Ram Mandir

রাম মন্দির উদ্বোধনের থাকছেন না আডবানি, যোশী

জাতীয়

যেই লালকৃষ্ণ আডবানির নেতৃত্বাধীন রথযাত্রা অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল, সেই আডবানি থাকছেন না রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। ১৯৯২ সালে লালকৃষ্ণ আডবানি, মুরলি মনোহর যোশীদের নেতৃত্বে তোলা হয়েছিল ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’। তার পর ভাঙা হয়েছিল বাবরি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সেখানে তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির। আগামী ২২ জানুয়ারি তার উদ্বোধন। রাম মন্দির ট্রাস্ট সূত্রে খবর তাদের পক্ষ থেকে দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। 
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাস্টের সম্পাদক জানিয়েছেন দুজনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের শারিরীক অবস্থার কথা মাথায় রেখে অনুষ্ঠানে আসতে বারণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে দুই নেতাই সেই বারণ মেনে নিয়েছেন। 
রাম মন্দিরকে সমানে রেখে গোটা দেশে ফের লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলতে পারে বিজেপি আরএসএস এমনটা মনে করছে অনেকে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেকারত্বের হার ক্রমশ বেড়েছে। সেই বেকারত্বকেও রাম মন্দির দিয়ে ঢাকতে চাইছে বিজেপি আরএসএস। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীর সেই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী বেকারি দূর করার সোজা পথও বাতলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এই বিশাল মন্দির দেখতে বহু লোক আসবে, তার ফলে আশপাশের সমস্ত গ্রামে রোজগার ব্যবসা বাড়বে।’’ একইভাবে গরিবি দূর করার সহজ পন্থাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, ‘‘সবাই একটি করে গরিব পরিবারকে সাহায্য করুন, এটাই ভারতে গরিবি দূর করার রাস্তা।’’


বারাণসীর চৌবেপুরে এদিন প্রধানমন্ত্রী বিহঙ্গম যোগ সংস্থানের বিশাল এক মন্দিরের উদ্বোধন করেন। মন্দিরে নাম দেওয়া হয়েছে স্বর্বেদ। ওই সংস্থার শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা সন্ত সদাফল মহারাজের ১৩৫ ফুট উঁচু মূর্তির উদ্বোধনও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোট  ২০০ একর জমি রয়েছে এই মন্দিরের। তারমধ্যে ৬৪ হাজার বর্গ ফুট এলাকায় তৈরি হয়েছে মন্দির। ১৮০ ফুট উঁচু মার্বেলের বিশাল মন্দির তৈরি করা হয়েছে। বিপুল অর্থ খরচ হয়েছে মন্দির নির্মাণে, খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। যদিও সংস্থার পক্ষ থেকে মন্দির নির্মাণের খরচ জানানো হয়নি। ৫০টির বেশি দেশে বিহঙ্গম যোগ সংস্থানের শাখা আছে। ৬০ লক্ষ সদস্য আছে। এদিন মন্দির উদ্ধোধনের পরে সমাবেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও বড় আকারের জমায়েত করা হয়েছিল ওই সংস্থার পক্ষ থেকে। সেই সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দুত্বকেই ভারতের ঐতিহ্য, পরম্পরা, সংস্কৃতি, ইতিহাস বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। 
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘‘গোলামীর কালখণ্ডে যে অত্যাচারীরা ভারতকে কমজোর করার চেষ্টা করেছে তারা প্রথমেই আমাদের প্রতীককে নিশানা করেছে। স্বাধীনতার পরে এই প্রতীকগুলির নবনির্মাণ আবশ্যক ছিল, দুর্ভাগ্য তা হয়নি। স্বাধীনতার পরে সোমনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণের বিরোধিতা করা হয়েছিল। এই ভাবনা দশকের পর দশক দেশের উপরে চেপে বসেছিল। দেশ হীন ভাবনার গর্তে চলে গেছিল। নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতে ভুলে গেছে। কিন্তু আজাদির সত্তর বছর পরে সময়ের চক্র ঘুরে গেছে। এখন লালকেল্লা থেকে গুলামির মানসিকতার মুক্তি এবং নিজেদের ঐতিহ্য-পরম্পরা নিয়ে গর্ব করছে। যে কাজ সোমনাথ থেকে শুরু হয়েছিল, তা এখন আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’’ মোদী সহ হিন্দুত্ববাদীরা গোলামি বলতে ব্রিটিশ সময়কে বোঝান না। তারা গোলামি বলতে মুসলিম শাসকদের কথা বলতে চান। 
সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার সম্পূর্ণ বক্তৃতায় তিনি স্পষ্ট করেছেন, হিন্দু মন্দির নির্মাণই তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার। সেটাকেই তিনি বিকাশ বা উন্নয়ন হিসেবে দেখাতে চাইছেন। এরপর তিনি বারাণসীর উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ ফিরিস্তি দিয়েছেন। সেই দাবির মূল ছিল পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং কাশী বিশ্বনাথ করিডোর। কাজ, চাকরি, কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেটাকেই সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের জন্য বারাণসীতে রোজগার আর ব্যবসা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। একইভাবে নতুন স্বর্বেদ মন্দির নির্মাণের ফলেও আশপাশের গ্রামে গ্রামে মানুষের উন্নয়নের রাস্তা খুলে যাবে, রোজগার ও ব্যবসা বাড়বে।

Comments :0

Login to leave a comment