আসন্ন দীপাবলি তথা আলোর উৎসব। এই উৎসবে বাড়ে মাটির প্রদীপের কদর। দীপাবলির আগে মাটির প্রদীপ তৈরি করে চলেছেন কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ার কুমোরপাড়ার কারিগড়রা। অতীতে মাটির প্রদীপের ব্যাপক চাহিদা ছিল। বিশ্বায়নের যুগে আর্টিফিসিয়াল জিনিসপত্রের দাপটে যখন চিরাচরিত জিনিসপত্রের ব্যবহার কমে যাচ্ছে এলইডি, টুনি বাল্ব সহ অন্যান্য চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাইয়ের কারণে। কিন্তু পুজো-আর্চায় মাটির তৈজসপত্র তৈরীর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পূর্ব সাতগেছিয়া। কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ার কুমোরপাড়ার কারিগড়দের দাবি মাটির তৈজসপত্রের জায়গা এখনো সম্পূর্ণ ভাবে দখল করতে পারিনি আর্টিফিশিয়াল জিনিসপত্র। তাই মাটির তৈজসপত্র তৈরীর কাজ এখনো অব্যাহত আছে। সামনেই দেওয়ালি, নিয়ম অনুযায়ী মাটির প্রদীপ জালানো বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি দেওয়ালিতে ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানোর চলিত আছে। এই কাজে মাটির প্রদীপই ব্যবহার হয়। তাই যতই চাকচিক্যে ভরা আর্টিফিশিয়াল প্রদীপ বাজারে আসুক না কেন, তাতে মাটির প্রদীপের জায়গা এখনো অক্ষত আছে। দাবি সাতগাছিয়ার কুমোর পাড়ার কারিগরদের। তাই এখানে দেওয়ালিকে সামনে রেখে মাটির প্রদীপ তৈরি করার কাজ চলছে। শুধু প্রদীপ তৈরি নয় প্রদীপের পাশাপাশি ধুনুচি, মাটির হাড়ি, পিলসুজ এইসবও তৈরি করেন কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ার কুমোরপাড়ার কারিগড়রা।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০১৫ সালকে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই সংস্থার নাম '' বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য সংস্থা। এই সংস্থার ডাইরেক্টর জোনা গুটিয়ানো ডি সিলভা বলেছিলেন, মাটি শুধু খাদ্যই উৎপাদন করে না, মাটি নানা ভাবে মানুষ ব্যবহার করে। সেই ব্যবহারের মধ্যে একটি হল, পুজো আর্চার তৈজসপত্র নির্মাণ। বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রসারে রান্নার কাজে মাটির তৈজসপত্রের ব্যবহার আর নেই বললেই চলে। তবে ডাবা, মাটির চাক, মুড়ি ভাঁজার খোলা, পূজা আর্চার তৈজসপত্র এখনো পর্যন্ত মাটি দিয়েই তৈরি হয়। ফলে কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ায় এখনো পর্যন্ত মাটির জিনিসপত্র তৈরির কারখানা সচল আছে। এখানকার কারখানার মালিকরা জানান, এখানকার উৎপাদিত জিনিসপত্র কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যায়। আমাদের সম্পুর্ণ নিজেদের উদ্যোগে। এতে আমাদের পরিবহণ ব্যয় অধিক হওয়াতে সেরকমভাবে লাভ করা যায় না। এই সমস্যার কথা প্রাক্তন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জ্ঞাত হয়ে এখানে এসেছিলেন। এখানকার শিল্পীদের সাথে দেখা করে উনি কথাও বলেছিলেন, সব কারখানার মালিককে নিয়ে ক্লাস্টার গঠন করা হবে। এই ক্লাস্টারের উৎপাদিত মাল বিশ্ববাংলা বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে তা বাংলা জুড়ে বিক্রি করা হবে। কিন্তু সেই কথা কথাতেই থেকে গেছে , বাস্তবের রূপ পায়নি।
Comments :0