Panchayat vote 2023

গাজোলে মিলল সিল খোলা আস্ত তিন ব্যালট বাক্স

জেলা

 

গণনার এক সপ্তাহ পরে ৩টি ব্যালট বাক্স পাওয়া গেল গাজোলে। পুলিশ, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনায় কতটা ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। ভোট গণনা হয়েছে গত ১১ জুলাই। সেদিন গণনা কেন্দ্রে তৃণমূলের দুষ্কৃতী, মদ্যপ কর্মীরা বিরোধীদের মেরেছে, বিরোধীদের প্রতীকে ছাপ মারা ব্যালট ছিঁড়েছে, পুড়িয়েছে, খেয়ে ফেলেছে পর্যন্ত। এখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী দলগুলির প্রতীকে ছাপ মারা ব্যালট দেদার পাওয়া যাচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় পাওয়া গেল আস্ত ব্যালট বাক্সই— তাও একটা নয়, তিনটি। 
গাজোল ব্লকের ডিসিআরসি অর্থাৎ ভোট সামগ্রী বিতরণ, গ্রহণ ও গণনা কেন্দ্র গাজোল এইচ এন হাই স্কুলে একটি ঘর থেকে ওই তিনটি ব্যালট বক্স উদ্ধার হয়েছে। যে তিনটি ব্যালট বক্স উদ্ধার হয়েছে তা হলো ৮৩, জীবনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি স্তরের তিনটি ব্লক। গণনার এক সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পর গাজোল হাই স্কুলের ৪টি ঘর ব্লক প্রশাসন দখল করে রেখেছিল। তালা বন্ধ রাখা হয়েছিল ঘরগুলি। সোমবার স্কুল কর্তৃপক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকরা এবং ছাত্ররা বিডিও অফিসে গিয়ে ওই চারটি ঘর খুলে দিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হেপাজতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। ব্লক প্রশাসন দ্রুত ঘরগুলিতে খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। 
তারপরই স্কুলের দোতালার ২০৭ নম্বর ঘরের তালা খুললে দেখা যায় ঘরের কোণে ত্রিপল দিয়ে কিছু ঢাকা আছে। ত্রিপল সরাতেই দেখা যায় তিনটি ব্যালট বক্স রয়েছে। স্কুলের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, যদিও সেগুলি সিল করা ছিল না। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। প্রধান শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে গাজোল থানায় বিষয়টি জানালে কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী স্কুলে এসে পৌঁছায়। এলাকার মানুষও ভিড় জমায় স্কুলের সামনে। কিন্তু ব্যালট বক্স উদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলেও ঘটনাস্থলে বিডিও বা যুগ্ম বিডিও-কে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। পরিবর্তে একজন মিড-ডে মিলের আধিকারিককে স্কুলে পাঠালেও রাতে ওই ব্যালট বাক্সগুলিকে সরিয়ে নেওয়া হয়নি। অনেক টালবাহানার পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনটি ব্যালট বক্স বিডিও অফিসে সরিয়ে নেওয়া হয়।
জানা গেছে ৮৩ নং বুথের ওই তিনটি ব্যালট বক্স ভোটের দিন ডিসিআরসি থেকে স্ট্রংরুমে নিয়ে যাওয়ার পথে উধাও হয়ে যায়। ফলে ওই বুথে তিনটি স্তরেই ১০ জুলাই পুননির্বাচন করা হয়। তবে প্রশ্ন একটা থেকেই যায় ভোট গ্রহণ শেষে ব্যালট বক্স সিল থাকার কথা। তাহলে সিল খোলা অবস্থায় পাওয়া গেল কীভাবে? প্রশ্ন তাহলে কি আগেই শাসক দলের নেতাদের নির্দেশে আধিকারিকরা ব্যালট বক্স খুলে শাসক দলের খারাপ অবস্থা বুঝে তা লুকিয়ে রেখে পুনর্নির্বাচন ঘোষণা করে দেয়।
এই ঘটনা সামনে আসতেই মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস কর্মীরা বিডিও অফিসের সামনে অবস্থান করে। বিডিও-র দেখা না পাওয়া বা ব্লক প্রশাসনের কোনও বক্তব্য না পাওয়ায় বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনায় সিপিআই(এম) মালদহ জেলা কমিটির সম্পাদক অম্বর মিত্র মঙ্গলবার বলেন, ‘‘প্রশাসনিক স্তরে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র এটি। ভোট শেষ হয়েও হলো না। আরও কত কিছু বেরোবে। মমতা ব্যানার্জির শাসনে যেভাবে ভোট লুট হয়েছে, কারচুপি হয়েছে তার জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের জেলার ১৫টি ব্লকের বিডিও-রাই জেতা প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন। পরাজিত প্রার্থীদের বিজয়ী বলে ঘোষণা করেছেন। প্রশাসন, বিডিও জানতেন না এই ৩টি ব্যালট বাক্সের কথা? এদের নজিরবিহীন শাস্তি দিতে হবে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment