এমাসের গোড়ায় এক জনস্বার্থ মামলার সূত্রে সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল দেশের একজন মানুষও যাতে খালি পেটে ঘুমোতে না যায় তা দেখা সরকারের দায়িত্ব। বস্তুত ২০১৩ সালে তৈরি খাদ্য সুরক্ষা আইনের মোদ্দা কথাটাও ঠিক সেটাই। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের খাদ্যের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের উপর অর্পণ করেছে এই আইন। যদি কোনও মানুষের খাবার না জোটে তাকে বা তাদের অভুক্ত থাকতে হয় তাহলে বুঝতে হবে সরকার তার দায়িত্ব পালন করছে না। ভুক্ত থাকার যে অধিকার আইন মানুষকে দিয়েছে সরকার সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত। এটা নিসন্দেহে গুরতর অপরাধ। খাদ্য সুরক্ষা আইন ছাড়াও সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় খাদ্যের অধিকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত। যদি নাগরিকদের সেই অধিকার কার্যকর তা হয় তাহলে বুঝতে হবে সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্য এবং দায় সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ সম্ভবত মোদী সরকারের কানে ঢুকেছে বলে মনে হয় না। ঢুকলে অঢেল খাদ্য মজুত আছে বলে দায়মুক্ত হবার চেষ্টা করতো না। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন, বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের থেকে অনেক বেশি খাদ্য অর্থাৎ চাল ও গম মজুত আছে। এই বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট ‘সাফল্যের’ আত্মতুষ্টি। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু সরকারি প্রকল্পের নথিভুক্ত গ্রাহকের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য আছে বলে সরকার নিশ্চিন্ত সুখনিদ্রায় আছে। একবারের জন্যও ভেবে দেখেনি এর বাইরে কত মানুষ নিত্যদিন অনশনে বা অর্ধাশনে কাটাতে হচ্ছে। যদি সব মানুষকে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ানোর সততা ও সদিচ্ছা তাদের থাকত তাহলে খুঁজে বার করতো খাদ্য প্রকল্পের বাইরে কত দরিদ্র মানুষ থেকে যাচ্ছে এবং তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতো। আসলে যান্ত্রিকভাবে কিছু সংখ্যা ঠিক করে সেইমত খাদ্য বণ্টন করা হচ্ছে। এই সংখ্যাটা যে প্রতিনিয়ত নানা কারণে বদলায় তার কোনও হদিশ রাখা হয় না। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, রুজি রোজগার, বেকারি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদির সঙ্গে দরিদ্রের সংখ্যা পালটায়। ভারতে সেটা ক্রমাগত বাড়ে। বিশেষ করে নোটবন্দি, বিএসটি চালু এবং সর্বোপরি করোনা মহামারী দারিদ্রের প্রকোপ বাড়িয়েছে এবং দরিদ্রের সংখ্যা বাড়িয়েছে। মোদী সরকার এসবের খোঁজ না রাখলেও রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বিশ্বে অপুষ্টিতে ভোগা ৮২ কোটি মানুষের এক চতুর্থাংশের বাস এই ভারত। তেমনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তৈরি ক্ষুধার সূচকে ১২৩টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০৭তম। প্রতিবছরই অবস্থান নামছে। অর্থাৎ মোদী সরকার না জানলেও দেশে দারিদ্র ও ক্ষুধা হু হু করে বাড়ছে।
বাস্তবের মাটিতে পা না রেখে যথাযথ সমীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত দরিদ্রের সংখ্যা নির্ধারণ না করে যান্ত্রিকভাবে কিছু সংখ্যাকে ধরে বসে থাকলে যা হবার তাই হচ্ছে। আইন থাকলেও, সংবিধানের নির্দেশ থাকলেও বিপুল মানুষ অভুক্ত থাকা সরকারের চরম ব্যর্থতা। সরকার যদি কর্পোরেটের হয় তাহলে ক্ষুধায় মোদীর ভারত বিশ্ব রেকর্ড করবে তাতে সন্দেহ কি।
Comments :0