Editorials soudi iran

সৌদি-ইরান চুক্তি

সম্পাদকীয় বিভাগ

একরকম প্রায় নীরবেই উপসাগরীয় এলাকা তথা পশ্চিম এশিয়ায় ছোটখাট ‘বিপ্লব’ ঘটে গেছে কয়েকদিন আগে। চীনের উদ্যোগে ও মধ্যস্থতায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান এবং সৌদি আরব পারস্পরিক শত্রুতা দূরে সরিয়ে ফেলে স্বাভাবিক প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক পূনস্থাপনের লক্ষ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে। যৌথ বিবৃতি দিয়ে দু’দেশ জানিয়েছে নানাবিধ বিরোধ-সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপিত হবে। একই সঙ্গে ২০০১ সালের নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিও নতুন করে কার্যকর করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এমনকি ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার চুক্তিও পুনরুজ্জীবিত করা হবে। নিঃসন্দেহে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দীর্ণ পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী। তার থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ হলো চিরাচরিত মার্কিন ছত্রছায়ায় নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকাকে কিছুটা নিষ্প্রভ করে দিয়ে পাদ প্রদীপের আলোয় চীনের উঠে আসা।
পশ্চিম এশিয়া বিশ্বের তেল ভাণ্ডার। বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি তেলের উপর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে আমেরিকা এই অঞ্চলের দণ্ড মুণ্ডের কর্তা হয়ে ওঠে। আমেরিকার অগ্রবর্তী ঘাটতি হিসাবে আর্থিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী করে তোলা হয় ইজরায়েলকে। ইসলামি দুনিয়ার কেন্দ্রে ইজরায়েলকে আমেরিকার হয়ে ছড়ি ঘোরানোর মতো উপযোগী করে তোলে আমেরিকাই। ইজরায়েল আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য পূরণে কাজ করবে পশ্চিম এশিয়ায়। আর আমেরিকা ইজরায়েলের নিরাপত্তার যাবতীয় দায়ভার বহন করবে। এই অঞ্চলে বৃহত্তম তেল সম্পদের মালিক এবং আরব দুনিয়ার অর্থনৈতিক শক্তি সৌদি আরবের সঙ্গে গড়ে ওঠে আমেরিকা ঘনিষ্ট সম্পর্ক। তেলের টাকায় সৌদিকে বিপুল সমরাস্ত্রে সজ্জিত করে আমেরিকা। বস্তুত মার্কিন অস্ত্রের বৃহত্তম গন্তব্য এক সময় হয়ে ওঠে সৌদি আরব। তেমনি ইরান বিপ্লবের সময় ইরান থেকে বিতাড়িত আমেরিকার চির শত্রু হয়ে ওঠে ইরান। সাম্রাজ্যবাদী কৌশল হিসাবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধগুলি জিইয়ে রেখে, কখনো উসকে দিয়ে খবরদারির জমি উর্বর করে রাখে আমেরিকা।
সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে আঞ্চলিক শক্তির বিন্যাস ও ভারসাম্য বদলেছে। পশ্চিম এশিয়ায়ও বদলের সুবাদে আমেরিকা খানিকটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে পরিস্থিতি আরও বদলেছে। তেলের প্রযোজনে চীন পশ্চিম এশিয়ায় প্রভাব বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে। তেমনি ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগ বেড়েছে। এই অবস্থায় আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখা কঠিন। তাছাড়া তেল নির্ভর অর্থনীতি অভিজ্ঞতায় শিখেছে অস্থিরতার বদলে শক্তি তাদের অগ্রগতির প্রধান শর্ত। তাই চীনের ভূমিকায় তারা আশান্বিত। শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করে অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে সৌদি-ইরান সহমত হয়েছে। এই চুক্তির জেরে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন প্রভৃতি দেশে অস্থিরতা কমতে পারে। অবশ্য বাড়তে পারে ইজরায়েলের উদ্বেগ, এক ঘরে হয়ে যাবার আশঙ্কা থেকে।
 

Comments :0

Login to leave a comment