Ssc scam

সিবিআই’র ‘স্পিন বলে’ ক্ষুব্ধ আদালত চায় ‘স্পিড বল’

রাজ্য

 ‘নিয়োগ দুর্নীতিতে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে এখনও পর্যন্ত তাঁরা টাকা তুলেছে তা জানা গেছে। কিন্তু তাঁরা কাকে টাকা দিলেন, কোথায় দিলেন তাই তো এখনও পর্যন্ত সামনে আনতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থা। বাকি যাঁদের নাম আছে, তাঁদের ধরা হচ্ছে না কেন? কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?’ নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্তের গতি নিয়ে ফের আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই।
আলিপুরে সিবিআই’র বিশেষ আদালতে বিচারক তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীকে রীতিমতো প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে বলেন, তদন্তের গতি নিয়ে আমি হতাশ। যাদের ধরা হলো তারপরে আর তদন্তের কী হলো? তদন্তের বৃত্তটা তো সম্পূর্ণ করতে হবে। যাদের কোর্টে তোলা হচ্ছে তাঁরা তো সরকারি আধিকারিক নয়। এই দুর্নীতি তো সরকারি আধিকারিকদের যোগ ছাড়া হতে পারে না। ফলে বৃত্তটা সম্পূর্ণ করুন দ্রুত’। শুধু তাই নয় রীতিমতো সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিচারক জানিয়েছেন, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি সিবিআই’কে আদালতে জানাতে হবে। অর্থাৎ ২১দিনের সময়সীমা! ২১ দিন পরেই চার্জশিট পেশের ৯০দিনের সময়সীমা শেষ হবে। ফলে ওই একুশ দিনের মধ্যেই তদন্তের অগ্রগতির কথা আদালতকে জানাতে সিবিআইকে নির্দেশ দেন বিচারক। 
শনিবার ফের আলিপুর আদালতে তোলা হয় নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষ, শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল এবং নিয়োগকাণ্ডে ধৃত বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ আধিকারিক নীলাদ্রি দাসকে আদালতে তোলা হয়েছিল। তাঁদের জামিন খারিজ করে তদন্তের স্বার্থে জেল হেপাজতে রাখার আবেদন জানায় সিবিআই। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আলিপুরে সিবিআই আদালতের বিচারক বলেন— কুন্তল, নীলাদ্রি, তাপস মণ্ডলদের তো গ্রেপ্তার করা হলো। তারপরে কতদূর অগ্রগতি হলো? তারপরে কী এগলো তদন্ত? তারা তো টাকা তুলেছে। তাঁরা কাদের টাকা দিয়েছে। সেই যোগের তদন্ত কী হলো?  শুধু আবেদন আর আবেদন! আমি কি আপনাদের প্রোটেক্ট করার জন্য আছি? সিবিআই’র আইনজীবী তখন বলেন, চারটে কেস দেখা যাচ্ছে যেখানে টাকা নেওয়া হয়েছে। বিচারক বলেন, একটা পরিবারে ৪জন খুন হলে, সেই তদন্তে অন্য কিছু দেখবেন না?  বাকি যাদের নাম আছে, তাঁদের ধরা হচ্ছে না কেন? কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না! বৃত্ত সম্পূর্ণ করুন। তার জন্য যা প্রয়োজন করুন। 
সিবিআই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যে গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছ তাতে এই প্রথম নয় এর আগেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আলিপুর আদালতের বিচারক। এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআই’র উদ্দেশ্যে বিচারক বলেছিলেন ‘টাকা যাদের কাছে গিয়েছে, তাঁদের থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে কি? আর কতদিন স্পিন বল করবেন। ওঁকে (তদন্তকারী আধিকারিক) বলুন স্পিড বল করতে। ওয়াসিম আক্রম স্পিড বলই করতেন। যাদের টাকা দেওয়া হয়েছে তাদেরও সামনে আনা হোক দ্রুত’।
নিয়োগকাণ্ডেই ধৃত কুন্তল ঘোষ একাই ৫০০ কোটি টাকা তুলেছে বলে আদালত চত্বরেই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন ধৃত শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে এই শিক্ষা ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছিলেন চাকরি দেওয়ার নামে যে বিপুল টাকা তোলা হয়েছিল, তা থেকে কালীঘাটের কাকুকে টাকা পাঠাতে হতো বলে খোদ কুন্তল ঘোষ তাঁকে জানিয়েছিল। কালীঘাটের কাকু ওরফে অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ, তাঁর অফিসেই কর্মরত সুজয় ভদ্র। এই ব্যক্তিকে একবার তলবও করেছিল সিবিআই, যদিও তারপরে আর অগ্রগতি নেই সেই তদন্তের।
এদিকে এদিনই ফের আদালতে তোলা হয় নিয়োগ কেলেঙ্কারিতেই ধৃত মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহাকে। সিবিআই’র তরফে এদিন আদালতে জানানো হয়, দুদিন ধরে পুকুরের জল তুলে, জেসিবি লাগিয়ে তল্লাশি চালানোর পরে যে মোবাইল উদ্ধার হয়েছিল তাতে ইতিমধ্যেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। দ্বিতীয়  ফোন থেকেই একাধিক তথ্য মিলেছে যাতে টাকা পয়সার লেনদেনের স্পষ্ট আভাস রয়েছে। এর আগেরদিনই আদালতে সিবিআই’র তরফে জানানো হয় বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের ফোন থেকে ১০০টিরও বেশি অডিও ফাইল উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার সিবিআই’র আরজিও মঞ্জুর হয়েছে। সিবিআই’র তরফে এদিন আদালতে জানানো হয়, বাড়ি চত্বরেই রীতিমতো অফিস খুলে দুর্নীতি চালাতেন এই বিধায়ক। সেই অফিসেই আসতেন নিয়োগপ্রার্থীরা, সেখানেই টাকা পয়সা জমা দেওয়া হতো, রীতিমতো অফিস খুলে প্রকাশ্যে চলেছে এই নিয়োগ দুর্নীতি, সেই তথ্য প্রমাণও রয়েছে। বিধায়কের জামিনের আবেদন খারিজ করে আগামী ১১ মে পর্যন্ত জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
 

Comments :0

Login to leave a comment