Editorial Strike

এবার ধর্মঘটে

সম্পাদকীয় বিভাগ

দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অনেক বঞ্চনা, অধিকারহরণ, হুমকি, ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি, শাসানি, অপমান, লাঞ্চনা সহ্য করেছেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারী এবং শিক্ষকরা। ন্যায্য মহার্ঘভাতার দাবি জানালে মুখ্যমন্ত্রী কর্মচারীদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে অপমান করেছেন।’ মহার্ঘভাতাকে কর্মচারীদের অধিকারের গণ্ডি থেকে বের করে দিয়ে দয়ার দান বলে ঘোষণা করেছে সরকার। মহার্ঘভাতা সহ অন্যান্য দাবিতে কর্মচারীদের আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে তারজন্য বিভাজনের কৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে আন্দোলনের নেতাদের দূরবর্তী জেলায় বদলি করা হয়েছে, যাতে আন্দোলন সংগঠিত না হয়। তাছাড়া নেতা ও সক্রিয় কর্মীদের পদে পদে হয়রানি করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে প্রবল ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়। চাকরি রক্ষা, বিশেষ করে চরম হয়রানি বাঁচার জন্য তারা মুখ বুঝে সময়ের অপেক্ষা করছিলেন।
প্রতিবাদ আন্দোলনের রাস্তা প্রশাসনিক স্বৈরাচার দিয়ে বন্ধ করে দেবার পর কর্মচারীরা আইনের আশ্রয় নেয়। রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা চলে বছরের পর বছর। নানা রকম অজুহাত ও অপকৌশলে মামলা দীর্ঘায়িত করতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালায় সরকার। মামলা যায় হাইকোর্টে। সেখানে মহার্ঘভাতাকে কর্মচারীদের অধিকার বলে রায় দেন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি। সরকার যায় ডিভিসন বেঞ্চে। সেখানেও দীর্ঘ শুনানির পর রায় যায় কর্মচারীদের পক্ষে। কর্মচারীদের স্বার্থের চরম বিরোধী তৃণমূল সরকার ঠিক করে রেখেছে কোনও অবস্থাতেই মহার্ঘভাতা দেবে না। তাই হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্চ জানিয়ে যায় সুপ্রিম কোর্টে। নিজেদের জেদ বজায় রাখতে বহু কোটি টাকা খরচ করে একের পর এক মামলা চালিয়ে নাম করা উকিল লাগিয়ে। সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কোনও অবস্থাতেই কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দেবে না। কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে সেই টাকা খেলা-মেলা-উৎসবে দেদার ওড়ানোই সরকারের লক্ষ্য।
দিনের পর দিন এভাবে বঞ্চনা ও অপমান সহ্য করতে করতে ইদানীং সহ্যের সীমা পেরোতে শুরু করেছে। ভয়ের আগল ভেঙে লড়াইয়ের মানসিকতা ধীরে ধীরে জোরদার হতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় এবারের বাজেট পেশের সময় চিরকূটে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে অর্থমন্ত্রী ৩ শতাংশ মহার্ঘভাতা ঘোষণার পর আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা তৈরি হয়। আন্দোলনের নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়। আন্দোলন কর্মচারীদের গণ্ডি পেরিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পাওয়া সব অংশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তৈরি হতে থাকে কর্মচারী ও শিক্ষকদের ঐক্য। সংশ্লিষ্ট সমস্ত সংগঠন একত্রিত হয়ে তৈরি যৌথ মঞ্চ। শুরু হয় লাগাতার অবস্থান ও অনশন। কলকাতায় বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ। পালিত হয় ৪৮ঘণ্টার কর্মবিরতি। সরকারি বেতনভূক সকল কর্মী শিক্ষকরা হাজিরা দিলেও কাজ করেননি দুদিন। সরকারের তরফ থেকে কড়া ব্যবস্থা নেবার হুমকি দেওয়া হলেও এমনকি চাকরি ছেদের ভয় দেখানো হলেও পাত্তা দেয়নি বেশিরভাগ কর্মচারী। গত এগারো বছরে সরকারবিরোধী কর্মচারীদের আন্দোলনে এত বিপুল সাড়া কখনো দেখা যায়নি।
ক্রমবর্ধমান ও ক্রমপ্রসারমান এই আন্দোলনের মধ্যেই তারা ডাক দিলেন ধর্মঘটের। সরকারকে বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্চ ছুঁড়ে দিয়ে আগামী ৯ মার্চ রাজ্যে হতে চলেছে কর্মচারীদের ধর্মঘট। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরকদমে। সরকার যত হুমকি দিক, যত প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করুক। দুষ্কৃতী পুলিশ দিয়ে ধর্মঘট ভাঙার যত চেষ্টাই করুক এবার কিন্তু কর্মচারীরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ধর্মঘট সফল তারা করবেনই

Comments :0

Login to leave a comment