VEGETABLES FARMERS PRICE

সবজিতে বাজারের অর্ধেক দামও পাচ্ছেন না কৃষকরা

রাজ্য জেলা

এমনই ছবি রাজ্যের সব বাজারে।

অনন্ত সাঁতরা (সিঙ্গুর) ও দীপশুভ্র সান্যাল (জলপাইগুড়ি)

কলকাতা থেকে সিঙ্গুরের দুরত্ব বেশি হলে চল্লিশ কিলোমিটার। এটুকু রাস্তা পেরিয়ে কলকাতার খুচরো বাজারে সবজির দাম দ্বিগুন পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। 
সিঙ্গুরের বারুইপাড়ায় রয়েছে সবজির পাইকারি বাজার। হাওড়া বর্ধমান কর্ডলাইনের ধারে এই বাজার থেকে ভোররাতেই ব্যবসায়ীরা সবজি কিনে ম্যাটাডোরে তোলেন। কলকাতা কেবল নয়। অন্য বড় বিভিন্ন খুচরো বাজারে এই সবজিই কেনেন ক্রেতারা। 
ক্রেতারা সবজির দামে হাঁসফাঁস করছেন। কৃষকরা কেমন দাম পাচ্ছেন?
পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজির পাল্লা দরে বিক্রি হয়। সেই দামের নিরিখে দেখা যাচ্ছে এখন কৃষকরা পাচ্ছেন পটলে কেজিতে ৩৬-৪২ টাকা, বেগুন ৪০-৪৫ টাকা, কচু ২৪-২৬ টাকা, শশা ২২-২৪ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা। 
আর ক্রেতারা কিনছেন পটল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বেগুন বা ঢ্যাঁড়স ৭০-৮০ টাকা। আবার গাঁটি কচু, ঝিঙে, টমেটো সবেরই দাম কেজিতে ৬০ টাকার বেশি। 
দক্ষিণবঙ্গের কেবল নয়, উত্তরবঙ্গেও একই অবস্থা। জলপাইগুড়ির বিভিন্ন অঞ্চল সবজি চাষের ওপর নির্ভর করে থাকে অনেকটাই। এখানেও অসময়ে বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক কারণে কৃষকদের খরচ বেড়েছে। কোথাও ফলন কম হচ্ছে। আলু এবং পেঁয়াজ বাদ দিলে অন্য সবজি হিমঘরে বিশেষ রাখার মতো নয়। দ্রুত মাঠ থেকে তুলে পাঠিয়ে দিতে হয় বাজারে। 
কৃষিজীবী থেকে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, উৎসবের সময়ে সমস্যা হয়েছে চাঁদারও। সিভিক ভলান্টিয়ারদের এই সময়ে বড় কোটা দেওয়া হয়। তাদের লক্ষ্য থাকে সবজি বয়ে নেওয়া ছোট বা মাঝারি মালবাহী যান। বহু জায়গায় পুলিশের বিরুদ্ধে অসঙ্গত জরিমানা করার অভিযোগও রয়েছে। আলু এবং পেঁয়াজ সহ সবজি চাষে কৃষকদের সহায়তা না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। 

জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের তিস্তা পাড়ের মণ্ডলঘাট ও তিস্তার ওপারে ময়নাগুড়ি, এই দুই এলাকায় এই সময়  মূলত জলপাইগুড়ি জেলার মরশুমি সবজি উৎপাদিত হয়। ময়নাগুড়ি হেলাপাকড়ির ভোটপট্টি এলাকায় কিছু মরশুমি সবজি বাজারে কৃষকরা বিক্রি করতে পারলেও মণ্ডলভাগ এলাকায় তিস্তার বন্যার কারণে সমস্ত মরশুমি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। 
ময়নাগুড়ি হেলাপাকড়ি বাজারে মুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায় তিন আঁটি, লাউ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়, লাল শাক বিক্রি হচ্ছে তিন আঁটি ১০ টাকা, পটল বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা পাইকারি দরে। যদিও খোলা বাজারে এই সমস্ত সবজির মূল্য প্রায় দ্বিগুণ।
সিঙ্গুরের কৃষকরা জানাচ্ছেন, মাঠে এখন ঢ্যাঁড়স, পটল বা কচু কমে যাচ্ছে। মাঠ থেকে তোলা হচ্ছে পেঁয়াজকলি, সিম, মুলো, পালংয়ের। বাড়বে বরবটির জোগান। এই সবজির জোগান বাড়লে দাম কিছুটা কমবে।
সিঙ্গুরে কিছু এলাকায় পেঁয়াজের বীজতলাও তৈরি হচ্ছে। বলাগড়েও পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়। নতুন ঢ্যাঁড়সের চাষ শুরু হবে। তবে মাঘের আগে পাওয়া যাবে না। পটল, বেগুন খেত থেকে তুলে ফেলে এবার আলু চাষে নামবেন কৃষকরা। তবে এই আলু মিলবে মার্চে। 
সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ মিশ্র বলছেন, ‘‘সরকার সংবেদনশীল হলে কৃষক এবং ক্রেতা দু’পক্ষেরই সুবিধা হতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর কৃষকে কম দামে বীজ সরবরাহ করা যেত। চাষের অন্য সুযোগ সরকারি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে করা যেত। সেসব কিছু হয়নি। উদ্যানপালন বিভাগ অতীতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিত। সেসব এখন বন্ধ।’’ 
জলপাইগুড়ির মতো বিভিন্ন এলাকায় শঙ্কা রয়েছে আলু নিয়েও। এই সময়ে চাঁদার জুলুম বেশি, এই ভয়ে হিমঘর থেকে আলু বের করতে ভয় পাচ্ছেন একাংশ। মিশ্র বলছেন, ‘‘গতবারই দেখা গিয়েছিল আর কিছুদিন পর এই আলুর দাম থাকে না। সরকার কৃষকদের সচেতন করবে না কেন? আবার চাঁদা বা জরিমানার জুলুম বন্ধে সবজির চড়া দামের সময়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন? সরকার সংবেদনশীল হলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’’  
কৃষির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন অংশের দাবি ‘গ্রিনহাউস’ ব্যবস্থা জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিক রাজ্য। ছাউনির মধ্যে চাষের ব্যবস্থায় প্রকৃতির ওঠানামা সামলে উৎপাদন তুলনায় স্থিতিশীল রাখা সুবিধাজনক এই ব্যবস্থায়।

Comments :0

Login to leave a comment