Uttarkashi tunnel collapse

সেই আটকেই শ্রমিকরা, ছ’ইঞ্চির পাইপ নামিয়ে ‘ব্রেক থ্রু’র প্রচার

জাতীয়

 লম্বালম্বির পর এবার আড়াআড়িভাবে দু’টি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। সোমবার যখন ফের নতুন পরিকল্পনা হচ্ছে, তখন পেরিয়ে গিয়েছে ন’দিন। প্রায় ২২০ ঘণ্টা টানেলের ভিতর আটকে ৪১ প্রাণ। এক-একেকটি সেকেন্ড যাঁদের কাছে কার্যত বছর-সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তত তিন জন শ্রমিক বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ডিহাইড্রেশন, মাথাব্যথা, পেটের গন্ডগোল, বমিভাব— বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। শ্রমিকদের সুস্থভাবে, জীবিত টানেলের বাইরে আনা যাবে কি না তা নিয়ে প্রবল সংশয়ের মাঝে হঠাৎই ‘লাইমলাইট’ কেড়ে নিতে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সাধের চারধাম সড়ক প্রকল্পকে দিনের আলো দেখাতে গিয়েই এই শ্রমিকদের জীবন আটকে গিয়েছে অন্ধকূপে। তিনি বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে গিয়েছেন, নিজের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে বসে হাত নেড়েছেন, মন খুলে হেসেছেনও। কিন্তু সময় হয়নি উত্তরকাশী আসার। সময় হয়নি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখার বা শ্রমিক-পরিজনদের মনের জোর বাড়াতে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি প্রথম থেকেই পাখি পড়ার মতো করে প্রতি কথার শেষে বলে চলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন।’’ নিজের পিঠ বাঁচাতে এবং ফোকাসে থাকতে অবশেষে মোদী এদিন ফোন করেছিলেন ধামিকে। খবর নিয়েছেন উদ্ধারকাজ নিয়ে। আর গোদী মিডিয়া তা নিয়েই দিনভর বাজারগরম করেছে। 
দীপাবলির দিন উত্তরকাশীর সিলকিয়ারা টানেল ভেঙে পড়ে। এতগুলি দিন কেটে গেলেও শ্রমিকদের বের করে আনা সম্ভব হয়নি। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এদিন ক্ষোভ-উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। শ্রমিকদের টানেলের ভিতর থেকে বের করে আনা গেল না এখনও। উদ্ধারকাজ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় সরকার কেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ বা সংস্থার সাহায্য নিচ্ছে না? শ্রমিকদের উদ্ধারে কোনওরকম ব্যবস্থাতেই ঢিলেমি দেওয়া উচিত নয়। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে উদ্ধারকাজে আরও জোর বাড়াতে হবে। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছেন। 
উদ্ধারকারী দল এদিন ছ’ইঞ্চির একটি প্রশস্ত পাইপ নামিয়েছে টানেলে। ওই পাইপের মধ্যে দিয়ে অনেকটা পরিমাণে খাবার এবং আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠানো হয়েছে। এর আগে চার ইঞ্চির একটি পাইপে শুকনো খাবার, ফল, কাজু, কিশমিশ, ওষুধ এবং অক্সিজেন পাঠানো হয়েছে। যেদিন এই দুর্ঘটনা ঘটে সেদিন এটি অত্যন্ত তুচ্ছ ব্যাপার, তুড়ি মেরে শ্রমিকদের বের করে আনা হবে বলে প্রশাসন বার্তা রটিয়ে দিয়েছিল। এতদিনে শুধু প্ল্যান এ, প্ল্যান বি করে ছ’রকমের পরিকল্পনাই হয়েছে। বাস্তবে কাজ এগচ্ছে না একচুলও। তা সোচ্চারে বলছেন শ্রমিকদের পরিজনরাও। অথচ এই ছ’ইঞ্চি, চার ইঞ্চির পাইপ সুড়ঙ্গে নামানো নিয়েও সংবাদমাধ্যম বিরাট ‘ব্রেকথ্রু’র প্রচার চালিয়ে গিয়েছে। ‘ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এনএইচআইডিসিএল) ডিরেক্টর অংশু মণীশ খালকো দাবি করেন, আমরা ভেঙে পড় অংশের অন্য দিক দিয়ে ৫৩ মিটার ভিতরে পাইপ পাঠাতে পেরেছি। আটকে পড়া শ্রমিকরা আমাদের কথা ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছেন এবং আমাদের অনুভবও করতে পারবেন।’’ ডিআরডিও’র তরফে ড্রোন এবং রোবটের মাধ্যমে উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর অন্য কোনও উপায়ে শ্রমিকদের বের করে আনা সম্ভব কি না, তা দেখা হচ্ছে ড্রোনের মাধ্যমে। তবে মূল টানেলের বাঁদিক এবং ডান দিক দিয়ে আড়াআড়িভাবে যে দু’টি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পরিকল্পনা হয়েছে, এদিন রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে সেই কাজ শুরু হয়নি। উদ্ধারকারী দল আরও পরিকল্পনা করেছে, পাহাড়ের নিচ দিয়ে ৮০ মিটারের বেশি খোঁড়া হবে, যাতে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়। সেক্ষেত্রে ওএনজিসি যে রাস্তা ব্যবহার করে সেই রাস্তা দিয়ে বড় ড্রিলিং মেশিনগুলি নিয়ে যাওয়া হবে। টানেলের ভিতর কী অবস্থায় রয়েছেন শ্রমিকরা, তা যাতে দেখতে পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাও করার চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স এদিন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। তিনি সমস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন। এই উদ্ধারকাজে যুক্ত থাকা কর্ণেল দীপক প্যাটেল জানিয়েছেন, ডালিয়া, খিচুড়ি এবং আপেল, কলা কেটে কেটে পাঠানো হবে এবার। ছ’ইঞ্চির এই পাইপ দিয়ে প্লাস্টিকের বোতলও পাঠানো যাবে। একইসঙ্গে মোবাইল, চার্জার পাঠানোর চেষ্টা চলছে। ভিতরে টেলিফোন লাইনও বসানো হতে পারে। কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনাই সার, বাস্তবে দুর্বিষহভাবে দিন কাটছে শ্রমিকদের, সেইসঙ্গে তাঁদের পরিবারের লোকজনদের। উত্তরাখণ্ড সরকার পরিজনদের যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার খরচের দায়িত্ব নিয়ে সমালোচনা বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে। টানেলের মুখে ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন মন্দির বানিয়ে দিয়ে পরিজনদের ক্ষোভ স্তিমিত করার কৌশল নিয়েছে। আর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল দিল্লিতে এক হনুমান মন্দিরে বসে যজ্ঞ করলেন, যাতে শ্রমিকরা টানেল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন!
 

Comments :0

Login to leave a comment