বিচার চাই আর জি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের। ধরতে হবে ধর্ষণ এবং খুনে জড়িত আসল অপরাধীদের। তদন্তের ভার এখন সিবিআই’র হাতে। মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টে। কিন্তু রাস্তাতেই থেকে বিচার নিশ্চিত করতে চাইছে বাংলা। শনিবারও রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন অংশ নেমেছেন মিছিলে।
আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় সেই দাবি নিয়ে উত্তাল হলো রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের প্রাক্তনীদের মিছিল। শিশু বাগান নজরুল মূর্তির সামনে থেকে জাতীয় পতাকা, প্লাকার্ড, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিলে পা মেলালেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা, অধ্যাপক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী সহ অগণিত ছাত্রছাত্রী।
আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় আসল অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় এবং প্রকৃত সত্য যাতে প্রকাশ হয় সেই দাবি তুলেই হয়েছে এই মিছিল। মিছিল শিশুবাগান, এতোয়াড়ি মোড়, বড়বাজার হয়ে নেতাজী মূর্তি অভিমুখে এগিয়ে চলতে চলতে দাবি করে নান্দুর থেকে আরজিকর হাসপাতালের বর্বরোচিত ঘটনার বিচার চাই। নান্দুরেও হত্যা করা হয়েছে এক ছাত্রীকে।
এই মিছিলে পা মিলিয়েছেন রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীও। তিনি বলেছেন, এখন সিবিআই’র হাতে মামলা। সিবিআই-কে সত্য সামনে আনতে হবে। ধামাচাপা দেওয়া চলবে না।
১৯টি স্কুল সহ ১১টি স্থানে নানান সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিল হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। শতশত মানুষের অংশ গ্রহণে প্রতিটি বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদী চেহারায় উত্তাল। দাবি উঠেছে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পুলিশ মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
ঘাটাল শহরে দুপুরে শিক্ষকদের ধিক্কার মিছিল সহ আর জি কর মেডিকেলে ঘটনার বিচার চাওয়া হয়। বিকালে ঘাটাল কলেজের প্রাক্তনীদের আহ্বানে প্রতিবাদ মিছিলে হাজার হাজার মানুষ শামিল হন। ঘাটাল শহরের রাজপথ বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে গিয়ে যানবাহন চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। শামিল হেন ঘাটাল কলেজের প্রাক্তনী বহু শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, নার্স সহ পুলিশ বিভাগে চাকরি করেন এমন অনেকে। এমনকি সরকারি দপ্তর সহ পঞ্চায়েত দপ্তরে চাকরি করেন, এমন অনেকে শামিল হন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ মিছিলের অনুমতি দেবে না বলেছিল। কে শোনে কার কথা। ছাত্র ছাত্রীরা এককাট্টা তারা জানিয়েছিল আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ করবে। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও যখন স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া যায়নি শেষমেশ স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করল ছাত্রছাত্রীরা। শনিবার এমন চিত্র ময়না থানার দক্ষিণ আনুখা মোক্ষদা বিদ্যাভবনের।
বিচার চেয়ে মিছিল হলো রায়গঞ্জে। হাজার হাজার মানুষ পুলিশের ঘেরাটোপকে উপেক্ষা করেও স্তব্ধ করে দেয় রায়গঞ্জ শহর। দ্বিতীয় দফার রাত জাগানো আন্দোলনের ঢেঊ।
রাত তখন সাড়ে ১০ টার কাছাকাছি, জমায়েত হলো রায়গঞ্জ শিলিগুড়ি মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে। সেখান থেকেই এগিয়ে চলে বিচারের দাবিতে মিছিল।
কালনা দু'নম্বর ব্লকে শনিবারই চার জায়গায় মহিলারা পৃথকভাবে মোমবাতি হাতে প্রতিবাদ মিছিল করেন। নাগরিক সমাজের উদ্যোগে বড় ধামাস গ্রাম পঞ্চায়েতের মাতিশ্বর বাজারে মহিলারা মোমবাতি হাতে প্রতিবাদ মিছিল করেন। দ্বিতীয় মিছিলটি হয় আনুখাল গ্রামে। বৈদ্যপুর থেকে গ্যারেজ এবং পিন্ডিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটপাতা গ্রামে হয় দু’টি মিছিল। মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল নজরকাড়া।
"উঠুক জ্বলে আলোর শিখা,বিচার পাবেই বহ্নি শিখা"- এই স্লোগান তুলে জন রোষের মিছিল এগিয়ে চলে আলিপুরদুয়ার নাগরিক মঞ্চের ডাকে। শনিবার এই মিছিলে বিশাল নাগরিক বৃন্দের জমায়েত হয়। মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ সহ আর জি করের চিকিৎসক খুনের প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির।
শনিবার কোচবিহার শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন কোচবিহার ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। এদিন কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে এই মিছিল কোচবিহার শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পরিক্রমা করে। ছিলেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্রীরাও।
শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামাঞ্চলে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। চম্পাসারি—পাথরঘাটা এরিয়া কমিটির অধীন খাপরাইল বাজার এলাকায় শনিবার বিকেলে প্রতিবাদ মিছিল করেন এলাকাবাসী।
এবিটিএ ও এবিপিটিএর আহ্বানে শনিবার বিকালে আর জি কর হাসপাতালের বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে বসিরহাট শহরে ধিক্কার মিছিল হয়। মিছিল ইটিন্ডা রোড ধরে বসিরহাট থানা পর্যন্ত যায়। এদিন বিকালে ধান্যকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের ডাকেও ধিক্কার মিছিল হয়।
Comments :0