Ghatal child 'death'

জীবিত সদ্যজাতকে মৃত বলে ঘোষণা, কাঠগড়ায় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল

জেলা

 

 সদ্যজাতকে মৃত বলে ঘোষণা করে দেয় হাসপাতাল। ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে সেই সদ্যজাতের দেহ তুলেও দেওয়া হয় বাড়ির লোকজনের হাতে। সেই সদ্যজাতকে কবরস্থ করতে গিয়ে পরিবারের লোকজন হতবাক। হাসপাতাল থেকে প্যাকেটে মুড়ে দেওয়া দেহ খুলতেই হাত-পা নড়ে ওঠে সদ্যজাতর। এমনকী কান্নার আওয়াজও বেরিয়ে আসে। শনিবার রাতে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকা পালন করেছে ঘাটাল মহকুমা সুপার স্পেশালিটি নামধারী সরকারি হাসপাতাল। সেই রাতেই অবশ্য নবজাতককে ওই হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে ভর্তি করে নেওয়া হয়। 
শনিবার রাতে কবরস্থ করার সময়ে প্রাণস্পন্দনে জেগে ওঠা সদ্যজাতকে নিয়ে ততক্ষণাৎ বাড়ির লোকজন হাসপাতালে ছোটেন। ডেথ সার্টিফিকেট ফেরত নিয়ে হাসপাতালের এসএনসিইউ-এ ভর্তি করে শুরু হয় চিকিৎসা। এদিকে সদ্যজাতকে মৃত বলে দেওয়ায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে পরিবারের লোকজন তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দাবি তোলা হয়, গাফিলতির ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। 
জানা গিয়েছে, ঘাটাল মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শনিবার রাত ন’টায় সদ্যজাতর কপালে মৃত বলে স্ট্যাম্প লাগিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয় পরিবারকে। এরপর সদ্যজাতর দেহ প্যাকেটে মুড়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফিরে রাতেই দেহ কবরস্থ করতে যান পরিবারের সদস্যরা। সেই সময়ে হঠাৎই সদ্যজাতর কান্নার শব্দ শুনতে পান তাঁরা। তারপর তাঁরা দেখেন, হাত-পা নড়ছে ওই নবজাতকের। শ্বাসপ্রশ্বাসও চলছে বলে বুঝতে পারেন পরিবারের লোকজন। পুনরায় সেই হাসপাতালে ডেথ সার্টিফিকেট সহ জীবিত সদ্যজাতকে নিয়ে গেলে ভর্তি করে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের অভিযোগ, শনিবার বেলা ২টোর সময়ে ওই শিশুর জন্ম হলেও বিনা চিকিৎসায় তাকে ফেলে রাখা হয়। তারপর তাকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে দেন। চিকিৎসায় ও দায়িত্ব পালনে এমন মারাত্মক গাফিলতির ক্ষমা হতে পারে না।
পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, শনিবার ভোরে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি হন গড়বেতা থানার রসকুণ্ডু গ্রামের মনলিশা খাতুন। দুপুর দুটো নাগাদ তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। বিকেল পাঁচটার সময়ে শিশুটির পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই শিশু মারা গিয়েছে। কপালে মৃত বলে স্ট্যাম্প লাগিয়ে প্যাকেটে মুড়ে ডেথ সার্টিফিকেট সহ নবজাতকের দেহ রাত নটায় পরিবারের হাতে তুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে বাড়ি ফিরে শিশুটিকে কবরস্থ করতে গিয়ে সবাই দেখেন, শিশুটি জীবিত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ তুলে পরিবারের লোকজন রবিবার ভোররাতেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। 
উত্তেজনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে আধিকারিকরা ছুটে যান হাসপাতালে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্য শঙ্কর সারেঙ্গীও ওই হাসপাতালে যান। হাসপাতালে যান ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস ও ঘাটাল থানার ওসি দেবাংশু ভৌমিক। তাঁরা কথা বলেন ওই শিশুর পরিবারের সঙ্গে। হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এই বিষয়ে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুব্রত দে জানিয়েছেন, জেলা থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। তার সদস্যরা হাসপাতালে এসে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন, গাফিলতি পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তকারী দল গঠন করা ও ঘটনার তদন্তের আশ্বাস মেলায় শিশুর পরিবারের লোকজনের ক্ষোভ প্রশমিত হয় এবং হাসপাতাল চত্বরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment