Haryana bulldozer politics

হরিয়ানায় অবাধ বুলডোজার রাজ

জাতীয়

গুরগাঁও ও নূহ, ৬ আগস্ট- হরিয়ানায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। সরকার-প্রশাসন একদিনে যেমন বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ, বাড়িঘর, হোটেল ভাঙচুর চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মুসলিম বিরোধী জিগির জোরালো করতে হিন্দুত্ববাদীদের উদ্যেগে কর্মসূচি চলছে। গুরগাঁওয়ের যে মসজিদে আগুন লাগিয়ে ইমামকে হত্যা করেছিল হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীরা, সেই ঘটনায় ধৃত চার অভিযুক্তের মুক্তির দাবিতে মহাপঞ্চায়েতও করেছে হিন্দুত্ববাদীরা। অথচ সাংসদ বিনয় বিশ্বমের নেতৃত্বে সিপিআই’র এক প্রতিনিধি দল রবিবার হিংসা কবলিত এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁদের সেখানে যেতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বাধ্য হয়ে তাদের ফিরে আসতে হয়েছে। এরমধ্যেই নতুন করে হিংসার ঘটনা ঘটেছে বল্লভগড় মহকুমায়। পানিপতেও বাইক বাহিনী এসে সংখ্যালঘুদের দোকানে ভাঙচুর করেছে। মারধর করে জখম করেছেন বেশ কয়েকজনকে। 
রবিবার নিয়ে নূহতে পরপর চারদিন ধরে বুলডোজার চালানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেলে। দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নামে নূহতে লাগাতার সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে। এসডিএম জানিয়েছেন রবিবার সাহারা পরিবারের একটি রেস্তোরাঁ কাম হোটল সহ মোট ১৬টি দালান বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। হোটেলটিতে বুলডোজার চালানোর কারণ দেখানো হয়েছে গন্ডগোলের দিন নাকি ওই হোটেল থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দলের শোভাযাত্রায় পাথর ছোঁড়া হয়েছে। সেখানেই নাকি দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিয়েছিল। একই সঙ্গে এতদিনে প্রশাসন জানতে পেরেছে যে হোটেলটি ‘বেআইনিভাবে’ নির্মাণ করা হয়েছিল। নূহর ডেপুটি কমিশনার ধীরেন্দ্র খাদগাতা জানিয়েছেন, মোট ১৬২টি দালান এবং ৫৯১টি অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর অধিকাংশই ছোটোখাটো দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল বা রুটি-রুজির সংস্থানের কোনও ব্যবসার কেন্দ্র। আচমকাই এগুলিকে প্রশাসনের ‘বেআইনি’ মনে হচ্ছে। ডেপুটি কমিশনারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, নূহতে  ৩৭টি জায়গায় এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। মোট ৫৭.৫ একর জমিতে এই উচ্ছেদ চালানো হয়েছে। 
প্রশাসনের পক্ষ থেকে যখন সরকারিভাবে ধ্বংসলীলা চালানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপরে, তখন হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে উস্কানি ছড়াতে সভা-সমাবেশ অব্যাহত আছে। গত বৃহস্পতিবার গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৭-তে অঞ্জুমান মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল হিন্দুত্ববাদীরা। সেখানে গুলি চালিয়ে ২৬ বছরের তরুন ইমামকে হত্যাও করে তারা। এই ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেপ্তার করে। অঙ্কিত, রাহুল, রবিন্দর এবং রাকেশ নামে চার যুবককে কাছের টিগরা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিবার সেই চার হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতির মুক্তির দাবিতে টিগরা গ্রামে মহাপঞ্চায়েত করা হয়। সেখান থেকে চার জনের মুক্তির দাবির পাশাপাশি উসকানিও ছড়ানো হয়। হিন্দুত্ববাদীদের অবাধে এই জমায়েত করতে দেয় পুলিশ প্রশাসন। মহাপঞ্চায়েতে দাবি করা হয় ইমাম হত্যা এবং মসজিদে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এরা নাকি যুক্ত নয়। এই নিয়ে প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি করতে ১০০ জনের দল সোমবার জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিতে যাবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকা থেকে ওই মসজিদও সরিয়ে ফেলতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, এটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এখানে মসজিদ রাখা যাবে না! 
অন্যদিকে, এদিনই সিপিআই’র চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দল নূহতে সাম্প্রদায়িক হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে যান। সেই প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের সাংসদ বিনয় বিশ্বম। সেই প্রতিনিধি দলকে আক্রান্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে যেতে বাধা দেয় পুলিশ। নিষেধাজ্ঞার কথা জানায় পুলিশ। রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় বিশ্বম বলেছেন, আমরা পুলিশের সঙ্গে সংঘাত করে আর উত্তেজনা বাড়াতে চাইনি বলে ফিরে এসেছি। গুন্ডা, মস্তান, দুষ্কৃতীরা অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারবে কিন্তু গণতান্ত্রিক মানুষ যাঁরা এখানে শান্তিপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে এসেছেন, তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। 
এদিকে নূহের ঘটনায় বিজেপি’র নানা নেতা-মন্ত্রী নানা কথা বলেছেন। এরফলে নিজেদের প্রশাসনিক  ব্যর্থতা এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির দায়ভার সামনে চলে এসেছে। এই ঘটনাকে বহু চেষ্টা করেও মুসলিমদের আক্রমণ বলে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। এর পরিণতিতেই সম্ভবত মুখ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। নূহের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন প্রশ্ন করা হলে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অনিল বিজ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই নিয়ে আর কিছু বলবেন না। যা বলার মুখ্যমন্ত্রী বলবেন। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী! এমন ঘটনারও সাক্ষী থাকতে হচ্ছে। 
এসএফআই’র পক্ষ থেকে এদিন এক বিবৃতিতে হরিয়ানায় অবিলম্বে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্র-রাজ্যের সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় জনগণকেও এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment