এক কাশ্মীরি গবেষককে মারধরের অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠল আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ, রবিবার রাতে স্থানীয় একদল পড়ুয়ার হাতে আক্রান্ত হন ওই পিএইচডি গবেষক। এই ঘটনা সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কাশ্মীরি পড়ুয়ারা। যদিও এই ঘটনায় স্থানীয় পড়ুয়াদের হয়েই সাফাই দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কাশ্মীরি পড়ুয়াদের অভিযোগ, রবিবার রাত ১টা নাগাদ স্থানীয় আরেকদল পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের সামনে ব্যাডমিন্টন খেলছিল। খেলার মাঝে নিজেদের মধ্যে হট্টগোলও করছিলেন তাঁরা। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য পড়ুয়াদের ঘুমোতে এবং পড়তে অসুবিধা হচ্ছিল। এরই প্রতিবাদ করেন ইংরেজি সাহিত্যের এক পিএইচডি গবেষক। তিনি ওই যুবকদের বলেন, এত রাতে হইচই না করতে।
কাশ্মীরি পড়ুয়াদের অভিযোগ, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই পড়ুয়ারা। তাঁরা ওই কাশ্মীরি পিএইচডি গবেষককে গালাগাল দেন এবং তাঁর উপর চড়াও হন। এরপরে সোমবার সকালে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে এসে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের উপর ফের একবার আক্রমণ চালান ওই স্থানীয় ছাত্ররা।
প্রহৃত পিএইডি গবেষকের বক্তব্য, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু তাঁর অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়নি। এরপরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশ্মীরি পড়ুয়ারা।
বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে নানান অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশ্মীরি পড়ুয়াদের হেনস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগ জানানো হলেও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। তাঁরা রবিবার এবং সোমবারের ঘটনার দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তথা জম্মু কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল কনভেনর নাসির খুয়েহামি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রায় প্রতিদিনই হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রীদের। গত ১ মাসের মধ্যে ৩ জন কাশ্মীরি ছাত্রকে ক্যাম্পাসের মধ্যে মারধোর করা হয়েছে। একটি ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। প্রতি ক্ষেত্রেই দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কাশ্মীরি পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তাঁরা এই বিষয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন। এই মর্মে একটি ইমেলও মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এই বিষয়ে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে। দুই দল পড়ুয়ার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাঁদের সামনা সামনি বসিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
যদিও কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, তাঁরা কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।
এপ্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ ইউসুফ তারিগামী বলেন, প্রায়শই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও তাঁদের ভয় দেখানো হয়েছে বলে কাশ্মীরি পড়ুয়ারা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করা। সমস্ত কাশ্মীরি পড়ুয়ার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।
Comments :0