কার্বন নির্গমনে কর বসানোর দাবি উঠল আফ্রিকার জলবায়ু সম্মেলনে। কেনিয়ার রাজধানী নাইরবিতে শুরু হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলির জলবায়ু সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলন।
কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটো শীর্ষ ভাষণ দেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আফ্রিকার উন্নয়নের অনেকটাই লাগাতার খেয়ে নিচ্ছে জলবায়ু সংকট। কার্বন কর বসানো নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।’ শিল্পোন্নত পশ্চিমের দেশগুলিকে লক্ষ্য করে রুটো বলেছেন, ‘যারা বিষ মিশিয়ে চলেছে জলবায়ুতে তারা বরাবরই হিসেব চোকাতে অস্বীকার করে।’
শীর্ষ সম্মেলনের মুখবন্ধে বলা হয়েছে, আফ্রিকা মহাদেশের ১৩০ কোটি মানুষের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৫ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষয়ে যাচ্ছে জলবায়ু সঙ্কটের কারণে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে যার ফল ভুগতে হচ্ছে আফ্রিকাকে।
আফ্রিকায় ঋণভারে জর্জরিত ৩০টি দেশ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে খরা, বন্যার মতো দুর্যোগের শিকার হতে হচ্ছে। ফলে মার খাচ্ছে উৎপাদন। দেশে দেশে বাড়ছে পানীয় জলের সঙ্কটও। সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু দূত জন কেরি। আমেরিকার রীতি অনুযায়ী সম্মেলনে আলোচনায় তিনি স্বীকার করেছেন ‘অন্যায্য ঋণভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই দেশগুলির ওপর।’ কিন্তু বিশ্ষেজ্ঞরা মনে করিয়েছেন যে জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সমঝোতাকে লঘু করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমী দুনিয়া। নিজের দেশের কর্পোরেটদের স্বার্থে উন্নয়নশীল বিশ্বের ঘাড়ে ঠেলে দিতে থাকে জলবায়ু বান্ধব প্রযুক্তি কেনার দায়।
এই সম্মেলনেও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সরব হয়েছেন ‘জলবায়ু সহায়ক প্রযুক্তির জন্য অর্থের জোগান’ নিশ্চিত করার দাবিতে। তাঁরা মনে করিয়েছেন যে উষ্ণায়নের মূল দায় যাদের, সেই উন্নত বিশ্ব, বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার জলবায়ু সহায়ক প্রযুক্তির জন্য উন্নয়নশীল বিশ্বকে হস্তান্তর করতে রাজি হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি, হচ্ছে না।
বক্তারা মনে করিয়েছেন জলবায়ু বান্ধব প্রযুক্তির পথে চলার মতো প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব নেই আফ্রিকায়। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, যা দিয়ে পেট্রোল-ডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো যায়, বিশ্বে এমন শক্তির মোট উৎসের ৬০ শতাংশ আফ্রিকায়। কম কার্বন নির্গমনে দরকার খনিজের ৩০ শতাংশ রয়েছে এই মহাদেশেই। কিন্তু প্রযুক্তি গড়া এবং ব্যবহারে প্রয়োজন অর্থ।
আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সভাপতি আকিনউমি আদেসিনার মন্তব্য, ‘‘প্রাকৃতিক সম্পদে প্রাচুর্যময় এই মহাদেশ চিরকাল আর্থিক সঙ্কটে দীর্ণ থাকতে পারে না।’’
সম্মেলনে যদিও অংশ নেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা, কঙ্গোর মতো একাধিক দেশ।
Comments :0