Accused manu still missing

জখম দুই যুবককে বাঁচায়নি পুলিশ, স্বীকারোক্তি আততায়ীর

জাতীয়

 শুধু জুনেইদ-নাসির নয়। বজরঙ দলের নেতা হরিয়ানার স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনীর অন্যতম মূল পাণ্ডা মনু মানেসারের বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার হিংসা ছড়ানোর, খুনের অভিযোগ উঠেছে। নিজের ফেসবুক পেজে, ইউটিউবে হিংসাত্মক ভিডিও, ছবি ‘শেয়ার’ করলেও তাকে বিজেপি সরকারের পুলিশ বারবারই রেহাই দিয়েছে। ফেব্রুয়ারির সাত তারিখও গুরগাঁওয়ের পতৌদি থানায় মনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরই মনু আর তার দলবল মিলে জুনেইদ, নাসিরের উপর হামলা চালায়। তাদের খুন করে। এরই মধ্যে জুনেইদদের গ্রাম ঘাটমিকার আরেক বাসিন্দা ওয়াসিরকেও একই গুজব ছড়িয়ে খুন করে দেয় মনুরা। শনিবার রাত পর্যন্তও মনুকে গ্রেপ্তার করেনি রাজস্থান বা হরিয়ানা, কোনও পুলিশই। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ মনুদের মাথার উপর ছাতা হয়ে থাকার জন্যই যে তাদের এত রমরমা এবং পরপর খুন করলেও কোনও সাজা নেই, বুঝতে পারছেন গ্রামবাসীরাও। তবে নিহতদের পরিবারের এফআইআর-এ মনুর নাম থাকায় রাজস্থান পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। হরিয়ানার পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, তারাও মনুর সন্ধানে রয়েছে। মনুর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

 
জুনেইদদের খুনে তার নাম উঠে আসার পর মনু সোসাল মিডিয়ায় ভিডিও করে জানিয়ে দেয়, ঘটনার দিন সে ও তার দলবল একটি হোটেলে ছিল। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজও দিয়ে দেওয়া হয় যাতে, কোনওভাবেই দোষ তার ঘাড়ে না পড়ে। তবে হরিয়ানাজুড়ে বিশেষ করে জুনেইদদের গ্রাম ঘাটমিকায় মনুর বিরুদ্ধেই বারবার অভিযোগ উঠেছে, তার নেতৃত্বে স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী একের পর এক খুন করে চলেছে। মনুর ফেসবুক পেজ, ইউটিউবে লক্ষ-লক্ষ ‘ফলোয়ার’। নিজেদের হিংস্র তাণ্ডবের ছবি-ভিডিও’ও ‘পাবলিক’ করা রয়েছে সেখানে। তবু মনু গ্রেপ্তার হয়নি। সোসাল মিডিয়ায় ‘অ্যাক্টিভ’ মনুকে গ্রেপ্তার করতে যে পুলিশের বিশেষ কষ্ট করতে হতো না, তা বলাই বাহুল্য। 
গোরু পাচারের মিথ্যা অভিযোগ তুলে মুসলিম যুবকদের পিটিয়ে খুন করে মনু ও তার দলবল। রাজস্থানের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ধৃত রিঙ্কু সাইনি রাজস্থান পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে এবং বিশদ জানিয়েছে। সাইনি জানিয়েছে, দুই যুবককে মারধর করার পরে তারা তাঁদের হরিয়ানার ফিরোজপুর ঝিরকা থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু প্রায় অর্ধমৃত দেখে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণবাদেই নাসির ও জুনেইদ মারা যায়। গোরক্ষক বাহিনী ঘাবড়ে যায়। তখন তারা অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে কীভাবে দেহদুটি ফেলে দেওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত ঠিক করে বোলেরো গাড়িতেই তাদের ২০০ কিলোমিটার দূরে ভিওয়ানিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেইভাবে নিয়ে যায়। ভোর হবার আগে গাড়িসুদ্ধু জ্বালিয়ে দেয়। সাইনি জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে এতদূরে গাড়ি জ্বালানোয় তারা ভেবেছিল কেউ টের পাবে না। কিন্তু পুলিশ গাড়ির চেসিস নম্বর দেখে শনাক্ত করে। গোটা ঘটনার পিছনে মনুর পরিকল্পনা কাজ করেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। পেশায় অটোচালক বছর ৩২’র সাইনিকে রাজস্থানের একটি আদালত এদিন পুলিশ হেপাজতে পাঠিয়েছে।
কয়েকদিন আগে একইভাবে ওয়ারিস নামে ওই গ্রামেরই আরেক ব্যক্তিকে খুন করে মনুরা। তখন পুলিশ দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে দায় এড়িয়ে যায়। আড়াল করে দেয় মনুদের। এবারও সেই একই ছক চলছিল শুরু থেকে। কিন্তু জুনেইদ ও নাসিরের পরিবার এফআইআর দায়ের করে মনু এবং আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে।  


প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মনু মানেসারের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দাপট বেড়েছে। স্বঘোষিত গোরক্ষক হয়ে উঠেছে তারা। হরিয়ানায় গোবংশ সংরক্ষণ এবং গোসংবর্ধন আইন প্রয়োগ হওয়ার পর এই তাণ্ডব আরও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে বুক ফুলিয়ে দাবি করেছেন, ‘‘কাশ্মীরে, উত্তর-পূর্ব ভারতে উগ্রপন্থার পাশাপাশি মাওবাদী কার্যকলাপ মোদী সরকারের আমলে ৮০ শতাংশ কমেছে দেশে।’’ বাস্তব পরিসংখ্যান অবশ্য সে কথা বলে না। কিন্তু স্বঘোষিত গোরক্ষকদের তাণ্ডব যে এই সময়কালে চড়চড় করে বেড়েছে, সংখ্যালঘুদের পিটিয়ে খুনের রেওয়াজ নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে নিয়ে কোনও মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই শোনা যায়নি। 
অন্যদিকে, সারা ভারত কিষান সভা এদিন এক বিবৃতিতে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, ‘‘২০১৭ সালে পেহলু খান, উমর মহম্মদ, ২০১৮’তে রাকবর খান, এখন জুনেইদ আর নাসির। খুন হয়ে যাওয়া প্রত্যেকেই দুগ্ধ চাষি। গোরু পাচারের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্কই নেই। রাজস্থান এবং হরিয়ানার মধ্যে গোরু পরিবহণ খুব সাধারণ একটা বিষয়। জীবনজীবিকা নির্বাহ করেন এর মাধ্যমে অনেকে। বিজেপি’র বিভেদের রাজনীতির ফল এগুলো। বজরঙ দল, ভিএইচপি, গোরক্ষক বাহিনী সক্রিয়ভাবে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়াচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment