CEREAL PRODUCTION PARADOX

জোগান আদৌ বাড়ছে খাদ্যশস্যের, ধাঁধা সরকারি হিসেবেই

জাতীয়

CEREAL PRODUCTION PARADOX

সরকারি হিসেব বলছে দু’বছরে ধানের উৎপাদন ১১.২ মিলিয়ন টন বেড়েছে। গমের উৎপাদন বেড়েছে ৩.২ মিলিয়ন টন। এক মিলিয়ন মানে ১০ লক্ষ। 

সরকারেরই হিসেব বলছে, শস্য সংগ্রহ কমেছে সরকারি স্তরে। বিশেষ করে গমে সরকারি সংগ্রহ অনেকটা নেমেছে। রপ্তানি এবং বেসরকারি মজুতে ঊর্ধ্বসীমা প্রয়োগেরও দাবি জানাচ্ছে সরকার। 

সরকারের দাবি মানলে রেশনের বাইরে খোলা বাজারে চাল এবং গমের জোগান বেশি হওয়ার কথা। কমার কথা দামও। অথচ কোলা বাজারে চড়চড়িয়ে বাড়ছে দুই প্রধান খাদ্যশস্যের দাম

সরকারি হিসেব এবং দামের তুলনা করে প্রশ্ন উঠছে আদৌ শস্য উৎপাদন বাড়ছে, নাকি সরকারি অঙ্ক অনেকটাই ভাঁড়ানো! উৎপাদন বাড়লেই জোগান খোলা বাজারে অনেক সময়ই বাড়ে না। সরকার রেশনের জন্য সংগ্রহ করতে পারে, বিদেশে রপ্তানি হতে পারে। আবার মাঝে মজুতদাররা জমাও করতে পারে। উৎপাদনের দাবি নিয়ে সরকারি হিসেবে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি একাংশের বক্তব্য দেশে মজুতদারিও দাম বৃদ্ধির বড় কারণ। 

জানুয়ারি থেকে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় উপভোক্তা পিছু মাসে ১০ কেজি শস্যের বরাদ্ধ ছেঁটে কেন্দ্র ফের ৫ কেজি’তে নামিয়ে এনেছে। বাড়তি ৫ কেজি কিনতে হচ্ছে খোলা বাজার থেকে। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের ক্রেতা বিষয়ক দপ্তরের তথ্য জানাচ্ছে খুচরো বাজারে, অর্থাৎ আমজনতার খোলা বাজারে, চালের দাম পড়ছে কেজিতে ৪০ টাকা। এক বছর আগেও যা ছিল ৩৫ টাকা। আর দু’বছর আগে ৩০ টাকায় মোটামুটি গড় দাম ছিল এক কেজি চালের। 

গমের দামও এই সময়েই কেজি’তে ২২ টাকা থেকে দু’বছরে হয়েছে ২৮ টাকা। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা উপভোক্তাদের বাড়তি ৫ কেজি চাল এখন এই চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে। 

‘ব্যাপক উৎপাদন’ এবং চড়তে থাকা দামের এই ধাঁধা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, উৎপাদনের হিসেব বাড়িয়ে না দেখালে এত তারতম্য হওয়ার কথা নয়। উৎপাদন লাফিয়ে বাড়ছে আর খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে রয়েছে লাগাতার!

খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির হার কেমন? ২০২২’র জানুয়ারিতে আগের বছরের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৪ শতাংশ। ২০২৩’র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেখচিত্র সমানে ঊর্ধ্বমুখী থেকে ছুঁয়েছে ১৬.৭৩ শতাংশের মাত্রা। ২০২৩’র জুলাইয়ে সামান্য কমে মূল্যবৃদ্ধির হার গত বছরের তুলনায় ১৩.০৪ শতাংশ।  

কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের কৃষি উৎপাদন বিভাগের তথ্য বলছে যে ২০২০-২১ কৃষিবর্ষে গমের উৎপাদন ছিল ১০৯৫.৮৬ লক্ষ টন। সরকারি সংগ্রহ ছিল ৪৩৩.৪৪ লক্ষ টন। রপ্তানি ৩১.৫৪ লক্ষ টন। দেশের খোলা বাজারে জোগান ছিল ৬৩০.৮৮ লক্ষ টন। ২০২২-২৩ কৃষিবর্ষে হিসেব অনুযায়ী, উৎপাদন ১১২৭.৪৩ লক্ষ টন। সরকারি সংগ্রহ ২৬২.০২ লক্ষ টন। রপ্তানি ১৩.৬৫ লক্ষ টন। বাজারে জোগান ৮৫১.৪৬ লক্ষ টন। মাঝে ২০২১-২২ কৃষি বর্ষে সরকারি সংগ্রহ কমে হয়েছিল ১৮৭.৯২ লক্ষ টন। 

চালের ক্ষেত্রে হিসেব হলো, ২০২০-২১ কৃষিবর্ষে উৎপাদন ১২৪৩.৬৮ লক্ষ টন। সরকারি সংগ্রহ ৬০২.৪৫ লক্ষ টন। রপ্তানি ১৯৭.৬২ লক্ষ টন। খোলা বাজারে জোগান ৪৪৩.৬১ লক্ষ টন। ২০২২-২৩ কৃষিবর্ষে হিসেব হলো, উৎপাদন ১৩৫৫.৪২ লক্ষ টন। সরকারি সংগ্রহ ৫৭০.৪৬ লক্ষ টন। এই হিসেব এখনও চূড়ান্ত নয় যদিও। রপ্তানি ২২১.০৩ লক্ষ টন। খোলা বাজারে জোগান ৫৬৩.৯৩ লক্ষ টন। 

খোলা বাজারে জোগানের এই যে অঙ্ক সরকারি খাতায় দেখানো হচ্ছে তা কতটা সত্যি প্রশ্ন তুলছে দামের বৃদ্ধি। জোগান সত্যিই বেড়ে থাকলে প্রশ্ন আরও গুরুতর। জনতাকে চড়া দামে খাদ্য জোটাতে হচ্ছে। বিশ্বময় প্রভাব বিস্তারের দাবি জানানো নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না।    

Comments :0

Login to leave a comment