Assam violence

বুলডোজার রুখতে গুয়াহাটিতেই অর্ধনগ্ন প্রতিবাদ

জাতীয়

বিজেপি’র বুলডোজার ঠেকাতে এবার অর্ধনগ্ন হয়ে প্রতিবাদ দেখালেন মহিলারা। এ যেন আসামে আরও এক  মণিপুর! ১৯ বছর আগের মণিপুরের দৃশ্যই শুক্রবার ফিরে এল  আসামে। সেনা জওয়ানদের ধর্ষণ-অত্যাচারের প্রতিবাদে সেবার ইম্ফলে নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ দেখিয়েছিলেন মণিপুরের মায়েরা। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সেদিনের ঘটনা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। আর আজ আাসমের রাজধানী গুয়াহাটিতে বুলডোজার রুখতে অর্ধনগ্ন প্রতিবাদ দেখালেন আসামের মায়েরা। 
এদিন গুয়াহাটির কাছেই শিলসাঁকো বিল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ জোরজবরদস্তি শুরু করলে কয়েকজন মহিলা নিজের পোশাক ছিঁড়ে পুলিশের সামনে বিক্ষোভ দেখান। এই ঘটনায় উনিশ বছর আগের  মণিপুরের এক প্রতিবাদী দৃশ্যের কথা উঠে আসছে। বিশেষ ক্ষমতা আফস্পা’কে হাতিয়ার করে সে রাজ্যে সেনা জওয়ানদের অত্যাচার তীব্র মাত্রায় বেড়ে যায়। সেনার বিরুদ্ধে নানা সময় ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠে। ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে ২০০৪ সালে। ওই বছর জুলাই মাসে মনোরমা থাঙজাম নামের বত্রিশ বছরের এক মহিলাকে ধর্ষণ ও খুন করে কয়েকজন সেনা জওয়ান।  মনোরমা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে ধর্ষণ করে রাস্তার পাশে ফেলে যায় জওয়ানরা। এমন হৃদয়বিদারক  ঘটনায় মণিপুরের মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। রাজ্য থেকে আফস্পা প্রত্যাহার ও সেনা হটানোর দাবিতে সোচ্চার হন রাজ্যের মানুষ। এই আন্দোলনের অংশ হিসাবে ২০০৪ সালের ১৫ জুলাই ইম্ফলে আসাম রাইফেলসের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মণিপুরের ১২জন মহিলা নগ্ন হয়ে সেনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ পালন করেন।  এই ঘটনা বিশ্ব-বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল। 
আর আজ আসামে যখন হিমন্তবিশ্ব শর্মা নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার গরিব মানুষকে বেপরোয়া উচ্ছেদ করছে,  সুরাহার কোনও পথ না পেয়ে বুলডোজারের সামনে অর্ধনগ্ন হয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। 
উল্লেখ্য, বিজেপি আসামে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেছে বেছে গরিব মানুষের বাড়ি-ঘরের উপর উপর বুলডোজার চালানো শুরু করে। প্রথমে বাঙালি মুসলিমদের ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে উচ্ছেদ করে। তারপর বাঙালি হিন্দুদের উচ্ছেদ শুরু হয়। এখন গরিব অসমীয়াদের উচ্ছেদ শুরু করেছে। উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে বহু মানুষকে খুন করেছে। পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির নিথর দেহের উপর পাশবিক উল্লাস করতেও দেখা গেছে। 
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, গুয়াহাটিবাসীর অক্সিজেনের জন্য নাকি তিনি শিলসাঁকোয় উচ্ছেদ চালাচ্ছেন। শিলসাঁকোর বিলের অক্সিজেনেই গুয়াহাটিবাসী বেঁচে আছেন। এখানে বসতি গড়ে উঠায় গুয়াহাটিতে অক্সিজেন কম পড়ছে। তাই তিনি বসতি উচ্ছেদ করছে। অর্ধনগ্ন প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 
শিলসাঁকোবাসীর অভিযোগ, বেশিরভাগ পরিবার ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর আগে জমি কিনে ঘরবাড়ি বানিয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারি কর্মচারী বাড়ি নির্মাণ বানিয়েছেছেন। তাদের হাতে জমির নথিপত্রও আছে। কিন্তু বিজেপি সরকার জমির নথিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। অভিযোগ, আয়ুরবেদ কারবারি রামদেবের হাতে শিলসাঁকো তুলে দিতেই চলছে এই উচ্ছেদ। জমি বাঁচাতে আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উচ্ছেদ হওয়া মানুষ। 
উচ্ছেদ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে  সারা ভারত কৃষকসভা। সংগঠনের  আসাম রাজ্য সম্পাদক গজেন্দ্র বর্মণ বলেন, সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে মানুষ অর্ধনগ্ন প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছেন। শিলসাঁকোবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা কার্যকর করেনি রাজ্য সরকার। শিলসাঁকোবাসীর আন্দোলনের পাশে থাকবে কৃষকসভা, বলেন বর্মণ।

Comments :0

Login to leave a comment