ELECTORAL BOND

নির্বাচনী বন্ডের তথ্য কমিশনের কাছে দিতে হলো স্টেট ব্যাঙ্ককে

জাতীয়

electoral bond sbi

 

কোন দল কার থেকে নির্বাচনী বন্ডে কত টাকা নিয়ে , জমা পড়ল সেই তথ্য। মঙ্গলবার রাতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে তাদের হাতে তথ্য এসেছে।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ১১ মার্চের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তরফে আজ, অর্থাৎ ১২ মার্চ, ২০২৪,আমাদের হেফাজতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

স্টেট ব্যাঙ্কের গড়িমসির চেষ্টায় এদিন বকেলেও খেদ জানান সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। আদতে সুপ্রিম কোর্ট ৬ মার্চের মধ্যে তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরনোর মাত্র আটল্লিশ ঘন্টা আগে স্টেট ব্যাঙ্ক সুপ্রিম কোর্টে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চায়। তার আগেই লোকসভা ভোট হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সোমবার সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ককে ১২ মার্চের মদ্যে নির্বাচন কমিশনকে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার আগেই স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তেপক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন সিপিআি(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

বিকেলে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘নির্বাচনী বন্ডকে ঘিরে মোদী সরকারের গোপনীয়তা রক্ষার মরিয়া চেষ্টা বিপদের আশঙ্কা বয়ে আনছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জমা দিতে হবে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে। কিন্তু দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর স্বচ্ছতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়ে, এসবিআই চেষ্টা করেছে, যতদূর সম্ভব সেই সময়সীমাকে লঙ্ঘন করা যায়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। ’’

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরে এসবিআই’র তরফে নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে বলে খবর মিলেছে। তার প্রেক্ষিতে এমনটাই জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। 

ইয়েচুরি বলেন, ‘‘তিন দিনের কাউন্টডাউন শুরু হল।’’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, ১৫ মার্চ বিকেল পাঁচটার মধ্যে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ড চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর থেকে ৩০ দফায় এই বন্ডের মাধ্যমে ১৬,৫১৮ কোটি টাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সহায়তা হিসেবে দিয়েছে কর্পোরেট সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা। সবটাই হয়েছে গোপনীয়তার মোড়কে। 

১৫ ফেব্রুয়ারি সেই গোপনীয়তার মোড়ককে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে নির্বাচনী বন্ডকে বাতিল ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে ৫ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দাতাদের পরিচয় প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। 

এসবিআই’র তরফে আদালতে আবেদন জানানো হয়, সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ জুন করার জন্য। সেই আবেদন সোমবার খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট বলে, মঙ্গলবারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্য পাঠাতেই হবে এসবিআই’কে। নইলে দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাঙ্কের শীর্ষ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবে আদালত অবমাননার দায়ে মামলা করা হবে। 

প্রসঙ্গত, এসবিআই’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করে সিপিআই(এম)। সিপিআই(এম)’র যুক্তি ছিল, আদালত ৫ মার্চের মধ্যে তথ্য হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও, এসবিআই সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করেছে। এসবিআই’র সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন এবং সিপিআই(এম)’র আবেদন, দুটি মামলার শুনানি হয় সোমবার। 

এসবিআই’র কর্মকান্ডকে শিশুদের মত সময় নষ্টের হাস্যকর চেষ্টা বলে তীব্র কটাক্ষ করেন প্রাক্তন ফাইন্যান্স সেক্রেটারি এসসি গর্গ। তিনি বলেন, ‘‘এসবিআই’র তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, তাঁরা কোন বন্ড ক্রেতা কোন রাজনৈতিক দলকে সহায়তা করেছেন, সেই তথ্য এক জায়গায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তো এই কাজ করতেই বলেনি।’’

গর্গ বলেন,‘‘এই জাতীয় বন্ডের কোনও ক্রমিক সংখ্যা কিংবা অন্যান্য কোনও পরিচয়সূক তথ্য থাকেনা। তাই বন্ডের ক্রেতা কোন দলকে কত সহায়তা করেছেন, সেই তথ্য এসবিআই’র কাছে থাকা অসম্ভব।’’

বিজেপির তরফে রাজনৈতিক দলগুলিকে নগদে আর্থিক সহায়তার বিকল্প হিসেবে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করা হয়। এই বন্ডের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে আর্থিক সহায়তা করার কথা বলে কেন্দ্র। এবং সহায়তার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধসীমা না থাকায় এই বন্ড একগুচ্ছ বিতর্কের জন্ম দেয়। অভিযোগ ওঠে, ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় শাসকদলকে বিপুল সহায়তা করছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি।

বিরোধীদের দাবি ছিল, সাধারণ মানুষের জানা উচিত, রাজনৈতিক দলগুলিকে কারা আর্থিক সহায়তা করছে। 

 

Comments :0

Login to leave a comment