Panchayat vote 2023

মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, শেষ পর্যন্ত লড়াই চলবে

রাজ্য

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই শেষ হয়ে যায়নি, এই লড়াই চলবে। বৃহস্পতিবার কলকাতা শহরের বুকে বিরাট ধিক্কার মিছিল বের করে একথা জানিয়ে দিলেন হাজার হাজার মানুষ। ধর্মতলা থেকে এন্টালি পর্যন্ত মিছিল শেষে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ নেতৃবৃন্দ জানিয়ে দিয়েছেন, বোমা গুলি আর পুলিশের অত্যাচার দিয়ে গণতন্ত্রকে শেষ করা যাবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বাংলার মানুষ যে সংগ্রাম শুরু করেছেন তা জয়ী হবেই। 
মিছিলে অংশ নিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, দিল্লি ইউনিভার্সিটির জাল সার্টিফিকেট, আর মমতা ব্যানার্জির জাল পিএইডি সার্টিফিকেট মানুষ মানে না, লুটের নির্বাচনে জয়ীদের জাল সার্টিফিকেটও মানুষ মানবে না। লুটের রাজত্ব বহাল রাখতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নামে রক্তের হোলি খেলেছে পিসি ভাইপোর দল। কিন্তু মানুষ যখন রাস্তায় নেমেছে তখন আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। লড়াই শেষ হয়নি, বাংলার মানুষ প্রয়োজনে আরও রক্ত দেবে, কিন্তু গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাজ্যকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে তুলে দিতে দেবে না। গণতন্ত্র ফেরাতে লড়াই চলবে শেষ পর্যন্ত, চোরেরা আর সন্ত্রাস চালিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। গ্রাম জেগে উঠেছে, শহরের মানুষ তাঁদের পাশে দাঁড়ান।
তিনি বলেছেন, লুটের নির্বাচনে ষাট জনের প্রাণ গেছে। বিরোধী কর্মী সমর্থক, সাধারণ ভোটার নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন, ভোট লুটেরাদের ভাড়াটে গুন্ডারাও মারা গেছেন। সব মৃত্যুতেই আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি, প্রতিটি মৃত্যুর জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। আগামী সাতদিন আমরা সর্বত্র এত মানুষের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করবো। মুখ্যমন্ত্রী কেবল নিজের দলের ভোট লুটেরাদের মৃত্যু দেখাচ্ছেন। কিন্তু আমরা সব মৃত্যুতেই শোক জানাচ্ছি, মৃতদের সবার তালিকা টাঙাতে হবে যা মুখ্যমন্ত্রীর আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না। 
এদিন কলকাতা ছাড়াও শিলিগুড়ি, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, জলপাইগুড়ি সহ অনেক জায়গায় ধিক্কার মিছিলে মানুষ অংশ নিয়েছেন। কলকাতায় ধর্মতলার লেনিন মূর্তির সামনে বিকাল চারটে থেকেই জড়ো হতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। কলকাতার বামফ্রন্ট কর্মীদের পাশাপাশি জেলাগুলি থেকেও অনেকে এসেছিলেন, কলকাতার কংগ্রেস কর্মীরা এসেছিলেন, ভাঙড় ও কিছু জায়গা থেকে আইএসএফ কর্মীরাও এসেছিলেন। লাল ঝান্ডা, কংগ্রেসের ঝান্ডা, আইএসএফ’এর ঝান্ডা নিয়ে একসঙ্গে বিকেল সাড়ে চারটেয় হাজার হাজার মানুষের ধিক্কার মিছিল সোচ্চারে হাঁটা শুরু করে। মধ্য কলকাতার একাংশের রাস্তা অচল হয়ে যায় মানুষের প্রতিবাদী পথ চলায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুট, সন্ত্রাস, খুন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের শাসকদলের দাসত্ব, প্রতিবাদে এবং গ্রামবাংলায় শান্তি রক্ষার দাবিতে মিছিল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে। ব্যানার, ফেস্টুন এবং পোস্টারে পোস্টারে নির্বাচনের নামে গণতন্ত্রকে হত্যার অভিযান চালানোয় তৃণমূল এবং পুলিশ প্রশাসনকে ধিক্কার জানানো হয়। রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের অফিসারদেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে গণতন্ত্র হত্যায় অংশগ্রহণের জন্য। বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী ও রবীন দেব, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই নেতা গৌতম রায়, কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চ্যাটার্জি, আইএসএফ নেতা বিশ্বজিৎ মাইতি প্রমুখ মিছিলে নেতৃত্ব দেন। লেনিন সরণি দিয়ে মিছিল মৌলালি মোড় হয়ে এন্টালি মার্কেটের সামনে এসে পৌঁছালে সংক্ষিপ্ত ধিক্কার সভা হয়। সেখানে এসে যোগ দেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকিও। 
স্বল্প সময়ের আহবানে হাজার হাজার মানুষ মিছিলে শামিল হওয়ায় তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বিমান বসু কলকাতায় মিছিল শেষে বলেছেন, প্রহসনের নির্বাচনে রাজ্য নির্বাচন কমিশন অপদার্থতা দেখিয়েছে, মানুষকে নিরাপত্তাও দিতে পারেনি বলে এত রক্ত ঝরেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে রাজ্যে কোনও পঞ্চায়েত নির্বাচনে এমন ঘটনা ঘটেনি। মনোনয়নে বাধা দেওয়া থেকে জোর করে প্রত্যাহার করানো, তারপরে ভোট লুট এবং তারপরে গণনাকেন্দ্রেও লুট চালিয়েছে শাসকদল। পুলিশ প্রশাসন তাতে মদত দিয়েছে। গণতন্ত্র হত্যার এমন অভিযানকে আমরা ধিক্কার জানাই। এর বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যকে আরও জোরদার করে রাস্তায় লড়াই সংগ্রামে থাকতে হবে। 
কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চ্যাটার্জি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন জোট বেঁধে মানুষের অধিকার লুট করেছে। মমতা ব্যানার্জিকে মানুষ ভয় পাচ্ছে না, এখন মমতা ব্যানার্জিই মানুষকে ভয় পাচ্ছেন। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চ্যাটার্জি, আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই নেতা গৌতম রায়, আইএসএফ নেতা বিশ্বজিৎ মাইতিও বলেছেন, এই প্রহসনের নির্বাচনেও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে যারা নেমেছেন তাঁদের আমরা কুর্নিশ জানাই। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এই লড়াই চলবে এবং তা আরও প্রসারিত করতে হবে। 
ভাঙড়ে নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে কীভাবে মনোনয়নে বাধা দিয়েছে, তারপরে ভোটের দিনে হামলা করেছে এবং সবশেষে গণনাকেন্দ্রে চরম হিংসাত্মক হামলা চালিয়ে আইএসএফ’এর জয়ের ফলাফলকে উলটে দিয়েছে তার বিবরণ দিয়ে নওসাদ সিদ্দিকি বলেছেন, রাত আটটায় আইএসএফ’এর জয়ী জেলা পরিষদ প্রার্থীকে রাত বারোটা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিল গণনাকেন্দ্রে। চার ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন করে রেখে আরাবুলের সশস্ত্র বাহিনী ভিতরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, আমরা প্রার্থী সহ পাঁচজনকে এখনও খুঁজে পাচ্ছি না, সৃষ্টিকর্তা তাঁকে জীবিত রেখেছেন এটুকুই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা জানি পুলিশকে নিয়ে তৃণমূল আরও হামলা চালাবে, কিন্তু মানুষ পাশে থাকলে আমরা কিছুতেই আত্মসমর্পণ করবো না। এই সব হামলার হিসাব আইনগতভাবেই আমরা আদায় করে ছাড়ব। ভাঙড়ের নির্বাচনে, গণনাকেন্দ্রে যা ঘটেছে তার সিবিআই তদন্ত চেয়ে আমরা হাইকোর্টে যাবো। 
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মানি মাসল মাফিয়া এবং প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে মমতা ব্যানার্জি বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। তাহলে তো ইংরেজ আজও ভারতে রাজত্ব চালাতে পারত। বাংলায় গণতন্ত্র হত্যা করে মমতা ব্যানার্জি দেশের সামনে ধর্মনিরপেক্ষ সাজবেন? উত্তর প্রদেশ এবং ত্রিপুরার মতোই আরএসএস’এর প্রেসক্রিপশন এখানে প্রয়োগ করছেন মমতা ব্যানার্জিই। হিন্দু মুসলিম ভাগ করে লুটের রাজত্ব কায়েম রাখতে চাইছেন। তৃণমূল আর বিজেপি একই মুদ্রার দুই পিঠ- এখন বাংলার মানুষ এটা বুঝে গেছে। কোনও রাজ্যপাল দিয়ে বাংলায় গণতন্ত্র ফেরানো যাবে না, বাংলার মানুষই এককাট্টা হয়ে গণতন্ত্র ফেরাবে, সেই লড়াই শুরু হয়ে গেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment