West Bengal student credit card

দেড় বছরে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডে ঋণ পেয়েছে মাত্র ১৭% আবেদনকারী

রাজ্য

West Bengal student credit card

আবেদনের মাত্র ১৭ শতাংশ পড়ুয়াকে পড়াশোনার জন্য ঋণ দিতে পেরেছে রাজ্য সরকার!
গত ২০২১ সালের জুন মাসে এই রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প চালু করেছিল রাজ্য সরকার। নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, পড়াশোনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মিলবে ঋণ। 

 


রাজ্যের এই ঋণ প্রকল্পের বেআব্রু চেহারা ফুটে উঠেছে স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির (এসএলবিসি) বৈঠকে। শুক্রবার এসএলবিসি’র সভার পর নবান্নে সাংবাদিকদের কাছে তৃণমূল সরকারের স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের ভয়াবহ ছবি তুলে ধরতে কার্যত বাধ্য হন রাজ্যের আর্থিক পরামর্শদাতা অমিত মিত্র। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের আবেদন খারিজ হওয়ার হার ব্যাপক। একইভাবে বহু আবেদন বকেয়া পড়ে থাকছে।’’ ছাত্র-ঋণ প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৭ হাজার ৯০০-র কিছু বেশি আবেদনকে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে। 


অথচ গত এক বছর ধরে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি পড়ুয়া সরকারের শিক্ষা দপ্তরের কাছে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য আবেদন করে বসে আছে। ফলে আবেদনের মাত্র ১৭ শতাংশ এখনও পর্যন্ত ঋণ পেয়েছে। রাজ্যের তরফে এদিন এসএলবিসি’র সভায় কেন ছাত্র-ঋণের আবেদন করলেও পড়ুয়ারা ঋণ পাচ্ছে না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অমিত মিত্র বলেন, ‘‘ঋণের সুদের মাত্র ৪ শতাংশ বোঝা বইতে হবে উপভোক্তাকে। বাকি সুদের ভার বহনের দায়িত্ব রাজ্য সরকার নিয়েছে। গত দু’বছর ধরে এসএলবিসি’র সভায় শুধু স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের ঋণ নিয়ে আলোচনা করে যেতে হয়েছে।’’

 


গত বছর ৩০ জুন প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৮ হাজারের মতো আবেদন মঞ্জুর করেছে ব্যাঙ্ক। তাতে সব মিলিয়ে ঋণ প্রাপ্তির পরিমাণ ১১০৫ কোটি টাকা। এদিন বৈঠকে রাজ্যের তরফে ব্যাঙ্কারদের বলা হয়েছে, এখনই ২১ হাজার আবেদন স্রেফ অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়ে আছে। আরও ২১ হাজার আবেদনে দু-একটি খুঁটিনাটি ভুলত্রুটির জন্য আটকে আছে। এদিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পড়ে থাকা স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের ঋণের আবেদন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করবে। একইভাবে ছোটোখাটো ভুলের জন্য যে ২১ হাজার আবেদন আটকে আছে, সেগুলি শুধরে নিয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ব্যাঙ্ক প্রশাসন ঋণের আবেদন অনুমোদন করবে। সাংবাদিক বৈঠকে এসএলবিসি’র বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে অমিত মিত্র অবশ্য গোটা দায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বৈঠকে ব্যাঙ্ক প্রশাসন যে আশ্বাস দিয়েছে, তার ভিত্তিতে এই সময়সীমা ঠিক হয়েছে।’’ ফলে আদৌ ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ৪২ হাজার আবেদন মঞ্জুর হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে রাজ্য সরকারেরই।


সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যে ৩৮ হাজার আবেদন ঋণের জন্য মঞ্জুর হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ বিদেশে পড়াশোনার জন্য। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘ব্যাঙ্কে যে আবেদন জমা পড়ছে, তার বেশিরভাগ আবেদন নিয়েই ব্যাঙ্কের তরফে আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। মাধ্যমিকে ন্যূনতম নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণদের ঋণের আবেদনে ব্যাঙ্ক সাড়া দিচ্ছে না।’’ জানা গিয়েছে, এদিন এসএলবিসি’র বৈঠকে অমিত মিত্র ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বারবার বুঝিয়েছেন, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের ঋণের গ্যারান্টার রাজ্য সরকার। ফলে ব্যাঙ্কের ঋণ দিতে অসুবিধা নেই। কিন্তু ব্যাঙ্ক প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘এই রাজ্য সরকার ৬ লক্ষ কোটি টাকা দেনায় ডুবে আছে। এই সরকারের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা কোথায়?’’

 


স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের থেকেও আরও ভয়াবহ অবস্থা রাজ্যের উইভার ক্রেডিট কার্ড ও আর্টিজেন ক্রেডিট কার্ডের ঋণ দান প্রকল্প। তন্তুবায় ও হস্তশিল্পীদের জন্য রাজ্যের এই দুই প্রকল্পই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের আবেদন খারিজের হার ৬৬ শতাংশ। কার্যত কোনও হস্তশিল্পী বা তন্তুবায় সরকারি কার্ড নিয়ে ঋণ পাননি। কেন ঋণ পাননি? এদিন বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতে হলে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক। রাজ্যের যুক্তি ছিল, সরকার ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে। তন্তুবায় ও হস্তশিল্পীদের শংসাপত্র দিচ্ছে। তারপরেও কেন ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া যাবে না? এদিনের বৈঠকে উইভার ক্রেডিট কার্ড ও আর্টিজেন ক্রেডিট কার্ডের ঋণ প্রাপ্তি নিয়ে কোনও ফয়সালা হয়নি। এখন কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment