Dyfi

৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে যুব সমাবেশ

রাজ্য

 তৃণমূল এবং বিজেপি’র কাজিয়ায় চাপা দেওয়া জনজীবনের মূল অ্যাজেন্ডাকে সামনে তুলে আনতে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিল ডিওয়াইএফআই’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। আগামী ৩ নভেম্বর থেকে দুই মাস ধরে রাজ্যজুড়ে পদযাত্রা চালানোর পরে ৭ জানুয়ারি কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাবেশ করবে ডিওয়াইএফআই। সোমবার কলকাতায় ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য দপ্তর দীনেশ মজুমদার ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, কেন্দ্রে এবং রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে কাজিয়া, জাতি ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো, লুট দুর্নীতি, এসব তো অনেক হলো। কিন্তু ‘কাজ কই’ এই মূল প্রশ্নের উত্তর চাই। সেটাকে আর চাপা দেওয়া যাবে না। তার জন্যই দুই মাস ধরে পদযাত্রা করে ব্রিগেডে সমাবেশ করা হবে।
সরকারি প্রশাসনকে ব্যবহার না করে তৃণমূল এবং তাদের সংগঠনগুলি এখন আর কোনও জনসমাবেশ করতে পারছে না। বিপুল টাকা খরচ করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফতোয়া দিয়ে, সরকারি কাঠামো ব্যবহার করে তৃণমূলকে মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর ভাইপোর সভা ভরাতে হয়েছে সাম্প্রতিককালে। এর বিপরীতে ডিওয়াইএফআই ইনসাফ সমাবেশ করে ধর্মতলা উপচে দিয়েছিল যুবজোয়ারে। এবার তাদের লক্ষ্য ব্রিগেড। এদিন ব্রিগেড সমাবেশের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতা ও জেলায় জেলায় বিভিন্ন জায়গায় ডিওয়াইএফআই কর্মীরা দেওয়াল লিখনে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি ও রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেস সংলগ্ন ওয়েরবেতন মোড় সহ বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লিখনে অংশগ্রহণও করেছেন। 
অতীতে ডিওয়াইএফআই বেশ কয়েকবার ব্রিগেডে সমাবেশ করলেও তৃণমূল সরকারের আমলে এই প্রথম ডিওয়াইএফআই’র ডাকে ব্রিগেডে সমাবেশ হতে চলেছে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, আঘাত রুটি রুজির ওপরে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, কৃষিতে এবং শিল্পে। কারখানা বন্ধ, রাজ্যে কোনও কাজের সুযোগ নেই, গ্রাম উজাড় করে যুবরা ভিন রাজ্যে গিয়ে মারা যাচ্ছে। তাদের কাজ দেওয়া নিয়ে কোনও কথা নেই, কোন বাক্সে মৃতদেহ ফিরবে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ চলছে। কেন্দ্র আর রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে প্রতিদিন সাজানো তরজা চলছে। গ্রামে একশো দিনের কাজ নেই, সেটা নিয়ে কথা নেই। জাতিতে জাতিতে হিংসা বাধাতে, ধর্ম নিয়ে ভাষা নিয়ে প্রচার হচ্ছে। এগুলো মানুষের জীবনের মূল বিষয়? যেগুলো মূল বিষয়, দুর্নীতি, শিক্ষার অব্যবস্থা, বেকারি, বস্তি উচ্ছেদ সেগুলো নিয়ে কথা নেই। ডিওয়াইএফআই মানুষের জীবনের মূল বিষয় নিয়ে, আসল অ্যাজেন্ডা নিয়ে, রোজগারের অ্যাজেন্ডা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লড়াইতে আছে। আরও একবার মানুষের কাছে নিয়ে যেতে আগামী দুই মাস আমাদের প্রচার চলবে। লুটেরাদের বিরুদ্ধে রাস্তা দেখাবে। 
ব্রিগেড সমাবেশ ব্যাপক আকার নেবে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভুল অ্যাজেন্ডা দিয়ে মূল অ্যাজেন্ডা আড়াল করা চলবে না। মানুষের কাছে আমরা মূল অ্যাজেন্ডা তুলে ধরব, ইনসাফ চাইব, আমরা আশাবাদী মানুষ সেই লড়াইকে সমর্থন করে রাস্তায় নামবেন, ব্রিগেডে আসবেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বেকারদের ভবিষ্যৎ শ্মশানে পরিণত করার সরকার পরিচালিত হচ্ছে রাজ্যে ও কেন্দ্রে। বামফ্রন্ট সরকার শিল্প কারখানা করার কাজ করছিল। এখন কী এমন ঘটল যে ছেলেমেয়েরা স্কুলে ড্রপ আউট করে কাজে যাচ্ছে? কেন ভিনরাজ্যে যেতে হচ্ছে কাজ পেতে? কেন স্কুল কলেজে আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে?
যুব নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ৩ নভেম্বর ডিওয়াইএফআই’র সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস, সেইদিন থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হবে পদযাত্রা। এটা ‘ইনসাফ যাত্রা’। অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই। কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে দু’মাসব্যাপী পদযাত্রার কর্মসূচি চলবে। পাশাপাশি একাধিক প্রচার কর্মসূচি সংগঠিত হবে জেলায় জেলায়। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাওয়া ও তাদের ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই আন্দোলনের তেজকে আরও জোরালো করা হবে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ গোটা রাজ্যে দুই মাস আমরা রাস্তায় থাকব। তারপরে ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে সমাবেশ করা হবে দুর্নীতি, বিভাজন, বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে, কর্মসংস্থানের দাবিতে। গোটা রাজ্যের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করব। 
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে মীনাক্ষী মুখার্জি ছাড়াও ছিলেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দ। মোদী সরকার এবং এরাজ্যের তৃণমূল সরকারকে জনজীবনের দুর্দশার জন্য দায়ী করে যুব নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সকলের জন্য শিক্ষার অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, পয়সা যার শিক্ষা তার এই নীতি কার্যকর করা হচ্ছে, বেকারি লাফিয়ে বাড়ছে, নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠছে না, দেশের মানুষের ঘামে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলিকে বেসরকারি জিম্মায় তুলে দেওয়া হচ্ছে। রুজিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে এক এক করে খর্ব করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের জীবনের মূল সমস্যাগুলোকে আড়াল করে কিছু ভুল অ্যাজেন্ডার দামামা বাজিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার যে ষড়যন্ত্র চলছে, তার বিরুদ্ধে আরও জোরালো লড়াই চালিয়ে যাবে ডিওয়াইএফআই। 
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, ধূপগুড়ির নির্বাচনে জিতে তৃণমূলের বিধায়ক বিধানসভায় বসবেন এটা মূল কথা নয়। মূল কথা হলো, তার পরে সেখানকার কৃষক, আদিবাসী, চা বাগান শ্রমিকদের, আলু চাষিদের, বেকার যুবদের জন্য কী করবেন? গত বারো বছরে একটাও কাজ তৃণমূল তাদের জন্য করেছে? বামপন্থীরা এর জন্যই লড়াইতে আছে। সেই পথ যত কঠিনই হোক আমাদের অতিক্রম করতে হবে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment