Ed raid at gehlot's son's place

এবার রাজস্থানেও কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি-হানা

জাতীয়

সেই চেনা ছক, ভোটের মুখে তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে বিরোধী শিবিরকে হেনস্তা করা! বৃহস্পতিবার যেমন রাজস্থানে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হঠাৎ-ই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে। কর্নাটকেও বিধানসভা ভোটের আগে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসরা এবং দলের অন্যতম নেতা ওমপ্রকাশ হুদলার ঠিকানায় এদিন দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালালেন ইডি আধিকারিকরা। অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে এঁদের বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে বলে খবর। এরই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রা লঙ্ঘনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের পুত্র বৈভব গেহলটকে। এদিনের ইডি’র তল্লাশি অভিযান প্রসঙ্গে কংগ্রেস সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে শূলে চড়িয়ে বলেছে, ‘নরেন্দ্র মোদী তদন্তকারী সংস্থার সহায়তায় নির্বাচনে লড়তে চাইছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনেও বিজেপি-কে যথোপযুক্ত জবাব দেবেন রাজস্থানবাসী।’ বস্তুত, এদিনের ইডি’র তল্লাশিতে ফের উসকে দিয়েছে বিজেপি’র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রশ্নটিই।
সিকার জেলার লচ্ছমনগড়ে এবারেও কংগ্রেসের প্রার্থী গোবিন্দ সিং দোতাসরা। এদিন ইডি আধিকারিকরা সিআরপিএফ’র সশস্ত্র বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর জয়পুর এবং সিকারের ঠিকানায় তল্লাশি চালান। তেমনই তল্লাশি চালানো হয় মহুয়ার কংগ্রেস প্রার্থী ওমপ্রকাশ হুদলার বাড়িতেও। প্রশ্ন ফাঁস মামলায় রাজস্থান পুলিশের এফআইআর’র সূত্র ধরেই এদিন তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে বলে দাবি ইডি’র। বলা হয়েছে, গত বছর ডিসেম্বরে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। ওই পরীক্ষার নিয়ামক সংস্থা ছিল রাজস্থান পাবলিক সার্ভিস কমিশন। ইডি’র এমনও দাবি, পরীক্ষার্থী পিছু ৮-১০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে প্রশ্নপত্রের বিনিময়ে। এই মামলাতেই রাজস্থান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন সদস্য বাবুলাল কাটারার পাশাপাশি আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইডি তলব করেছে মুখ্যমন্ত্রী তনয় বৈভব গেহলটকে। নয়াদিল্লিতে ইডি’র সদর দপ্তরে তাঁকে শুক্রবারই দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নথিপত্র সংগ্রহের কারণে বৈভব সম্ভবত আরও সময় চেয়ে নিতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। ২০২০ সালে জয়পুরের দুই ব্যক্তি গেহলট-পুত্রের বিরুদ্ধে ‘শিবনার হোল্ডিংস’ নামে একটি মরিশাস-ভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনিভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগ করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ২০১১ সালে বৈভব বেনামে ট্রাইটন হোটেল সংস্থার ২৫০০ শেয়ার কিনেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি সাংসদ কিরোরিলাল মিনা ইডি’র কাছে বৈভবের বিরুদ্ধে তদন্তের আরজি জানিয়েছিলেন। এতদিন নিশ্চুপ থাকার পর ঠিক ভোটের মুখে ওই মামলা নিয়ে আচমকা সক্রিয় হয়ে উঠল ইডি!
গত আগস্টে তিনদিন ধরে ইডি তল্লাশি চালায় ট্রাইটন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, ভদ্রা এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড এবং এই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর শিবশঙ্কর শর্মা, রতনকান্ত শর্মা সহ কয়েকজনের ঠিকানায়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের কারণেই বৈভবকে তলব করা হয়েছে বলে দাবি ইডি’র।
এদিন রাজস্থানে ইডি’র তল্লাশি অভিযান নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ অনেকেই। খাড়গে পরিষ্কার বলেছেন, ‘‘নির্বাচন এলেই ইডি, সিবিআই কিংবা আয়কর দপ্তর বিজেপি’র কর্মী হিসাবে ভূমিকা পালন শুরু করে। আসলে রাজস্থানে ফের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই শেষ ঘুঁটির চাল দিতে চেয়েছে বিজেপি। ছত্তিশগড়ের পর ইডি এবার রাজস্থানে বিজেপি’র হয়ে প্রচারে নেমে পড়ে তল্লাশি শুরু করেছে কংগ্রেস নেতাদের ঠিকানায়।’’ এদিন এক্স হ্যান্ডলে একথা উল্লেখ করে কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেছেন, ‘‘মোদী সরকারের এই একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। তদন্তকারী সংস্থাগুলির এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে কংগ্রেস। তবে নির্বাচনেই এর উপযুক্ত জবাব দেবেন রাজস্থানের মানুষ।’’
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট অভিযোগ করেছেন, ‘‘বুধবারই রাজস্থানের মহিলাদের জন্য নতুন প্রকল্প চালু করেছে সরকার। আর তার পরেরদিনই শুরু হয়ে গেল ইডি অভিযান! তাহলেই বোঝা যাচ্ছে যে, আমি কী বলতে চাইছি। ইডি এখন থেকে রাজস্থানে প্রতিদিনই তল্লাশি অভিযান চালাবে। কারণ বিজেপি চায় না রাজস্থানের মহিলা, কৃষক এবং গরিব মানুষ কংগ্রেসের ঘোষিত প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করুক।’’ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র পবন খেরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেছেন, ‘‘গত সপ্তাহেই দিল্লিতে অশোক গেহলট সাংবাদিক সম্মেলনে ভোটের আগে রাজস্থানে তদন্তকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এদিন সেই রাজস্থানেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থাগুলির সহায়তা নেওয়া বন্ধ করে সরাসরি নির্বাচনে লড়াই করুন মোদীজী।’’ সচিন পাইলট তদন্তকারী সংস্থার আচরণকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এর থেকেই প্রমাণ হয় যে ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বিজেপি।’’
ইডি’র আচরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিআই(এম) রাজস্থান রাজ্য কমিটি। এদিন পার্টির সম্পাদকমণ্ডলী এক বিবৃতিতে বলেছে, বিজেপি-আরএসএস পরিচালিত মোদী সরকার ইডি কিংবা সিবিআই-কে নিজেদের সংস্থা বানিয়ে ফেলেছে। ভোট এলেই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবার যাঁরা কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন তাঁদের মুখ বন্ধ করার জন্য ওই সব তদন্তকারী সংস্থার ভয় দেখানো হয়। এমনকি তাঁদের জেলেও পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় ভোট ২৫ নভেম্বর। তার আগে রাজস্থানের কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ইডি’র অভিযানকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনিতেই নরেন্দ্র মোদীর ন’বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উঠেছে বারে বারেই। গত মে মাসে কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের কিছু দিন আগে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় ইডি নোটিস পাঠিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ডি কে শিবকুমারকে। চলতি মাসেই সার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ইডি জেরা করেছিল অশোক গেহলটের ভাই অগ্রসেন গেহলটকে।
 

Comments :0

Login to leave a comment