Editorial on Gujrat Election

মোদী ম্যাজিক!

সম্পাদকীয় বিভাগ


গুজরাটে রেকর্ড সৃষ্টি করে জয় পেলেও মোদী ম্যাজিকের অপ্রতিরোধ্য জয়জয়কারের ধ্বনি তুলে উন্মাদ নৃত্য করতে পারছে না বিজেপি। এর আগে ১৯৮৫ সালে গুজরাটে সর্বোচ্চ ১৪৯ আসনে জয়ের রেকর্ড ছিল কংগ্রেসের। নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও কংগ্রেসের সেই রেকর্ড ভাঙা সম্ভব হয়নি। মোদীর আমলে সর্বোচ্চ ১২৭ আসন পেয়েছিল বিজেপি। এবার অতীতের সব রেকর্ড ভাঙলেও মোদী ম্যাজিক মুখ থুবড়ে পড়েছে দিল্লিতে এবং হিমাচল প্রদেশে। গুজরাটের মতো দিল্লি ও হিমাচলেও বিজেপি’র প্রচারের প্রধান সেনাপতি ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। দফায় দফায় বেশ কয়েকবার প্রচারে গিয়েছিলেন। বলেছেন কে কোথায় প্রার্থী হয়েছেন দেখার দরকার নেই। ভোট দেবেন মোদীকে দেখে। অর্থাৎ পদ্ম চি‍হ্নে দাঁড়ানো প্রার্থীরা সব কাঠের পুতুল। আসল প্রার্থী মোদী। পাশাপাশি ডাবল ইঞ্জিনের তত্ত্বও আউড়ে ছিলেন তিনি। ব‍‌লেছিলেন  কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দলের সরকার থাকলে দ্বিগুণ গতিতে উন্নয়ন হবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যখন তিনি তাই তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে হিমাচলের উন্নয়ন করবেন। হিমাচলের মানুষ মোদীর এসব মিষ্টি কথায় কান দেননি। সেনা নিয়োগে ক্ষণস্থায়ী অগ্নিবীর প্রকল্পে প্রবল ক্ষোভ রাজ্যজুড়ে। তেমনি ক্ষুব্ধ দাম না পাওয়া আপেল চাষিরা। সর্বোপরি ভয়াবহ বেকারি ও মূল্যবৃদ্ধি মোদী ম্যাজিককে ফিকে করে দিয়েছে। ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছে মোদীর দল।
দিল্লিতে কর্পোরেশন নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক দিক থেকে তার গুরুত্ব কোনও রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের থেকে কোনও অংশে কম নয়। সেই পৌর নির্বাচনেও দলের প্রধান মুখ করে প্রচারে নামানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে। ভাবা যায় দেশের  প্রধানমন্ত্রীকে পৌর নির্বাচনে ভোট চাইতে হয়েছে শাসক দলকে। দলের অন্য নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কতোটা ভঙ্গুর হলে এমন হ‍‌তে  পারে। হিমাচলের ক্ষেত্রে সমস্ত সাংগঠনিক রাশ হাতে নিয়েছিলেন মোদীর ডান হাত অমিত শাহ। দলের জাতীয় সভাপতি জে‍‌পি নাড্ডা হিমাচলের হলেও তাঁকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।
গুজরাটে মোদী শুধু মুখ হননি, দলকে জেতানোর যাবতীয় দায়িত্ব কার্যত তিনি একাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। একাজ তিনি শুরু করেন গত মার্চ মাস থেকে। প্রতিমাসেই গুজরাট সফর ছিল তাঁর বাঁধা। পরে সপ্তাহে সপ্তাহে যেতেন। থাকতেন দু’দিন, তিনদিন বা চারদিন। এইসব সফরে গুচ্ছ গুচ্ছ সরকারি  প্রকল্প ঘোষণা করেছেন, শিলান্যাস করেছেন এবং উদ্বোধন করেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার সেসব প্রকল্প। এমনকি অন্য রাজ্য  থেকে প্রকল্প ছিনতাই করে গুজরাটে আনা হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশকে বাদ দিয়ে গুজরাটকেই সুয়োরানির নজরে দেখছেন।
গুজরাটে মোদীর জানকবুল চেষ্টার পেছনে অন্য তাগিদও আছে। মোদীর প্রধানমন্ত্রী হবার প্রথম লড়াইয়ে  গুজরাট দেখানো হয়েছিল মডেল হিসাবে। মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে গোটা দেশ গুজরাটের মতো ‘উন্নত’ হবে। বাস্তবে মোদী জমানা থেকে গুজরাটে বিজেপি’র আসন কমেছে। গত নির্বাচনে কার্যত হারতে হারতে কোনোরকমে জিতেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে গুজরাটের এই নির্বাচনে ভালো ফল না হয় তাহলে মোদীর কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ বাড়বে। তাই নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বের গদি রক্ষার তাগিদে নিজেই  গুজরাটের দায়িত্ব কাঁধে তুলেছেন। অসংখ্য জনসভা, রোড শো করে গোটা রাজ্য চষেছেন। দু’বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী বদলানো হয়েছে। গত ভোটে পতিদার ও দলিত আন্দোলনের দুই নেতা হার্দিক প্যাটেল ও অল্পেশ ঠাকোর বেকায়দায় ফেলেছিল। এবার তাদের কংগ্রেস‍‌ থেকে ভা‍‌ঙিয়ে বিজেপি’তে ঠাঁই দেওয়া হয়ে‍‌ছে। বিপরীতে কংগ্রেস এই নির্বাচনে গা লাগায়নি। কার্যত বিজেপি’কে  ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই শূন্যতায় ঢুকেছে আপ ও মিম। বিজেপি বিরোধী ভোট কেটে তারা মোদীদের বিরাট সুবিধা করে দিয়েছে। এরপর ধর্মীয় বিভাজনকে নানাভাবে কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্বের পরিচিতিকে স্থায়িত্ব দেওয়ার‍‌ চেষ্টা হয়েছে। হিন্দুত্বের তীক্ষ্ণতা চাপা দিয়েছে বেকারি, দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধির  যন্ত্রণাকে। এমন প্রতারণামূলক ম্যাজিক এ যাত্রায় গুজরাটে উতরে দিয়েছে মোদীকে।

Comments :0

Login to leave a comment