Sikkim Avalanche

সিকিমে তুষারধসে শিশু সহ মৃত সাত

জাতীয়

 নাথু লা’র কাছে তুষার ধসে মঙ্গলবার মৃত্যু হলো এক শিশু ও মহিলা সহ সাত জনের। সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাঙটকের সঙ্গে নাথু লা’র সংযোগকারী জওহরলাল নেহরু (জে এন) রোডের উপর ১৫ মাইলে এদিন দুপুর সোয়া ১২টা নাগাদ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন পর্যটকরা। প্রাথমিকভাবে ১১ জনের জখম হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। তুষারধসে চাপা পড়েছেন বহু। বিকেল চারটে পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, ২৩ জন পর্যকটকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। যদিও যখন তুষারধস নামে তখন সেখানে কমপক্ষে দেড়শো জন পর্যটক ছিলেন। রাত পর্যন্ত ঠিক কতজন আটকে রয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে জানানো না হলেও মনে করা হচ্ছে, অন্তত ৫০ জন আটকে রয়েছেন। তার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। সেনাবাহিনীর তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এক উপত্যকার গভীর থেকে ছ’জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সেনাবাহিনীর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও ছ’-সাত জন পর্যটককে অ্যাম্বুলেন্সে গ্যাঙটকের এসটিএনএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। সেনাবাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে নেমেছেন জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সিকিম পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। 
প্রায় পাঁচ-ছ’টি গাড়ি ২০-৩০ জন পর্যটক নিয়ে এদিন সকালে নাথু লা’র দিকে রওনা দেয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বরফের আস্তরণের নিচে চাপা পড়া গাড়িতেও আটকে রয়েছেন পর্যটকরা। ফলে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে। পর্যটক বোঝাই একটি বাসও খাদে পড়ে গিয়েছে বলে খবর চাউর হয়েছে। তবে সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে রাত পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। সিকিম পুলিশের বিশেষ ডিজিপি অক্ষয় সচদেবা বলেন, ‘‘ছাঙ্গু-নাথুলায় সারা বছরই পর্যটক আসেন। কিন্তু ১৩ মাইলে এর আগে কখনও তুষারপাতের কবলে পড়েননি কোনও পর্যটক। তথাকথিতভাবে অনেকটাই নিচুতে ১৩ মাইল। এদিন ১৩ মাইল আর ১৭ মাইলের মাঝে তুষারধস নামে। এখন আমাদের মূল লক্ষ্যই হলো, আটকে পড়া পর্যটকদের দ্রুত উদ্ধার করা। বরফের নিচে চাপা পড়ে যাওয়া পর্যটকদের জীবিত উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। এদিন ছাঙ্গু পর্যন্তও পারমিট দেওয়া হয়নি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থেকেই। পর্যটকরা প্রত্যেকেই বরফ দেখতে চান। পারমিটের জন্য চাপ বাড়ে পুলিশের উপর। আমরা সবসময়ই নিরাপদ জায়গা পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দিই। কিন্তু ১৩ মাইল বা ১৫ মাইলে তুষারধস হতে পারে এমন ধারণা ছিল না।’’


পূর্ব সিকিমের উপরের দিকের অঞ্চলগুলিতে শুক্রবার থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। গ্যাঙটকের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকরা বলছেন, সোমবার রাত থেকে নতুন করে তুষারপাত শুরু হয়েছে। ছাঙ্গু লেক সংলগ্ন এলাকা, বাবা মন্দির, নাথু লা সহ পূর্ব সিকিমের নানা প্রান্তেই দিনে অনেকবার বরফ পড়েছে। যে কারণে ১৩ মাইল পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় পর্যটকদের। পর্যটকদের একাংশ কার্যত জোর করেই ১৫ মাইল পর্যন্ত যান এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েন। অনেক পর্যটক ১৫ মাইলে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে উপরের দিকে উঠতে থাকেন। সেইসময়ই নামে তুষারধস। ধসের ভিডিও করতে আবার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে একদল পর্যটক। মুহূর্তের মধ্যে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসা বরফের স্তূপে চাপা পড়ে যান তাঁরা। বরফের পুরু আস্তরণে পা দিতেই তলিয়ে যান অনেকে। তবে এদিন তুষারপাত হতে পারে এমন কোনও পূর্বাভাস ছিল না। 
সোশাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমের ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে, বরফের চাঁই সরিয়ে পর্যটকদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এক তরুণীকে উদ্ধার করে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। বিভিন্ন জায়গায় বরফ সরিয়ে তল্লাশি চালানোর চেষ্টা চলছে। রাস্তা বরফে ঢেকে যাওয়ায় ৮০টি গাড়ি এবং সাড়ে তিনশো পর্যটক নাথু লা থেকে গ্যাঙটকের দিকে আসার রাস্তায় আটকে পড়েন। পরে বরফ সরিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে খারাপ আবহাওয়ার জেরে এবং রাত হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজেও ব্যাঘাত ঘটেছে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও হচ্ছে। 
সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র খবর থেকে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘‘উদ্ধারকাজ চলছে। জখমদের চিকিৎসায় সমস্ত সাহায্য করা হবে।’’ শোক জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহও, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাঙ। 
সমুদ্র থেকে ১৪ হাজার ফুট (৪,৩১০ মিটার) উঁচুতে চীন সীমান্ত লাগোয়া সিকিমের এই নাথু লা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি গন্তব্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে বছরের বিভিন্ন সময়েই এখানে ভিড় জমান তাঁরা। গত কয়েকদিন ধরেই সিকিমে মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাত হচ্ছে। বরফ উপভোগ করতে অনেকেই আসছেন। নাথু লা’তেও ভিড় বেড়েছে। মাঝে তুষারপাতের কারণেই পারমিট দেওয়া বন্ধ রেখেছিল স্থানীয় প্রশাসন। তখন পর্যটন ব্যবসায় মন্দাও দেখা দেয়। কিন্তু ফের পারমিট চালু হওয়ায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে একটি নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত যেতে দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের। প্রসঙ্গত, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে মারাত্মক তুষারপাতের জেরে কমপক্ষে ৯০০ পর্যটক আটকে পড়েছিলেন এই জে এন রোডেই। 
‘ল্যান্ডস্লাইড আটলাস অব ইন্ডিয়া’র তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সিকিমে ১৫৬১ বার ধস নেমেছে। ধসের তীব্রতা এবং ঝুঁকির দিক থেকে দেশের সব জেলার মধ্যে নয় নম্বরে রয়েছে পূর্ব সিকিম, উত্তর সিকিমের স্থান আটে।
 

Comments :0

Login to leave a comment