ্ডল। একশো দিনের কাজ থেকে এলাকার উন্নয়নের কোনো কাজ হয়নি। ঘোড়া কেনা-বেচার মতন বিজেপি কিংবা তৃণমূল প্রার্থী, কে যে কখন বিজেপি কিংবা তৃণমূলের হয়ে যাবে সেই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। 
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে উলুবেড়িয়া ২ নং পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার বাণীবন গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৭ টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ১৬টি আসন। বিজেপি বোর্ড গঠন করেছিল‌। তিন বছর দুই মাস পর বিজেপি’র ৬জন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। পঞ্চায়েত বোর্ড তৃণমূলের হয়। আমফানের ক্ষতিপূরণ, একশো দিনের কাজে দুর্নীতি কিংবা আবাস যোজনাতে গরিব বঞ্চনার অভিযোগ ওঠে সেই সময়ে। 
এবারের ভোটে যেমন গতবারের বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য আবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। আবার তৃণমূলে যোগ দেওয়া গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যা আবারও বিজেপি’র প্রার্থী হয়েছেন। 
সেই চিত্রটাই স্পষ্ট হয়ে গেল বাণীবন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গ্রাম ঘুরে। ১নং গ্রাম সংসদের বিজেপি প্রার্থী কণিকা কাঁড়ার। আগের ভোটে বিজেপি’র পঞ্চায়েত সদস্যা হয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। ৭ নং গ্রাম সংসদের অঞ্জনা মণ্ডল এবারের তৃণমূলের প্রার্থী হলেও আগের ভোটে বিজেপি’র পঞ্চায়েত সদস্যা ছিলেন। 
‘‘ভোটে জেতা বিজেপি প্রার্থীরা তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে গেল। আর তাতেই বিজেপি’র গ্রাম পঞ্চায়েত তিন বছর‌ পার করতেই হয়ে উঠেছিল তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত।’’ বলছিলেন করাতবেড়িয়া খামরুইপাড়ার সুবোধ খামরুই, শ্যামল সাঁতরা।   
বিজেপি ও তৃণমূলের লড়াই তাই ‘লোক দেখানো’ হয়ে গেছে। বামফ্রণ্ট প্রার্থীদের পক্ষে দেওয়াল লিখন থেকে বুথের প্রচার এবার জোরালো। 
বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়নে বাধা নেই‌ তৃণমূলের। অথচ সিপিআই(এম) প্রার্থী দিতেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে, প্রস্তাবকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। উলুবেড়িয়া ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত তুলসীবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শ্রীরামপুর গ্রামের ২১, ২২, ২৩ নং গ্রাম সংসদ আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী হয়েছেন শেখ জহিরুদ্দিন, নাসিরুদ্দিন খান, শেখ গাজী রহমান। ২০১৩, ২০১৮ এর পঞ্চায়েত ভোটে ভোট লুট করে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল শ্রীরামপুর গ্রামে। একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা থেকে আমফান এর ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেদার দুর্নীতির বিরুদ্ধে গরিব মানুষের ক্ষোভ চরমে। এমন পরিস্থিতিতে গরিবের পক্ষে লড়াইকে শক্তিশালী করতেই শ্রীরামপুর গ্রামের ২১, ২২, ২৩ নং গ্রাম সংসদ আসনে সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেন শেখ জহিরুদ্দিন, নাসিরুদ্দিন খান, শেখ গাজী রহমান। আর তাতেই লুটের সাম্রাজ্যের বিস্তার করা তৃণমূল রাজনৈতিক আক্রোশে সিপিআই((এম) প্রার্থী নাসিরুদ্দিন খানের বাড়িতে হামলা, হুমকি, মিথ্যা মামলা দিয়েও প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করাতে পারেনি। এমনকি, সিপিআই(এম)’র দুই প্রার্থীর প্রস্তাবক শেখ আক্রম, ফিরোজ খান এবং পার্টি সমর্থক শেখ সুরজ ও শেখ বাপীর বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সিপিআই(এম) প্রার্থী শেখ গাজী রহমানের প্রস্তাবক শেখ এক্রামুলকেও হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করে তৃণমূল কংগ্রেসের মিথ্যা মামলা সত্ত্বেও শ্রীরামপুর গ্রামের তিনজন সিপিআই(এম) প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো যায়নি।
সিপিআই(এম) উলুবেড়িয়া ব্লক ২ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুগম ব্যানার্জি বলেছেন, উলুবেড়িয়া ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে তৃণমূল ও বিজেপি’র গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। তৃণমূল ও বিজেপির কোনো তফাৎ নেই। তাই আগের বারের বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য এবারের তৃণমূল প্রার্থী। তৃণমূলের লুট, গরিব বঞ্চনার বিরুদ্ধে সিপিআই(এম)-বামপন্থীরা লড়াই করছে। আর তাই তৃণমূল তুলসীবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থীকে বাধা দেয় না। সিপিআই(এম) প্রার্থী ও প্রস্তাবক-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েও মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে পারেনি।
 

Comments :0

Login to leave a comment