দেশ কি আরএসএস’র মর্জিমাফিক চলবে নাকি সংবিধানের অনুশাসন মেনে চলবে, এই গুরুতর প্রশ্ন ফের জোরদার হয়ে উঠেছে হরিয়ানার বিজেপি সরকারের মদতে গোরক্ষকদের গুন্ডামি, সন্ত্রাস ও পরিকল্পিত খুনের বহর দেখে। জনৈক মনু মানেসরের নেতৃত্বে গঠিত এক লেঠেল বাহিনী সরকার তথা পুলিশের বরাভয় নিয়ে যেভাবে নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে একের পর এক মুসলিম যুবকদের উপর নৃশংস হামলা চালাচ্ছে এমনকি খুন করছে তাতে স্পষ্ট বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানের অনুশাসনের বদলে আরএসএস’র নির্দেশকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মনু শুধু গোরক্ষার অজুহাতে মুসলিমদের উপর ধারাবাহিক বর্বর হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে না, আরএসএস অনুগামী হিন্দুত্ববাদের সংগঠনগুলির চোখের মণিও বটে। মনুর তৈরি লেঠেল বাহিনী তক্কে তক্কে থাকে কখন কোথায় মুসলিমদের ধরে বেধড়ক পেটানো যায় বা অপহরণ করে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে পৈশাচিক বর্বরতা চালানো যায়। তারপরও যদি তাদের দেহে প্রাণ থাকে তাহলে পুড়িয়ে বা অন্য কোন উপায়ে মেরে ফেলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করে। কয়েকদিন আগে রাজস্থানের দুই মুসলিম যুবক জুনেইদ ও নাসিরকে হরিয়ানা ও রাজস্থান সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অপহরণ করে হরিয়ানায় হিন্দুত্ববাদীদের মুক্তাঞ্চলে নিয়ে যায় মানেসরের লেঠেল বাহিনী। গোরু পাচারকারি অজুহাত খাড়া করে অপহৃত দুই যুবককে মারতে মারতে নিয়ে যায় থানায়। মৃতপ্রায় দুই যুবক দেখেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। তখন হিন্দুত্ববাদী গোরক্ষক বাহিনী তাদের ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে পেট্রোল ঢেলে গাড়িশুদ্ধ পুড়িয়ে মারে প্রমাণ লোপাটের জন্য।
এই ঘটনার তিন সপ্তাহ আগে হরিয়ানার নুহ-র বাসিন্দা ওয়ারিস খানকেও গোরু পাচারকারির মিথ্যা অভিযোগে খুন করে মনু মানেসরের দলবল। পুলিশ মনুকে আড়াল করতে ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে চালাতে মরীয়া চেষ্টা চালায়। সেই মতো তৈরি হয় অটোপসি রিপোর্ট। কিন্তু ওয়ারিসের পরিবার পুলিশের বক্তব্যের বিরোধিতা করে স্পষ্ট অভিযোগ করেছে। মনুর দলই তাকে খুন করেছে। এঘটনা নিয়ে হরিয়ানা বিধানসভায় বিরোধীরা সরব হলে সরকার নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছে। ওয়ারিসের খুনের ঘটনার পরই জুনেইদ-নাসির খুন। খুনি সেই মনু মানেসরের দল। ফলে বিক্ষোভ প্রতিবাদ তীব্রতা পায়। রাজস্থানে জুনেইদদের বাসস্থানে যেমন লাগাতার বিক্ষোভ চলছে তেমনি হরিয়ানার যেখানে তাদের খুন করা হয়েছে সেখানে প্রবল বিক্ষোভ হচ্ছে। দাবি উঠেছে অবিলম্বে খুনি মানেসরকে গ্রেপ্তার করে কঠোর সাজা দিতে হবে। অথচ হরিয়ানার হিন্দুত্ববাদী সরকার মনু এবং তার দলবলের গায়ে আঁচড় পর্যন্ত দিতে নারাজ। তারাও কৌশলে কেস সাজাচ্ছে মনুকে অভিযোগ করতে। পুলিশ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে এবং গোরক্ষক খুনিদের সাহায্য করছে তা প্রমাণ হয়ে গেছে থানায় অর্ধমৃত জুনেইদদের নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া। পুলিশ যদি তাদের হেপাজতে নিয়ে হাসপাতালে পাঠাতো তাহলে মানেসররা তাদের খুন করতে পারত না। হরিয়ানার পুলিশ হিন্দুত্ববাদী গুন্ডাদের সহযোগী ভূমিকা পালন করছে। এই অবস্থায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ যখন ছড়াচ্ছে এবং তীব্র হচ্ছে তখন তা আটকানোর জন্য সরকার স্বৈরাচারী ভূমিকা নিচ্ছে। আন্দোলনকারীরা যাতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে আন্দোলন উত্তাল করতে না পারে তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা ও মেসেজ পরিষেবা। খুন করেই হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষান্ত হচ্ছে না খুনিদের রক্ষা করতে মহাপঞ্চায়েত বসিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আর হিন্দুত্ববাদী সরকার মানুষের প্রতিবাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।
Comments :0