MAMATA RSS

বিভাজনের নতুন কৌশলে সঙ্ঘ এবং মমতা

রাজ্য

MAMATA RSS

গৌতম রায়

পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দিতে আরএসএস দীর্ঘদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ব্যবহার করে চলেছে। প্রশাসনের সর্বস্তরে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি, তৃণমূলের সব স্তরের নেতাদের আর্থিক তছরূপের একের পর এক ঘটনা রয়েছে। তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি কচ্ছপের গতিতে হাঁটছে। নিঃসন্দেহে তার পিছনে বিজেপি’র প্রাণভোমরা আরএসএস’র স্পষ্ট পথ নির্দেশ আছে।

কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ভারতের গোটা পূর্বাঞ্চলে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির রাজনৈতিক, সংসদীয় ক্ষমতাবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরএসএসের বোড়ের দান হলেন মমতা। তাই নরমে-গরমে মমতাকে চাপে রেখে সামাজিক বিভাজন আরও তীব্র করছে আরএসএস। মমতা নিজেকে, পরিবারকে আড়াল করতে চোখকান বুঁজে আরএসএস’র নির্দেশ তামিল করে চলেছেন।

হিন্দু-মুসলিম কেবল নয়, মুসলিম-মুসলিম, মুসলিম-আদিবাসী- দলিত-অন্যান্য জনজাতির মধ্যে অত্যন্ত সুক্ষভাবে বিবাদের সমীকরণ তৈরি করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক বিভাজন, জাতিগত বিভাজন, ভাষাগত বিভাজন- এই সবকে বল্গাহীন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। লোকসভা ভোটের (২০২৪) আগে পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক বিভাজনকে তীক্ষ্ণ করা হচ্ছে। আরএসএস’র রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির পালে বাতাস আনার জন্যে সঙ্ঘের নির্দেশেই মমতা এখন আত্মনিবেদিত।

সোশাল মিডিয়ায় অতি সম্প্রতি একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। দেখানো হয়েছে যে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং মেদিনীপুরের ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের পা ধুইয়ে দিচ্ছেন কয়েকজন আদিবাসী রমণী। এক মুসলিম আদিবাসী সম্প্রদায়ের রমণীদের দিয়ে পা ধোয়াচ্ছেন- এই প্রচারটা ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী, দলিত, তপশিলি জাতি, আদিবাসী এলাকায় ছড়িয়েছে। ঝড়ের গতিতে প্রচার চালাচ্ছে আর এস এসের শাখা সংগঠন 'বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’। জঙ্গলমহল এলাকায় ভয়ঙ্কর প্রচার করে আদিবাসীদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষ, হিংসা ছড়াতে সব রকম চেষ্টা করে চলেছে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির। এই ভিডিও’টি ইতিমধ্যেই ত্রিপুরার আসন্ন বিধানসভা ভোটেও আদিবাসীদের উত্তেজিত করবার লক্ষ্যে ব্যবহার করতে শুরু করেছে গোটা আরএসএস-বিজেপি শিবির।

তপশিলি জাতি, আদিবাসী, অন্য অনগ্রসর অংশের প্রান্তিক মানুষের চরম বর্ণবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী, অভিজাত, সাম্প্রদায়িক আরএসএস-বিজেপির প্রতি কখনও কোনও ইতিবাচক অনুভুতি ছিল না, আজও নেই। কিন্তু যে দলিত, পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষকে তারা ' মানুষ' বলেই মনে করে না, তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতেই আরএসএস এই ' বনবাসী কল্যাণ আশ্রম' নামক নিজেদের শাখা সংগঠন তৈরি করে কর্মকান্ড চালাচ্ছে। 

বিগত শতকের পাঁচের দশকে অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের রায়গড়ে এই ' বনবাসী কল্যাণ আশ্রম' তৈরি করেছিল।এই সংগঠনটির মাধ্যমে নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের উচ্চবর্ণে উত্তীর্ণ করার  'লোভ' দেখিয়ে তাঁদের ব্যবহার করা হয়। উপনয়ন রীতি চালু হয় এই অংশে। বাস্তবে এই অংশগুলিকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্ণহিন্দু সমাজে সত্যিই ঠাঁই হয় না। এই সংগঠনটির মাধ্যমেই নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের একটা অংশকে উসকে দিয়ে গুজরাট গণহত্যার সময় মুসলিমদের ওপর ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল আরএসএস-বিজেপি। 

দলিত হিন্দু রমণীদের দিয়ে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের পা ধুইয়ে দেওয়ার ঘটনাটি ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত একটি কথা না বললেও পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী, দলিত, পিছড়ে বর্গের হিন্দুদের সংখ্যাধিক্য যেসব জায়গাতে বেশি , সেইসব জায়গাগুলিতে একটা ভয়ঙ্কর সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং চালানো হচ্ছে হিন্দু সাম্প্রদায়িক , মৌলবাদী শিবিরের পক্ষ থেকে। মমতা এবং তাঁর দল হুমায়ুন কবীরের প্রতি এখনও পর্যন্ত একটিও কঠোর শব্দ উচ্চারণ করেনি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তো দূরের কথা। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গোটা বিষয়টি ঘিরে আরএসএস-বিজেপি এবং মমতার ভালো রকমের বোঝাপড়া রয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment