Kylian Mbappe

এখনই অনেকটা এগিয়ে এমবাপে

খেলা

Kylian Mbappe

বিশ্বকাপ যেন ব্যাটন হাত বদলের জায়গা। বা বলা ভালো এক তারা নিভে যায়, অন্য তারা জ্বলে ওঠে। যেমন পেলে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেন ১৯৫৮-তে। পেলের শেষ ১৯৭০ বিশ্বকাপ। তার মধ্যে ১৯৬৬-র বিশ্বকাপে নতুন তারকা হয়ে উঠেছেন ইউসেবিও। আবার মারাদোনা শেষ বিশ্বকাপ ১৯৯৪ (স্কোয়াডে ছিলেন, কিন্তু বিতর্কিত কারণে বাদ পড়েন)। কিন্ত ১৯৯০ থেকেই উঠে এলেন ইতালির মালদিনি। 

 

১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোমারিও। রোমারিও শেষে ১৯৯৮ থেকে উঠে এলেন ওই দেশেরই রোনাল্ডো, ফ্রান্সের জিদান, পর্তুগালের লুই ফিগো। ২০০২-তে ব্রাজিলের রোনাল্ডিনহো, ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যাম, স্পেনের রাউল। তারপর স্পেনের জাভি, ইনিয়েস্তা, জার্মানির সোয়েনস্টাইগার, ক্লোসে, ওজিল, বা ইতালির ক্যানাভারো এরকম অনেক নাম উঠে এসেছে বিশ্ব ফুটবলে। কিন্তু ২০০৬ থেকে মূলত স্পট লাইট কাড়তে শুরু করেন ২জন। লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (২০০৬ থেকে অবশ্য লুকা মড্রিচ বিশ্বকাপ শুরু করলেও কিছুটা অলক্ষ্যেই থেকে যান)। তাঁদের সাথে পরে যোগ দেন ২০১৪-এ নেইমার জুনিয়র।

 


কাতার বিশ্বকাপ সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। তাই ব্যাটন নেবার যোগ্য উত্তরসূরি দরকার ছিলই। ২০১৮ থেকেই সেই উত্তরসূরি চোখ টানতে শুরু করেন। তাঁর নাম কিলিয়ন এমবাপে। ২০২২বিশ্বকাপে তাঁর বয়স মাত্র ২৩। এর মধ্যেই দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কিলিয়ন এমবাপে। বিশ্বকাপে তাঁর গোলের সংখ্যা নয়। রাশিয়া এবং কাতার বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১২টি ম্যাচ খেলেছেন। এ বারের বিশ্বকাপে পাঁচটি গোল করে সোনার বুটের দৌড়েও এগিয়ে রয়েছেন ফ্রান্সের স্ট্রাইকার। অনবদ্য পারফরম্যান্সে কিছু জায়গায় লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন এমবাপে।

 


একাধিক পরিসংখ্যানে ২৩ বছরের এমবাপে পিছনে ফেলে দিয়েছেন ২৩ বছরের মেসি এবং রোনাল্ডোকে। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই তিনি কারও থেকে পিছিয়ে নেই। শেষ পর্যন্ত একজন খেলোয়াড়ের শ্রেষ্ঠত্বের বিচার হয় সাফল্যের পরিসংখ্যান দিয়েই। খেলোয়াড়ের দক্ষতা, শিল্প গুরুত্বপূর্ণ হলেও শেষ কথা বলে সাফল্যই। সে দিক ধরলে মেসি, রোনাল্ডোর থেকে পেছিয়ে নেই এমবাপে। রোনাল্ডো পর্তুগালকে ইউরো জিতিয়েছেন। মেসি আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন করেছেন, বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। যদিও বিশ্বকাপ দিতে পারেননি। এমবাপে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ দিয়েছেন। 

 

 

কাতারে চ্যাম্পিয়ন হলে দ্বিতীয় বার ট্রফি দেবেন।
বিশ্বকাপে গোল সংখ্যার নিরিখে নিজের দেশের থিয়েরি অঁরি বা জিনেদিন জিদানকে আগেই ছাপিয়ে গিয়েছেন এমবাপে। ২৪ বছর বয়স হওয়ার আগে বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি গোল করার পেলের নজির ছুঁয়েছেন তিনি। সাধারণ ভাবে বিভিন্ন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মধ্যে তুলনা করা কঠিন। প্রতিপক্ষ, সতীর্থ, খেলার কৌশল, নিয়ম, প্রযুক্তি অনেক কিছুই বদলে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বদলে যায় সেরা বেছে নেওয়ার নিক্তিও। পরিসংখ্যান বিচার্য হলে গত মে মাসেই দুই তারকা মেসি, রোনাল্ডোকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন এমবাপে।

 


এইমুহূর্তে এমবাপের ঝুলিতে ১৪টি ট্রফি। ২৩ বছর বয়সে মেসি ১২টি এবং রোনাল্ডো পাঁচটি ট্রফি জিতেছিলেন। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রেও এই দু’জনের থেকে পিছিয়ে নেই এমবাপে। ২৩ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে এমবাপে ফ্রান্সের হয়ে ৫৩টি ম্যাচ খেলেছেন। সম সংখ্যক ম্যাচ খেলেছিলেন রোনাল্ডো।  সেক্ষেত্রে মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছিলেন ৪৯টি ম্যাচ। মাত্র ১৭ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব রয়েছে এমবাপের। যা নেই মেসি বা রোনাল্ডোর।

 


কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের দু’দিন পরে ২৪ পূর্ণ করবেন এমবাপে। আরও একটি পরিসংখ্যানে মেসি, রোনাল্ডো দু’জনকেই পিছনে ফেলে দিয়েছেন এমবাপে। ২৩ বছর বয়সের এমবাপে ১১১ বার সতীর্থদের গোল করতে সাহায্য করেছেন। এই সংখ্যা মেসি এবং রোনাল্ডোর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৮৪ এবং ৬৬। তবে এটাই দ্বিতীয় বিশ্বকাপ তাঁর। মেসি বা রোনাল্ডোর মতো বয়সে পৌঁছেও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেটা এখন দেখার। এখনও অনেক সময় বাকি। পথও অতিক্রম করতে হবে অনেক। তখন গিয়ে দেখা যাবে পরিসংখ্যানের বাইরে গিয়েও কতটা মানুষের মন জয় করবেন কিলিয়ন।
 

Comments :0

Login to leave a comment