বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে সংসদে যেসব তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে সেগুলিকে বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে গত আট বছরে সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬.৫ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই বিপুল পরিমাণ টাকা কর্পোরেট সংস্থাগুলি ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে, মোদী সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করার জন্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’-র নামে এই ঋণ অতি সহজে মেলার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু কর্পোরেট বান্ধব সরকারের সৌজন্যে ঋণ নিয়ে যথারীতি শোধ দেয়নি তারা। অথচ ঋণ দান এবং আদায়ে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা না করে সরকার চোখ বুজে ১২.৫ লক্ষ কোটি টাকা কর্পোরেট ঋণ ছাড় দিয়ে ব্যাঙ্কের খাতায় স্বচ্ছতা আনার ব্যবস্থা করেছে। অর্থাৎ এই ছাড় দেওয়া টাকা হিসাবের মধ্যে ধরা হলে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক দুরবস্থা প্রকাশ্যে দেখা যাবে। অতএব ছাড় দিয়ে ব্যাঙ্কের পরিচালন দক্ষতা ও আর্থিক সুস্বাস্থ্য দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে। ছাড় দেবার পর ঋণখেলাপি কর্পোরেট সংস্থাগুলি বন্ধু সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা বশত ছাড়ে কিছুটা ফেরত দিয়েছে। বাকি ১২লক্ষ কোটি টাকা তামাদি হয়ে গেছে। টাকাটা ব্যাঙ্ক দিয়েছে কর্পোরেটকে। কর্পোরেট ফেরত দেয়নি। ব্যাঙ্কের টাকা অর্থাৎ জনগণের আমানত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কর্পোরেটের তহবিলে ঢুকে কর্পোরেটের সম্পদ হয়ে গেছে অতি সহজ ও সরল পদ্ধতিতে। মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিরা এই ১২লক্ষ কোটি টাকা ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে নিজেদের মধ্যে। মোদী সরকারের কল্যাণে কর্পোরেটের এহেন ব্যাঙ্ক লুটের ঘটনা কিন্তু ‘বেআইনিভাবে’ ঘটেনি, হয়েছে ‘বিধিবদ্ধ’ প্রক্রিয়ায়। আর সেই বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে সরকার।
শোধ দেবার ক্ষমতা থাকুক বা না থাকুক এই জমানায় ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে কর্পোরেটের বিশেষ করে মোদী ঘনিষ্ঠ কর্পোরেটের কোনও অসুবিধা হয় না। আবেদন করলেই ঋণ মিলে যায় অনায়াসে। ঋণ ফেরত দেবার সামর্থ্য প্রমাণের যেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয় সেগুলি যাচাই না করেই মঞ্জুর হয়ে যায় ঋণ। তারপর যথারীতি শোধ করার সময় শুরু হয় গড়িমসি। এই ফেরত না দেওয়া ঋণই অনাদায়ী ঋণ। মোদীর ৮ বছরে যা ৬৬.৫ লক্ষ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ঋণ ফেরত না এলে ব্যাঙ্কের চাপ বাড়ে। মূলধনে টান পড়ে। লোকসান বাড়ে। ঋণ দেবার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ঘোর সঙ্কটে পড়ে ব্যাঙ্ক।
ঋণ নেওয়া কর্পোরেট কাঁদুনি গাইতে শুরু করে সরকারের কাছে। মহানুভব সরকার মহোদয় ছাড় দিয়ে দেয়। বাস্তবে দেখা গেছে সামর্থ্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়ে অনেক কর্পোরেট দোস্ত দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে মস্তিতে আছেন। অনেকে কোম্পানি লোকসানে চলছে বলে সরকারের কাছ থেকে ছাড় আদায় করে নিয়েছেন।
কর্ণাটকের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউপিএ সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার বলে জোর প্রচার শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদীরা। আবার এনপিএ’র দায়ও মোদীরা চাপাতে চায় পূর্বতন সরকারের উপর। কিন্তু মোদী সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তুলনায় মোদী জমানায় অনাদায়ী ঋণ প্রায় চারগুণ বেড়েছে। তার থেকেও বেশি হারে বেড়েছে ঋণ মকুবের পরিমণ। রুগ্ণ বা লোকসানে চলা ঘনিষ্ঠ কর্পোরেটকে অস্বাভাবিক বেশি ঋণ দেওয়া হয় মোদী আমলেই। পরে তারাই কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে যায় বাকিরা লোকসান দেখিয়ে সব টাকা পকেটে পুরে নেয়। জনগণের তথা দেশের ১২লক্ষ কোটি টাকা মোদী সরকারের সৌজন্যে লুট হয়ে যাওয়া নিসন্দেহে মেগা দুর্নীতি।
Comments :0