PURBA MEDINIPUR GROUND REPORT

সিপিআই(এম) আছে, লড়াইয়েই আছে, দেখছে জনতা

রাজ্য জেলা

CPIM LEFT FRONT WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION TMC CORRUPTION

রামশঙ্কর চক্রবর্তী এবং অনিন্দ্য হাজরা 

 

২০১১’র ঢের আগে, ২০০৬ সাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূলী তান্ডবের মুখোমুখি হতে হয় বামপন্থীদের। সেই সন্ত্রাস সবথেকে বেশি তীব্র হয় নন্দীগ্রাম এবং খেজুরি’র ৪টি ব্লকে। নন্দীগ্রামের কালীচরণপুর, গড়চক্রবেড়িয়া- তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একের পর এক জনপদ সেই সময় পরিচিতি পায় তৃণমূল-মাওবাদী জোট বাহিনীর মুক্তাঞ্চল হিসেবে। 

২০০৬-০৭ সালের অস্থিরতাকে পুঁজি করে ২০০৮’র পঞ্চায়েতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বহু পঞ্চায়েতে জয়ী হয় তৃণমূল। জেলা পরিষদেও জেতে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ প্রার্থীরা। 

অবিভক্ত মেদিনীপুর যদিও বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের ওপর তৃণমূল কংগ্রেসের মারাত্মক আক্রমণ দেখেছে তার আগেই। পাঁশকুড়া লাইনের নামে সংবাদমাধ্যমের বড় অংশের সহায়তায় চলেছে সে সময়ে নির্বাচিত বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্ত।

দীঘা, হলদি দিয়ে তারপর বহু জল গড়িয়েছে। দুই মেদিনীপুরকে লালঝান্ডা মুক্ত করার কথা ঘোষণা করে নিজেই ঘাসফুলের ঝান্ডা ত্যাগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ভগবানপুর, কাঁথি, পটাশপুর, হলদিয়া- পূর্ব মেদিনীপুরে তাঁর একের পর এক সেনাপতিরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কখনও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে, আবার কখনও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার মরিয়া চেষ্টায় দিন কাটাচ্ছেন। কাঁথি শহরের রাজনীতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা মানুষজনের বক্তব্য অনুযায়ী, কাঁথির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণও অধিকারী পরিবারের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৭টি আসনে। বর্তমানে প্রতিটি আসনেই নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে তাঁরা। আর রয়েছে বলেই শুভেন্দু অধিকারীকে ‘হিন্দু বামপন্থী’ ভোটের তত্ত্ব সামনে আনতে হচ্ছে। 

এই অবস্থায় কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন বামপন্থীরা? জেলার বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরে মোট বুথের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া গ্রামীণ পদযাত্রা  ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে ৯০ শতাংশেরও বেশি বুথে। জেলায় ব্লকের সংখ্যা ২৫। লালঝান্ডার নেতৃত্বে ৯০ শতাংশ ব্লকেই বিডিও অফিস অভিযান সংগঠিত করেছেন সাধারণ মানুষ। কাঁথির ভাজাচাউলি থেকে শুরু করে মুগবেড়িয়ার ইটাবেড়িয়া- বহু জায়গায় তৃণমূলী হামলায় সর্বস্বান্ত হওয়া পরিবারগুলির সদস্যরা অংশ নিয়েছেন পদযাত্রায়। 

লালঝান্ডার এই সক্রিয়তায় স্বাভাবিক ভাবেই সমস্যায় পড়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই। এই জেলায় ২০১৬ পরবর্তী সময়কালে তৃণমূল এবং বিজেপি ভোট ভাগাভাগির রাজনীতি করে এসেছে। বামপন্থীদের গায়ের জোরে এলাকা ছাড়া করার সুবিধা ভোগ করেছে দুই পক্ষই। কিন্তু কাঁথি,তমলুক, হলদিয়া, দীঘা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা- সমস্ত জায়গাতে লালঝান্ডা নতুন উদ্যোমে উড়তে শুরু করায় ‘সিপিএম নেই তাই ভোটটা আমাদের দিও’ তত্ত্ব মার খেতে শুরু করেছে। আর শুরু করেছে বলেই শুরু হয়েছে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। অর্থাৎ ইঙ্গিত স্পষ্ট, ২০২৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচন আর যাই হোক, একতরফা হবে না। 

Comments :0

Login to leave a comment