COP28

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আসার আহ্বান জলবায়ু সম্মেলনে

আন্তর্জাতিক

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বুধবার শেষ হলো রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮। এনিয়ে সম্মেলনে যোগ দেওয়া দেশগুলির সহমতের ভিত্তিতে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। এবার প্রথম সম্মেলন থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে সরে আহ্বান জানালো হলো। এতে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের কথা না বলে তা ব্যবহার থেকে সরে আসার কথা বলা হয়েছে। 
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার কপ-২৮ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে মতবিরোধের কারণে প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সম্মেলনের আলোচনা বাড়তি সময়ে গড়ায়। অবশেষে বুধবার নতুন খসড়া প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এদিকে জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি সুলতান আহমেদ আল-জাবেরের নেতৃত্বে নতুন প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করতে বৈঠক হয়। প্রস্তাবের বিষয়ে সুলতান আহমেদ আল-জাবের বলেন, একসঙ্গে আমরা বিশ্বে একটা বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি এবং আমরা এতে বিশ্বকে সঠিক পথে নেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছি।       
প্রসঙ্গত, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানিকে সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিশ্বের ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিশ্বে ৪০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড কয়লা ব্যবহার থেকে হয় বাকি ৬০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড হয় পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস থেকে। তাই প্রস্তাবিত খসড়ায় জলবায়ুতে দূষণ ও উষ্ণায়ন কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরশীলতা কমাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে জোর দেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার ক্ষেত্রে আট দফা পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে। এই প্রস্তাব পালনে সঠিক নিয়ম গ্রহণ করা উচিত। বিশ্বের ২০০টি দেশ সম্মেলনে যোগ দেয়।   
এদিকে দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর শুরু হয় এ বছরের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮। গতকাল ১২ ডিসেম্বর সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ঐকমত্যে না পৌঁছানোয় আজ বুধবার বর্ধিত সময়ে দীর্ঘ আলোচনার পর নয়া খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক এদিনও অব্যাহত ছিল। মূলত ধনী দেশ আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এবং ইউরোপের দেশগুলি পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার পুরো বন্ধ করার পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণের দাবি তোলে। এতে দক্ষিণের গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলি আপত্তি জানায়। জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে নয়া পুনর্নবীকরণ জ্বালানি চালু করার ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রচুর সরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে এতে গরিব দেশগুলির জোরালো আপত্তি তুলেছে। তারা স্পষ্ট জানাচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার পুরো বন্ধ করতে প্রয়োজন বিপুল অর্থের। তাই বিপুল বিনিয়োগ ছাড়া কখনোই পর্যায়ক্রমে জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়।
এদিকে আট বছর আগে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বে উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে এনে তা শিল্প পূর্ব সময়ের পরিবেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। কোনমতেই  উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে না যায় তার পরিকল্পনা করা হয়। তবে উষ্ণায়ন অব্যাহত রয়েছে। এতে ধনী দেশগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দূষণ নির্গমনের হার ধনী দেশে বেশি, গরিব দেশ দূষণের হার তুলনামূলকভাবে কম। উষ্ণায়ন কমাতে বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর উপর জোর দেওয়া হলেও তা কমানোয় গরিব দেশগুলিতে বিশেষ কোনও অগ্রগতি ঘটেনি।
সম্মেলেনে প্রথম খসড়া প্রস্তাবে বিদ্যুতে উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার সীমিত রাখার উল্লেখ করা হলে নতুন ২১ পাতার প্রস্তাবে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। সম্মেলন সূত্রে খবর ভারত ও চীনের আপত্তিতে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে নতুন প্রস্তাবে খনিজ গ্যাস ও তেল ব্যবহার সীমিত করার কথাও উল্লেখ নেই। যা পুরানো প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল । আরব দেশগুলির আপত্তিতে খনিজ তেল গ্যাসে ব্যবহার সীমিত করার কথা নতুন প্রস্তাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে জলবায়ু সম্মেলনে পরিবেশ দূষণ নিয়ে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট দেখা গিয়েছে।
এদিন দক্ষিণ এশিয়ার ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’র অধিকর্তা সঞ্জয় বশিষ্ঠ  বলেন, কপ-২৮ সম্মেলনে এটা পরিষ্কার বোঝা গেল বিশ্ব শুধু ধনীর দেশ এবং প্রভাবশালী দেশের জন্য। গরিব দেশের বিশ্বে কোনও স্থান নেই। সম্মেলনের গৃহীত প্রস্তাবে এটা বোঝা গিয়েছে, পরিবেশ দূষণে বিপন্ন গরিব দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। যা করতে হবে তা তাদের নিজেদের করতে হবে। ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’ জানাচ্ছে, সম্মেলনে বিশ্বে উষ্ণতা কমাতে জীবাশ্ম ব্যবহার কমানোর কথা বলা হয়েছে। ভারতের এক্ষেত্রে প্রযুক্তির জাঁকজমক বাড়িয়ে লাভ নেই। পশ্চিমী দেশগুলো তাদের ভাষ্যে বিপুল অর্থব্যয়ী জাঁকজমকপূর্ণ প্রযুক্তির কথা বলছে। তা এড়িয়ে চলা উচিত। ভারতকে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই উষ্ণায়ন রোধের কথা ভাবতে হবে। তারা জানাচ্ছে, ভারতের সব সময় কম খরচের জ্বালানির ব্যবহারের দিকে যেতে হবে। এমনকি মধ্য আয়ের দেশগুলির তাই করা উচিত। প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, মাথাপিছু দূষণ নির্গত হওয়ার হার সব থেকে কম ভারতেই।

 

Comments :0

Login to leave a comment