Sitaram Yechury on Haryana

হরিয়ানায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা জিইয়ে রাখছে বিজেপি সরকারই

জাতীয়

হরিয়ানায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে চাইছে সেই রাজ্যের বিজেপি সরকার। সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠকের শেষে রবিবার সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সরাসরি এই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকারের কাজ স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানো, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তার পরিবর্তে সরকার একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করেছে এবং নিশ্চিত করতে চাইছে এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন যাতে আরও তীব্রতর হয়। তাদের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিকে নিশ্চিত করতেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।
সীতারাম ইয়েচুরি এদিনও স্পষ্ট করে বলেছেন, বিরোধী দলগুলির মধ্যে জোট, আসন সমঝোতা ইত্যাদি যা হওয়ার, সেটা হবে রাজ্যস্তরেই। প্রতিটি রাজ্যেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেমন কেরালায় সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এলডিএফ বনাম ইউডিএফ’র মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা, কংগ্রেস এবং ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি লড়াই করবে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিহারে মহাগঠবন্ধন বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়বে। মহারাষ্ট্রে মহারাষ্ট্র বিকাশ আঘাড়ি লড়বে বিজেপি’র বিরুদ্ধে। তামিলনাডুতে ধর্মনিরপেক্ষ জোট লড়বে বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ প্রতিটি রাজ্যে ভিন্ন পরিস্থিতি। বিজেপি বিরোধী সর্বাধিক ভোটকে একত্র করাই প্রধান বিষয়। 
সাংবাদিকরা এদিন বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়েও ইয়েচুরিকে প্রশ্ন করেন। জবাবে ইয়েচুরি বলেন, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টে যে ধর্মস্থানের যে পরিচিতি ছিল, তার স্থিতিবস্থা থাকার কথা। সেটাকেই কার্যকরী করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এমনকি অযোধ্যা জমি বিতর্কের রায় দিয়ে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জমির মালিকানা মন্দির ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়ার সময়েও মন্তব্য করেছিল, এই নির্দেশ অন্যান্য ক্ষেত্রে উদাহরণ হবে না। বাকি ক্ষেত্রে উপাসনা স্থল আইন কার্যকরী করতে হবে এবং তাকে লঙ্ঘন করা যাবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা বলছি, ওই আইনের কোনও লঙ্ঘন বা পরিবর্তন করা যাবে না। 
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে ইয়েচুরি জানান, সিপিআই (এম) দেশজুড়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন করার কাজ চলবে। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং কাজের দাবিতে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের মানুষ এই দুটি জ্বলন্ত সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এই নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে দেশজুড়ে। কনভেনশনও করা হবে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং সংযুক্ত কিষান মোর্চা ঐক্যবদ্ধভাবে যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সিপিআই (এম) তাতে সমর্থন জানাবে। দেশের মহিলারা যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, যার সমাবেশ দিল্লিতে হবে, সেই আন্দোলনেও সংহতি জানিয়েছে সিপিআই (এম)।
হরিয়ানা নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন, হরিয়ানাতে নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং বুলডোজার রাজনীতির তীব্র নিন্দা করছে সিপিআই (এম)। আমাদের কাছে যা খবর আছে বহু মানুষের সম্পত্তির মালিকানার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে, তাদের অনেকের হাতে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশের নির্দেশ আছে। কিন্তু কোনো কিছুকেই পাত্তা না দিয়ে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। আসলে হরিয়ানার বিজেপি সরকার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে জিইয়ে রাখতে চাইছে। সরকারের কাজ স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানো, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তার পরিবর্তে সরকার একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করেছে এবং নিশ্চিত করতে চাইছে এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন যাতে আরও তীব্রতর হয়। তাদের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিকে নিশ্চিত করতেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করছে। ইয়েচুরি বলেন, যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি দিক প্রশাসন। যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিক। সেই নিয়ে কোনো ভিন্নমত নেই কিন্তু নির্বিচারে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আক্রমণ করা হচ্ছে, সেটা একটা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। 
ইয়েচুরি এদিন সংসদের বর্তমান পরিস্থিতিটি তুলে ধরেন। হই হট্টগোলের সুযোগ নিয়ে যে পদ্ধতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিল সংসদে পাশ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সিপিআই (এম) তার তীব্র বিরোধিতা এবং নিন্দা করছে। ইয়েচুরি বলেন, সংসদে হই হট্টগোল হচ্ছে কারণ মণিপুর নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সুযোগে বিল পাশ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে বেশ কিছু বিল পাশ করিয়ে নেওয়া নিয়ে আমাদের গুরুতর উদ্বেগ আছে। যেমন বন সংরক্ষণ আইন, যা বিপুল পরিমাণ বনভূমিকে ধ্বংস করবে। এইসব বনাঞ্চলে বেসরকারি খননের সুযোগ করে দেওয়া হবে। বনভূমি ধ্বংস করার বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে জলবায়ুর উপরে। ইতিমধ্যে মানুষ অভূতপূর্ব সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন বন্যা, বৃষ্টি, ভূমি ধ্বংস ইত্যাদির কারণে। আরও দুটো বিল পাশ করানো হয়েছে। এতদিন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রাষ্ট্রের অধীনে খননের যে নিয়ম ছিল, বিশেষত অতি গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়ামের ক্ষেত্রে, তা এখন বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাটারি পাওয়ারের জন্য লিথিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতের গ্রিন এনার্জির জন্য যা জরুরি। এখন তার ভাঁড়ার বেসরকারি হাতে বিশেষ করে বহুজাতিক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, তা ভারতের স্বার্থে করা হচ্ছে না। কেন্দ্রের মোদী সরকার এই ধরনের বিল পাশের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশের আরও লুট ত্বরান্বিত করার রাস্তা করে দিচ্ছে। আমরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছি, বলেছেন ইয়েচুরি। 
রাহুল গান্ধীকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেন, মোদী সরকার এখন ফৌজদারি মানহানির মাধ্যমে বিরোধীদের টার্গেট করার চেষ্টা করছে। এতদিন ইডি এবং সিবিআইকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো। এখন মানহানির ফৌজদারি মামলা করে বিরোধীদের আক্রমণ করার নতুন রাস্তা বের করেছে। সুপ্রিম কোর্ট যখন রাহুল গান্ধীর শাস্তির উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে, তখন তাঁকে সেই গতিতেই লোকসভায় ফিরিয়ে নেওয়া উচিত, যে দ্রুততায় তাঁর সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছিল। বিরোধীদের যৌথ মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র আগামী বৈঠক যা মুম্বাইতে হতে চলেছে ৩১ আগস্ট- ১ সেপ্টেম্বর। সেখানে আরও রাজনৈতিক দল যোগ দেবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। 
কেরালার বিধানসভার অধ্যক্ষের মন্তব্য সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেন, আমার মনে হয় না এটা নিয়ে বিতর্কের কোনও অবকাশ আছে। আমাদের রাজ্য সম্পাদক গোবিন্দন মাস্টার এই নিয়ে যা বলার বলেছেন, তারপর নতুন করে আমার আর কিছু বলার নেই। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ইয়েচুরি।
 

Comments :0

Login to leave a comment