Jubashakti Foundation day

লুটের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার হবে বাংলায়: সেলিম

জেলা

 বাংলার বুকে তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছে তাকে জারি রেখে আরও জোরালো করার আহবান জানালেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার বর্ধমানের টাউন হলে ডিওয়াইএফআই’র মুখপত্র যুবশক্তি পত্রিকার ৫৬তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘স্টে অন কোর্স। মোদীর লুট আর মমতা ব্যানার্জির লুটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা ছড়িয়ে গেছে, এখন সেই লড়াইকেই আরও জোরালো করতে হবে। বৃত্তকে আরও বড় করতে হবে, তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী যারা এখনও দূরে আছেন তাদের কাছে টেনে জড়ো করতে হবে। লড়াইয়ের ময়দানে মানুষকে আরও সংগঠিত করতে হবে। সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধীদের বৈঠক দেখে যে রাজনৈতিক বোদ্ধারা গেল গেল রব তুলেছে তাদের কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই। আমরা দুই ফ্রন্টে লড়াই আগেও করেছি, এখনও করব। বাংলার বুকে তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। এরাজ্যের বুকে তৃণমূলকে মায়া দয়া, ক্ষমা ঘেন্নার কোনও জায়গা নেই।’ 
   রবিবার যুবশক্তি পত্রিকার অনুষ্ঠানে বর্ধমানের টাউন হল পরিপূর্ণ হয়ে ভিড় ছাপিয়ে গিয়েছিল হলের বাইরেও। হলের বাইরে দুটো জায়ান্ট স্ক্রিনে অনুষ্ঠান দেখানো হয়। ‘রাজনীতির বর্তমান সন্ধিক্ষণে বাম-যুবদের দায়িত্ব’ বিষয়ে আলোচনাসভায় ভাষণ দেন মহম্মদ সেলিম, ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক ও সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায় চৌধুরি, ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, যুবশক্তি পত্রিকার সম্পাদক কলতান দাশগুপ্ত। সভাপতিত্ব করেন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলী ঘাতক বাহিনীর হাতে নিহত শহীদ রাজিবুল হকের বাবা, ভাই, স্ত্রী ও পুত্র। উপস্থিত ছিলেন জেলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা সৈয়দ হোসেন, অচিন্ত্য মল্লিকও। সভার শুরুতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলী ঘাতক বাহিনীর হাতে নিহত শহীদ রাজিবুল হকের পরিবারের হাতে অর্থ সাহায্য তুলে দেন ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দ। মহম্মদ সেলিম রাজিবুল হক সহ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সব শহীদের প্রতি কুর্নিশ জানিয়ে তাঁদের পরিবারের পাশে থাকার আবেদন করেছেন। সভা শেষে মণিপুরে বর্বরতা ও মালদহে নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল হয়। আগামী ৩০ জুলাই আলিপুরদুয়ারেও যুবশক্তি পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দ।
  এদিনের সভায় সেলিম যুব সমাজের প্রতি বিপুল প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, অন্ধকার কাটিয়ে এগতে হলে বামপন্থার পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে আর তা হবে তরুণ অংশকে সঙ্গে নিয়ে। এরাজ্যে বারো বছর ধরে যে প্রজন্মকে কলেজে ছাত্র রাজনীতি করতে দেয়নি, তৃণমূল ভেবেছিল তারা রাজনীতি মিছিল স্লোগান সব ভুলে যাবে, চোলাইতে ডুবে যাবে। তা হয়নি, নতুন প্রজন্ম উঠে এসেছে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান তুলে। আজকে এই টাউন হল তাই ছোট হয়ে গেছে। সবাইকে জায়গা দেওয়া যায়নি। ওরা যদি বলে খেলা হবে, তাহলে আমরা প্রস্তুত, শুধু খেলার মাঠটা আরও বড় করতে হবে। লড়াইটা মাঠে ময়দানে হবে। লড়াই কখনো ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে হয় না। নতুন যৌবনের বাহিনী তৈরি হচ্ছে, তারাই লড়াই করবে। মাঠ ময়দান ছাড়বে না। 
 তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে যে কোনও প্রকৃত লড়াই হচ্ছে না তা স্পষ্ট করে দিয়ে সেলিম বলেছেন, কে কাকে ঘেরাও করবে? মুকুল রায়ের ছেলে বাবাকে ঘেরাও করবে তো? শুভেন্দু অধিকারী আর শিশির অধিকারীর কে কাকে ঘেরাও করবে? বাড়তি বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও রাজ্যসভার ভোটে কেন দ্বিতীয় প্রার্থী দিল না বিজেপি? তৃণমূলেরও বাড়তি ভোট আছে, তারাও প্রার্থী দিল না। নবান্ন আর নাগপুরে কী আলোচনা হয় সেটা বুঝতে পারছেন? রাজ্যটাকে যারা ভাগ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। বামপন্থীদের শেষ করাই ওদের আসল লক্ষ্য। এভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচন করেছে। প্রয়োজন হলেই আরএসএস অকাল বোধন করে তাদের ‘দুর্গা’কে মাঠে নামায়। সুইমিং পুলের স্প্রিং বোর্ডের মতো তৃণমূলকে এরাজ্যে ব্যবহার করছে বিজেপি। তৃণমূল যে পাঁক তৈরি করছে তাতেই পদ্মফুল ফোটাতে চায় বিজেপি। কিন্তু লাল ঝান্ডা হাতে বাংলার যুবসমাজ তা হতে দেবে না। এরজন্য রাজনৈতিক আদর্শ ও চেতনায় শানিত হতে হবে তাদের।
 বিজেপি’র বিপদকে ফ্যাসিবাদী বলে চিহ্নিত করে সেলিম বলেছেন, ধর্মের নামে জাতি গোষ্ঠীর নামে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে লুটের রাজত্ব তৈরি করছে বিজেপি। আমাদের গর্বের মিশ্র সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে ভাঙছে। সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদের নাম করে, অভিন্নতার নাম করে একটা গর্তে সারা দেশের মানুষকে ঢোকাতে চাইছে। ওরা সংখ্যাধিক্যের একরূপতা চায়। ধর্ম, ভাষা, আচারে সংখ্যালঘু হলেই তাদের বিপন্ন করা হবে। এটা ফ্যাসিবাদ। অভিন্নতা নয়, আমরা সমতা চাই, সবার সমান অধিকারের ভিত্তিতে ঐক্য চাই। ওদের পথ মণিপুর। আর সেটা প্রতিরোধের পথ বামপন্থা। 
 পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন এখনও হাইকোর্টে ঝুলছে। হাইকোর্টের রায় যাই হোক, বাংলার গ্রামে গ্রামে মানুষের রায় হলো মানুষ লুটেরাদের তাড়িয়ে নিজেদের পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রক হবে। আমরা প্রতি গ্রামে কৃষকসভার নেতৃত্বে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তুলব। মানুষের জন্য কীভাবে পঞ্চায়েতে কাজ করতে হয় তার দৃষ্টান্ত তৈরি করা হবে। যুব ফেডারেশনও তাতে ভূমিকা পালন করবেন। 
 গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইতে প্রস্তুতির জন্য যুবদের আহ্বান জানিয়ে আভাস রায়চৌধুরি সভায় বলেছেন, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গরিব মানুষের জেদ নিয়ে যে লড়াই দেখা গেছে তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় লুটেরাদের মুঠি শিথিল হয়ে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষ দুর্নীতির চক্রব্যুহ ভাঙার জন্য লড়াই করেছেন, বহু মানুষের অংশগ্রহণ ঘটেছে, এসবই আগামী দিনের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখাচ্ছে। বামপন্থার রাস্তা চওড়া হচ্ছে।
সভায় মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, চোখের সামনে নগ্ন মণিপুর হাঁটছে, মালদহে উন্মত্ত জনতার হাতে নগ্ন করে মহিলাকে মারছে, এই সমাজ আমাদের একবিংশ শতাব্দীতে দেখতে হবে? এমন অনুভূতিহীন সমাজ গড়ে যুবদের কাজের অধিকার ভুলিয়ে রাখা যাবে না। ডিওয়াইএফআই এর জন্যই লড়ছে। এরাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যুব সমাজ মার খেয়েও অধিকারের জন্য লড়াই করেছে। এই লড়াই আরও জোরদার হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment