(দ্বিতীয় পর্ব)
পৃথিবী জুড়ে পরিবেশ আন্দোলন ও বামপন্থার ভূমিকাও দেখা প্রয়োজন।
শুধুই কি 'অন্ধকার যেদিকে তাকাই'? শুধুই 'কালো কালো ধোঁয়া'? না। সারা পৃথিবী জুড়েই পরিবেশকে বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলন ও আছড়ে পড়েছে চারদিকে।এক্ষেত্রেও অগ্রসর ভূমিকা পালন করেছেন বামপন্থীরা। খুব স্পষ্ট ভাবেই বামপন্থীদের বক্তব্য: শ্রেণি সংগ্রাম বাদ দিয়ে পরিবেশ আন্দোলন কেবলই বাগান করার বেশি কিছু নয়। বামপন্থীদের পরিবেশ সচেতনতা বা আন্দোলন এই প্রথম নয়।
কার্ল মার্ক্স এবং ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস তাঁদের লেখায় 'প্রকৃতি এবং পুঁজির' মধ্যে সম্পর্কের কথা লিখেছেন। ক্রোপটকিন বিশ্বাস করতেন যে বিপ্লবের পরে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সমগ্র প্রকৃতির সম্মিলিত মালিকানা হওয়া উচিত। রাশিয়া এবং চীনে, কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা গ্রহণের পর, পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকারি নীতিগুলি স্থাপন করা হয়েছিল। পরিবেশ রক্ষার গণআন্দোলন যুদ্ধোত্তর যুগের ফল। একদিকে, পরিবেশ দূষণ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে ‘লন্ডন স্মগ’-র এর মতো অনেক বিপর্যয় ঘটেছে। একই সময়ে, জ্বালানি সঙ্কট এবং শীতল যুদ্ধ চলছে – এই পরিস্থিতিতে ইউরোপে ‘Ecological, ‘Environmentalist’ এবং ‘পরিবেশবাদী’ আন্দোলনগুলি যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন হিসাবে শুরু হয়েছিল।
পশ্চিম ইউরোপের প্রায় প্রত্যেক দেশেই তৈরি হয় পরিবেশবাদী দল বা গ্রিন পার্টি। ডেনমার্কে তৈরি হয় রেড-গ্রিন মুভমেন্ট, আইসল্যান্ডে লেফট-গ্রিন এলায়েন্স। নেদারল্যান্ডসে কমিউনিস্ট পার্টি, প্যাসিফিস্ট সোশ্যালিস্ট পার্টি ও অন্যান্য সহযোগী দল মিলে তৈরি করে গ্রিন লেফট।এই প্রত্যেকটি পরিবেশ আন্দোলনই শ্রেণী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। পরবর্তীতে নয়াউদারবাদের হাত ধরে পরিবেশবাদী বেশ কিছু গোষ্ঠী সামনে আসে। তারা পুঁজির সাথে পরিবেশের দ্বন্দ্ব গুলিয়ে পরিবেশ আন্দোলনকে একটি বিচ্ছিন্ন আন্দোলন হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে। বামপন্থীদের বিকল্প হিসেবে স্পষ্ট কথা এমন প্রযুক্তি নির্মাণ করতে হবে যা থেকে দূষণ কম হবে কিন্তু কোনভাবেই শ্রমিকের পেটে লাথি পড়বে না।
চিলি, পেরু, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, বামপন্থীরা জিতেছে। ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও উরুগুয়েতেও এগিয়ে বামপন্থীরা। বাম আন্দোলন চিরকাল পুঁজিবাদ বিরোধী, এবং এর পরিবেশ রক্ষার ইতিহাস রয়েছে। এটি আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা করে। শ্রমিক-শ্রেণি-প্রধান পরিবেশগত রাজনীতিতে লাতিন আমেরিকার সাফল্য অন্যত্র অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার বামপন্থী বিপ্লবীরা ইসলামিক স্টেট ও তুর্কিসাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করার পর সমাজ পুনর্গঠনের কাজ করছে। রোজাভা বিপ্লবে, পরিবেশবাদ একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হতে হয়েছে অনেক পরিবেশ যোদ্ধাকে।কখনো মেক্সিকো,কখনো হন্ডুরাস, কখনো আফ্রিকা,কখনো আমাদের দেশে (২০১৮, তুতিকোরিন)।
বলতেই হয় ব্রাজিলের চিকোমেন্ডিসের কথা।একদিকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সংঘবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের, অন্যদিকে সেই শ্রমিক আন্দোলনকেই রূপান্তরিত করেছিলেন পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে। স্বভাবতই রবার মালিকদের রোষের মুখে পড়েমেন্ডিসকেখুন হতে হয় ১৯৮৮সালে।
দেশে,রাজ্যে পরিবেশ বাঁচাতে পথ দেখাচ্ছে বামপন্থীরা।
দেশের সরকার সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি সম্পদের মতোই পরিবেশও বেচে দিচ্ছে কর্পোরেটের হতে। আবার নিজেদের মুনাফার জন্য কর্পোরেট এমন সার, এমন বীজ বাজারে নিয়ে আসছে যা একাধিকবার কৃষকদের কিনে ব্যবহার করতে হবে ফলন এবং মাটির গুণমান বজায় রাখার জন্য।প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পরিবেশগত যা ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং তার মধ্য দিয়ে কৃষক,ক্ষেতমজুর মৎস্যজীবী, আদিবাসীদের জীবন জীবিকার যা ক্ষয়ক্ষতি হয় আমাদের দেশের বা রাজ্যের সরকার তার ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ।
আলোর খোঁজে..
এ কথা জানতে বাকি নেই যে পুঁজিবাদ এখন সংকটের মুখে পড়েছে এবং পুঁজিবাদ যখন সংকটের মুখে পড়ে তখন সে কিছু রাস্তার মাধ্যমে বাঁচতে চায় প্রথমে আরো দাঁত নখ বার করে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে আরও চরমভাবে আক্রমণ আসে পরিবেশের উপর। তারপর তারা একের পর এক জনগোষ্ঠীকে দায়ী করে তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কোনভাবেই বাঁচার রাস্তা না পেলে শেষমেষ আবার ফিরতে হয় সমাজতান্ত্রিক মডেলেই। ফুকুয়ামা যিনি একদিন বলেছিলেন মার্কসবাদের আর কোন ভবিষ্যত নেই,তাঁকেও ফিরতে হয়। তাই এই পরিবেশ সঙ্কটে সমাধানের পথ দেখাচ্ছে বামপন্থীরাই। পৃথিবীর আকাশ যখন দূষণের আঁধারে ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন, তখন আলোর খোঁজে, পথ দেখাচ্ছে বামপন্থা। পথ দেখাচ্ছে বামপন্থীরাই।
ঋণ স্বীকার:
ড:পার্থিব বসু, তপন সাহা, সাম্যজিত গাঙ্গুলি, বাসব বসাক, তপন মিশ্র।
Comments :0