Abhishek banerjee

ইডি’র চার্জশিটে জড়িয়ে গেল অভিষেকের নামও

রাজ্য

কয়লা পাচারেরকাণ্ডের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইতিমধ্যেই জেরার মুখে পড়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি। এবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের চার্জশিটেও এল তাঁর প্রসঙ্গ! এই প্রথম নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আদালতে জমা পড়া নথিতে অভিষেক ব্যানার্জির নাম এল। একইসঙ্গে সামনে এল অভিষক ব্যানার্জির সঙ্গে নিয়োগকাণ্ডে ধৃত অন্যতম মাথা মানিক ভট্টাচার্যের যোগও! 
শুক্রবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র তরফে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আরও একটি অতিরিক্ত চার্জশিট দায়ের করা হয়েছে। নিয়োগকাণ্ডেই ধৃত অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র বিরুদ্ধে এই চার্জশিট দায়ের করা হয়। মোট ১২৬ পাতার চার্জশিট। তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও নথি সহ সাত হাজারের বেশি পাতা যুক্ত করেছে ইডি। 
এই অতিরিক্ত চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতায় রয়েছে অভিষেক ব্যানার্জির নাম। তবে অভিযুক্ত হিসাবে নয়। চার্জশিটে ইডি ওই ৭৫ নম্বর পাতায় উল্লেখ করেছে, ‘সুজয় ভদ্র সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জির আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করতেন। সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। সুজয় ভদ্র তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অফিসেও নিয়মিত যাতায়াত করতেন। মূলত অভিষেক ব্যানার্জির হয়ে বার্তা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি।’ অর্থাৎ এই প্রথম ইডি’র চার্জশিটে শুধু কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে নয়, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতিতে মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জির সম্পর্কের কথাও সামনে আনা হলো। 
২০১৪’র প্রাইমারি টেটের ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা যা কুন্তল ঘোষ পাঠিয়েছিলেন সুজয় ভদ্রের কাছে, তিনি কার নির্দেশে সেই তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠিয়েছিলেন? ৩২৫ জনের মধ্যেই একাধিক খালি খাতা জমা দিয়েছিলেন। তাঁদেরই পাশ করিয়ে দেওয়া এবং পরবর্তী নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কুন্তল ঘোষ ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন। ৩২৫ জনের সেই তালিকা এরপর মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠান সুজয় ভদ্র। এখানেই ইডি প্রশ্ন তুলছে সুজয় ভদ্র কোনোরকম সরকারি বা দলীয় পদে না থাকলেও মানিক ভট্টাচার্যকে কীভাবে ৩২৫ জন অযোগ্যের তালিকা পাঠিয়ে সুপারিশ করেন? তাহলে উনি কী কারো হয়ে এই সুপারিশ করেছেন? কে সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি যার সুপারিশ কালীঘাটের কাকু পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হয়ে উঠতেন মানিক ভট্টাচার্য?
চার্জশিটে ইডি’র বক্তব্য, অভিষেক ব্যানার্জির বার্তাবাহক হয়েই মানিক ভট্টাচার্যের অফিসে যেতেন সুজয় ভদ্র। তিনি অভিষেক ব্যানার্জির বার্তা পৌঁছে দিতেই ওখানে যেতেন। কুন্তল ঘোষ বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে যে ৩২৫ জনের প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছিলেন তা কি অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল কলীঘাটের কাকুর কাছে? কাকু সেই তালিকাই মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জির ‘বার্তাবাহক’ হয়ে? 
এর আগে ইডি জানিয়েছিল, কাকুর যে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল তার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট উদ্ধার করা গিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সুজয় ভদ্রের মোবাইল থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে ২০১৪’র টেটের একাধিক প্রার্থীর নাম, মাকর্শিট সহ তালিকা পাঠানো হয়েছিল। ২০১৮ সালের আগে থেকেই মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগ ছিল কালীঘাটের কাকুর। একই সঙ্গে চার্জশিটে ইডি’র দাবি, কুন্তল ঘোষ কালীঘাটের কাকুর কাছে ঐ অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেবার সুপারিশ করেছিলে। যা টাকার বিনিময়েই করেছিলেন সুজয় ভদ্র এবং সুজয় ভদ্র মানিক ভট্টাচার্যের মারফত সে ব্যবস্থা করেছিলেন। গোটা ঘটনাপরম্পরা বলছে এই প্রক্রিয়ায় অভিষেক ব্যানার্জি গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি রয়েছে। একইসঙ্গে চার্জশিটে ইডি’র অভিযোগ, অপরাধীর মনোভাব থেকেই সমস্ত তথ্য, প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা চালিয়েছিলেন কালীঘাটের কাকু। তাহলে কাকে আড়াল করতে? উঠছে প্রশ্ন। 
গত ৩০ মে কালীঘাটের কাকুকে গ্রেপ্তার করে ইডি। অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’র ডিরেক্টর থাকা এই সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র বর্তমানে তিনটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তার মধ্যে একটি সংস্থা আবার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু হতেই গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন কালীঘাটের কাকু। কালীঘাটের কাকুর ১১টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশও মিলেছেন। গ্রেপ্তারি ৫৯দিনের মাথায় এদিন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সুজয় ভদ্রের বিরুদ্ধ চার্জশিট জমা দিল ইডি।

 

Comments :0

Login to leave a comment