ABPTA Rally

শিক্ষাকে ধ্বংস করতে চায় কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যও, উভয়কে হটাতে হবে

রাজ্য

ABPTA Rally

 

লব মুখার্জি: বিধাননগর 
 

কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতি আসলে শিক্ষার দায় অস্বীকার করার নীতি। শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের নীতি। রাজ্যের তৃণমূল সরকার ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’র নাম দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতিকেই অনুসরণ করছে। শুধুমাত্র অনুসরণ করেই খান্ত হয়নি, শিক্ষাকে ধ্বংস করতে তার চেয়েও বেশি খারাপ পথ নিয়েছে রাজ্যের সরকার। বৃহস্পতিবার নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (এবিপিটিএ)-র রাজ্য সমাবেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা সুজন চক্রবর্তী একথা বলেছেন। তিনি এদিন বলেন, সংবিধানের মর্মবস্তু খারিজ করতে উদ্যত মোদী সরকারের জনবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে লড়াই শুরু হয়েছে। পরাজয়ের ভয়ে বিজেপি’র পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের ভন্ডুল করতে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে পাঠানো হয়েছে মমতা ব্যানার্জিকে। বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই ছাড়া দেশ ও বাংলাকে রক্ষার কোনও পথ নেই। 
এদিন বিধাননগরে বিকাশ ভবনের কাছে ডাঃ বিধান রায়ের মূর্তির সামনে এই সমাবেশ হয়। করুণাময়ীতে সমবেত হয়ে রাজ্যের জেলাগুলি থেকে আসা প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরাট মিছিল সমাবেশস্থলে আসে। সেখান থেকে তিনটি প্রতিনিধি দল, শিক্ষামন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি এবং স্টেট প্রজেক্ট ডিরেক্টর, সমগ্র শিক্ষা অভিযান দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবিপিটিএ রাজ্য সভাপতি মোহন দাস পণ্ডিত। সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডল, ১২ই জুলাই কমিটির রাজ্যের যুগ্ম আহ্বায়ক সমীর ভট্টাচার্য, এআইফুকটো সর্বভারতীয় সভাপতি এবং রাজ্যের ওয়েবকুটা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কেশব ভট্টাচার্য। তিনটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার আগে এবং জমা দেওয়ার পরে দাবিগুলি ও আলোচনার ফলাফল তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন এবিপিটিএ’র কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব ঝা। নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে লেখা কৃষ্ণ রায়চৌধুরীর একটি পুস্তিকা সমাবেশ মঞ্চে প্রকাশ করেন সুজন চক্রবর্তী। বৃষ্টির মধ্যেও সমাবেশ ও মিছিলে বিরাট সংখ্যাতে অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানান সব বক্তাই।
সুজন চক্রবর্তী সমাবেশে বলেন, রাজ্যের নতুন শিক্ষানীতিতে পরিকাঠামো ছাড়াই অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে প্রি-প্রাইমারি শিক্ষাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা তুলে দিয়ে প্রাথমিক স্তরকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে। শুধু প্রাথমিক স্তরেই নয়, কলেজ স্তর পর্যন্ত শিক্ষার সার্বিক সর্বনাশ করা হচ্ছে। শিক্ষা দেওয়ার কাজ বাদ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য সব রকমের কাজে। ৮হাজারের বেশি  স্কুল বন্ধের তালিকাতে। ড্রপ-আউটদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা না করে নতুন শিক্ষানীতি স্কুল বন্ধ করে দিতে চাইছে।
সুজন চক্রবর্তী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যত বন্ধ স্কুল ততই তার জমি, বাড়ি, সম্পত্তি বিক্রি, লুটপাট করে ভাগ নিতে চায় সরকার। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ট্রেনের রুট বিক্রি করে, রাজ্যের তৃণমূল সরকার বাস ট্রামের রুট ও জমি বিক্রি করে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছুই রাখা হচ্ছে না। দেশের ও রাজ্যের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা ব্যানার্জির সরকার।
সুজন চক্রবর্তী বলেন, বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরোধিতার নাটক এখন ধরা পড়ে গেছে। নাটকের প্লট, রহস্য, রোমান্স এখন ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। রাজ্যের প্রয়োজনে দিল্লি যান না যে মুখ্যমন্ত্রী, তিনি দুই দিন আগে থেকে বেআইনি আমন্ত্রণ পত্রের নৈশভোজে হাজির থাকার জন্যে দিল্লি গিয়ে বসে থাকলেন। অমিত শাহ এবং যোগীর সাথে এক টেবিলে বসে ভোজ খেলেন। তৃণমূলের ভাবমূর্তি বজায় রেখে নাগপুরে আরএসএস হেডকোয়ার্টারকে বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রী এখন ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় বাংলা’র পাশাপাশি বলছেন ‘ভারত মাতা কি জয়’। 
প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিগুলির কথা উল্লেখ করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের হেলথ স্কিম থাকবে না কেন? এই প্রশ্ন তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রাথমিকে নতুনদের বেতন দেওয়া হচ্ছে পুরানোদের চেয়ে বেশি। সবটাই উলটোপালটা। ডিএ বন্ধ। সব রাজ্যের থেকে বাংলা ভালো বলা হচ্ছে, অথচ, অন্যান্য রাজ্যের মতো এরাজ্যে ডিএ দেওয়া হচ্ছে না। ডিএ দেওয়ার দাবি ঠেকানোর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে আদালতে যাওয়া হচ্ছে। যেসব আমলারা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাঁরা নিজেরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাচ্ছেন। মন্ত্রী, এমএলএ-দের চারগুণ বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর বিমান, হেলিকপ্টার, নিরাপত্তা বলয় সহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধার জন্য কোটি কোটি টাকার সরকারি খরচ হয়। অথচ উনি লজ্জাহীনভাবে বলেন, আমি তো বেতন নেই না। শিক্ষা, লেখাপড়ার সর্বনাশ করা হচ্ছে। নিয়োগ বন্ধ। সাড়ে ছয় লাখ সরকারি পদ শূন্য, শিক্ষাক্ষেত্রে সাড়ে তিন লাখ পদ শূন্য। দাবি করা হচ্ছে, নিয়োগে অস্বচ্ছতা চলবে না। চাকরি বিক্রি চলবে না। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন শুধুমাত্র মাইনের দাবিতে নয়, পশ্চিমবাংলাতে শিক্ষাকে পথে বসিয়েছে যারা প্রাথমিক শিক্ষকদের লড়াই তাদের বিরুদ্ধে।

Comments :0

Login to leave a comment