Municipal Recruitment Scam

পৌর নিয়োগে দুর্নীতির সিবিআই তদন্তই চলবে

রাজ্য

Municipal Recruitment Scam

পৌরকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে আদালতে ফের বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিল না অবকাশকালীন ডিভিসন বেঞ্চ। সোমবার আদালত বলেছে, দুর্নীতি নিয়োগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত যেমন চলছে তেমনই চলবে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিসন বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং বিচারপতি অপূর্ব সিনহা এই নির্দেশ দিয়েছেন। 
    বিচারপতি বসু এদিন তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে পৌরকর্মী নিয়োগের যোগসূত্র কোথায় আদালত সেটা জানতে চায়। ডিভিসন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, এই মামলার কেস ডায়েরি ইডি’কে আদালতে জমা দিতে হবে। বিচারপতি অপূর্ব সিনহা বলেছেন, সিঙ্গল বেঞ্চে যে সমস্ত নথি ইডি জমা দিয়েছে তার সবটাই ডিভিসন বেঞ্চে জমা দিতে হবে। ডিভিসন বেঞ্চ এদিন নির্দেশ দিয়েছে আগামী শুনানির দিন এই মামলার তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ৬জুন।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের যে স্ট্যাটাস রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিয়েছিল ইডি, সেখানেই পৌরসভায় দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল। ইডি তরফে হাইকোর্টকে জানানো হয়েছিল, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মতো পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির ব্যাপকতা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। পৌরসভাগুলিতে কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। পৌরসভায় কর্মী নিয়োগ কয়েক বছর আগেও মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অধীনে ছিল না। কলকাতা কর্পোরেশন ছাড়া রাজ্যে পৌরসভাগুলিতে নিয়োগের ক্ষমতা ছিল চেয়ারম্যান বা পৌরসভার নিয়োগ কমিটির হাতে। ফলে পৌরসভার কর্মী, গাড়ির চালক এবং পৌর পরিষেবার বিভিন্ন কাজে নিয়োগ হয়েছে অস্বচ্ছভাবে। ধৃত অয়ন শীলের সল্টলেকের ফ্ল্যাট থেকে ইডি যে সমস্ত নথি উদ্ধার করেছে সেখানেই রয়েছে পৌর নিয়োগের দুর্নীতির হাজার হাজার প্রার্থীর তালিকা। এই সমস্ত চাকরিই বিক্রি হয়েছে বলে ইডি অভিযোগ করেছে। প্রাথমিকভাবে ইডি একমাস আগে আদালতকে জানিয়েছিল ১০০ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গেছে।

গত ২৪এপ্রিল পৌর নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের ওপর স্থগিতাদেশের জন্য সুপ্রিম কোর্ট গিয়েছিল রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্ট পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির নিয়ে সিবিআই তদন্তের কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছিল।  শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ জারি করেননি।  বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে বলেছিলেন পৌরসভাগুলিতে নিয়োগ নিয়ে যে বেনিয়মের রিপোর্ট ইডি জমা দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। এব্যাপারে সিবিআই প্রয়োজনে এফআইআর করে তদন্ত করতে পারবে। সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশের পর এই মামলা ফিরে আসে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে।
   বিচারপতি অমৃতা সিনহা এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখে মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ উঠছে। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের উচিত দুর্নীতি নিয়োগ বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা। পৌর দুর্নীতি নিয়ে ইডি যে তথ্য আদালতে জমা দিয়েছে তা নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন আছে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এই নির্দেশের পরই রাজ্য সরকারের তরফে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। 
   

বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিসন বেঞ্চ এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিসন বেঞ্চ এই মামলা গ্রহণ করেনি। ফলে মামলাটি ফিরে গিয়েছিল প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে। এরমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে গ্রীষ্মাবকাশ শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি মামলাটি অবকাশকালীন ডিভিসন বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন। সোমবার অবসরকালীন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর ডিভিসন বেঞ্চ পৌরকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment