Supreme court

মমতার আইনজীবীকে জেরা করতে পারবে ইডি

রাজ্য

অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ, রাজ্য সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী সঞ্জয় বসুর বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এমনকি প্রয়োজনে তাঁকে জেরাও করতে পারবে ইডি। তবে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালানো বা কোনও জিনিস বাজেয়াপ্ত করার মতো কিছু করতে পারবে না তদন্তকারী সংস্থা। মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
দক্ষিণ কলকাতায় সঞ্জয় বসুর বাড়িতে টানা দু’দিন তল্লাশির পরে ফের মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁকে তলব করেছিল ইডি। ইডি’র সেই সমনকে চ্যালেঞ্জ করেই হাইকোর্টে যান সঞ্জয় বসু। হাইকোর্ট থেকে রক্ষাকবচ মেলে। ইডি’র সমনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট। এমনকি হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া তদন্তকারি সংস্থা পরবর্তীতে তলবও করতে পারবে না বলে নির্দেশ দেয়। কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এদিন সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের রায়ের একটি অংশকে খারিজ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
গত ১ মার্চ দক্ষিণ কলকাতার ১১বি, বর্ধমান রোডের আবাসনে এই আইনজীবীর ফ্ল্যাটে সকাল সাতটা থেকে ২ মার্চ দুপুর প্রায় বারোটা পর্যন্ত প্রায় ২৮ ঘণ্টা ইডি’র আধিকারিকরা তল্লাশি অভিযান চালায়। কয়লাকাণ্ড থেকে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি, টাকা পাচার— সারা রাত চলে তল্লাশি, জেরা পর্ব। সঞ্জয় বসু কতটা প্রভাবশালী এবং মমতা ব্যানার্জি ও অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ তার প্রমাণ মেলে ২ তারিখে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘গতকাল সকাল থেকে ইডি ওঁর বাড়িতে সার্চিং শুরু করে। সঞ্জয় রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল। ওর সরকারের অনেক কাগজ স্বাভাবিকভাবেই ওঁর কাছে থাকে। ও আমারও আইনজীবী। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করেছি, সঞ্জয় কেয়া কেয়া মিলা, কেয়া কেয়া লেকে গিয়া? ও বলছে, ‘কুছ নেহি মিলা। খালি আপলোগোকে বারে মে কোয়েশচেন পুছ রহা থা। আউর হামারে ঘর কো তছনছ করকে গিয়া।’ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ২৮ ঘণ্টা যার বাড়ি ঘিরে রেখে তল্লাশি চালালো, জেরা চলল, সেই তাঁর সঙ্গেই ফোনে কথাও বলেছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী- নবান্নে বসে তা নিজেই জানান। 
ইডি’র একটি সূত্রে জানা যায়, একাধিক নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। শিখণ্ডী সংস্থার মাধ্যমে টাকা পাচারের বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর আগে এই সঞ্জয় বসুকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লির সদর দপ্তরে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। আগস্ট মাসের শেষে একযোগে সে সময় কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে অভিষেক ব্যানার্জি, তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা ব্যানার্জি, তিন আইপিএস আধিকারিকের পাশাপাশি এই সঞ্জয় বসুকেও তলব করে ইডি। কয়লা পাচারকাণ্ডেই সেই তলব। এমনকি একটি চিট ফান্ডকাণ্ডের মামলাতেও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলেছে ইডি’ তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে, জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে তবে কোনোরকম ভাবে হেনস্তা করা যাবে না আইনজীবী সঞ্জয় বসুকে। এদিন দু’পক্ষের শুনানিতে ইডি’র তরফে বলা হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই চিট ফান্ডকাণ্ডের তদন্ত চলছে। সেই তদন্তের অংশ হিসাবেই মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত। একজন আইনজীবীকে তলব করা হলেই তিনি গ্রেপ্তারির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কেন? দু’পক্ষের তীব্র সওয়ালের পরে সুপ্রিম কোর্টে দুই বিচারপতির বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্ট ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনামার নির্দিষ্ট অংশ খারিজ করে।

Comments :0

Login to leave a comment