ভিএইচপি-বজরং দলের মিছিল ঘিরে হিংসায় যখন হরিয়ানা জ্বলছে, হিংসার আঁচ এসে পড়েছে রাজধানী লাগোয়া গুরগাঁওতেও, তখনই সুপ্রিম কোর্টের নজিরবিহীন পদক্ষেপে হয়তো হিংসার আগুন খানিকটা থমকে গেল দিল্লির দোরগোড়ায়। বুধবার আদালতের নির্দেশে রাজধানী দিল্লির নিরাপত্তা এক লহমায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হলো দিল্লি পুলিশ। পরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিল্লির কিছু জায়গায় ভিএইচপি-বজরং দল ‘শান্তিপূর্ণ’ মিছিল করলেও রাত পর্যন্ত সেসব জায়গায় হিংসা ছড়ানোর কোনও খবর নেই।
হরিয়ানার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার দিল্লির ২৩ জায়গায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল ভিএইচপি-বজরং দল। নতুন করে হিংসা ছড়ানোর আশঙ্কায় সেই মিছিল আটকানোর বেশ কিছু আরজি জমা পড়েছিল আদালতে। এমন মিছিল বন্ধ রেখে রাজধানীতে শান্তি বজায় রাখার আরজি আসে সিপিআই(এম) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফেও। তড়িঘড়ি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ চেয়ে দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেয় সিপিআই(এম) দিল্লি রাজ্য কমিটি। একইসঙ্গে শান্তি বজায় রাখা ও বিভাজনের রাজনীতিকে রুখে দিতে জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানিয়েছিল সিপিআই(এম)।
সুপ্রিম কোর্ট এদিন তেমনই একটি মামলায় দিল্লি পুলিশ অবিলম্বে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি এস ভি ভাট্টিকে নিয়ে তড়িঘড়ি গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলির মিছিলে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দেয়। আদালত বলে, ‘আশা করব, সরকার পুলিশ প্রশাসন কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেই যাতে কোনও ঘৃণা ভাষণ না হয় তা নিশ্চিত করবে। কোনও হিংসাও হবে না কিংবা কোনও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিও হবে না। যেখানেই দরকার লাগবে, পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী বা আধা সমারিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’ কেন্দ্রের তরফে এদিন আদালতে সওয়ালকারী অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এস ভি রাজুকে নির্দেশ দেওয়া হয়, কোথাও যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে তা নিশ্চিত করে তৎক্ষণাৎ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার। রাজু আদালতের কাছে এর জন্য সময় চেয়ে নেন।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে ৩৭০ ধারা নিয়ে শুনানি চলছিল। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব আন্দাজ করে খোদ প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সেই শুনানি থামিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাঙ্গামা এড়ানোর এই মামলার শুনানির ব্যবস্থা করতে। তড়িঘড়ি বিষয়টি আদালতে তুলতে তিনি বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি এস ভি ভাট্টিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করে। ঠিক হয় দুপুর দুটোয় এর শুনানি হবে। সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাই এই মামলায় হাজির ছিলেন। এই মামলার শুনানি শেষ করে বেলা সওয়া দুটোয় তিনি ফের গিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চে গিয়ে বসেন। বেলা ২টো ২০-তে ফের সেখানে শুরু হয় ৩৭০ ধারা বাতিল সংক্রান্ত মামলার।
শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালতে ফের বিষয়টির শুনানি হবে।
এদিন শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশের ফলে গোটা রাজধানীকে মুড়ে ফেলা কড়া নিরাপত্তায়। স্পর্শকাতর জায়গাগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সিটিটিভি ক্যামেরায় চলে নজরদারি। একইসঙ্গে সোশাল মিডিয়াতে রাখা হয় কড়া নজরদারি। বেশ কিছু জায়গায় ট্রাফিক চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ভিএইচপি-বজরঙ দলের মিছিল বেরোলেও সেখান থেকে যাতে উসকানি ছড়ানো না হয় তার উপরও ছিল কড়া নজর। সবমিলিয়ে এদিন সুপ্রিম কোর্টের গোঁতায় দিল্লি পুলিশের তৎপরতায় এদিন আর দিল্লিতে ‘কিছুই ঘটেনি’। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল দিল্লিবাসী। তাঁরা বলছেন, এদিন সুপ্রিম কোর্ট আরেকবার প্রমাণ করে দিল, প্রশাসন চাইলে দাঙ্গাও আটকানো যায়।
Comments :0