Mamata Banerjee

দলের নেতাদের ‘হাতে চাকরি’ দিয়েছিলেন মমতা!

রাজ্য

Mamata Banerjee

 ‘‘মেদিনীপুর জেলায় সিপিএমের জমানায় কিছু ছিল না।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বুধবার দাবি করেছেন।
নিজের সাফল্য বলতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি এদিন বলেন,‘‘পুরীতে সমুদ্র আছে, জগন্নাথ মন্দির আছে। এখানেও সমুদ্রের পাশে জগন্নাথ মন্দির তৈরি করছি।’’
তিনি সরকারি টাকায় মন্দির বানাচ্ছেন। বামফ্রন্ট মেদিনীপুরের কৃষকদের জমি দিয়েছিল। আবার শিল্পাঞ্চলও তৈরি করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্যই ভুলিয়ে দিতে চাইছেন। তিনি অবশ্যই হলদিয়ার শিল্পনগরীতে প্রচুর বিনিয়োগ, কয়েক শো কারখানা, কয়েক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বামফ্রন্ট সরকারের রেকর্ড ভুলিয়ে দিতে চাইছেন। ১৯৮৪-র জানুয়ারিতে উৎপাদন শুরু করা কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কথা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছেন। তমলুক জেলা সদর গড়ে ওঠার কথা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছেন। পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দরকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল— এসবও ভুলিয়ে দিতে চেয়েছেন।
তবে তিনি মোটেও সুফিয়ানকে ভোলেননি। শেখ সুফিয়ান। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা। জেলা পরিষদের সহকারী সভাপতি। গত ১২ বছরে নন্দীগ্রামের সবচেয়ে দর্শনীয় জিনিস যেটি হয়েছে, সেটি হলো শেখ সুফিয়ানের টালির চালের বাড়ির রূপান্তর। এখন তা ‘জাহাজ বাড়ি’ নামে পরিচিত। সেই সুফিয়ানকে বুধবার সার্টিফিকেট দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘সুফিয়ানদের বাদ দিয়ে নন্দীগ্রাম হয় না।’’ 
তিনদিনের সফরে পূর্ব মেদিনীপুরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার তাঁর সভা ছিল খেজুরিতে। বুধবার দীঘায়। দীঘায় ছিল দলীয় কর্মী সভা। সেখানেই নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে একটি তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন,‘‘আমরা তাদের হাতে চাকরিগুলো দিয়েছিলাম। আর তারা অনেক জায়গায় চাকরিগুলো বিক্রি করেছিল। আমরা জানতাম না। পুরুলিয়ায় চাকরিগুলো একটাও দেয়নি। পুরুলিয়ার চাকরি এখানে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।’’অর্থাৎ দলের নেতা, মন্ত্রীদের মধ্যে চাকরিবিলির বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। স্বীকার করছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। 
প্রশ্ন উঠছে— সরকারি চাকরি পরীক্ষার মাধ্যমে হয়। কারও ‘হাতে চাকরিগুলো দেওয়া’র মানে কী? তাহলে কী পরীক্ষার আগেই নেতাভিত্তিক চাকরি ভাগ হয়ে গেছিল? দ্বিতীয়ত, যখন জানতে পারলেন মুখ্যমন্ত্রী যে, চাকরিগুলো ‘বিক্রি করা  হয়েছে’, তখনও তিনি এবং তার সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? শুভেন্দু অধিকারীকে প্রধানত আক্রমণ করছেন মমতা ব্যানার্জি। মূলত জনমানসে শুভেন্দু অধিকারীকে ‘তৃণমূল বিরোধী প্রধান মুখ’ হিসাবে প্রমাণ করার জন্য। এদিন সেই বিজেপি নেতা এবং তাঁর বাবা, ভাইদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘যাদের খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করেছি, তাদের নিজেদের ক্ষমতা ছিল না নিজেদের ক্ষমতায় জিতে আসা। তখন অখিল গিরি দাঁড়িয়েছিল কন্টাই থেকে। গদ্দাররা নয়। ওরা ছাগলের তৃতীয় ছানা হয়েছিল তখন।’’ 
এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ চলাকালীন দেখা গেল কর্মীদের অনেকে শুয়ে পড়েছেন। সভার এলাকাও ভরেনি, ফাঁকা ছিল। সেই সভাতে সিপিআই(এম)-কে তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘রামচন্দ্র কি কাউকে কানে কানে বলেছিল বন্দুক নিয়ে মিছিল করতে? এটাতো সিপিএম করত। সিপিএমের ৩৪ বছরের অত্যাচার আপনারা দেখেছেন তো। ভুলে যাননি তো? নন্দীগ্রাম ভুলেছেন? খেজুরি ভুলেছেন? তমলুক ভুলেছেন? মহিষাদল ভুলেছেন? কোলাঘাট ভুলেছেন? চণ্ডীপুর ভুলেছেন? হলদিয়া ভুলেছেন?’’
ডিএ’র দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের গত বুধবার বলেছিলেন, ‘চোর, ডাকাত।’ আন্দোলনের তেজ তাতে কমেনি। তাই এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘সরকারি কর্মচারীদের বলবো বিজেপি সিপিএমের কথায় মাথা খারাপ করবেন না। মাথা নত করবেন না ওদের কাছে।’’ আবার যোগ্যদের চাকরির দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন তাঁর মন্তব্য,‘‘আমরা চাকরি দেব। আইনের পথেই। কারো চাকরি খাব না।’’
এদিন মমতা ব্যানার্জি শিবপুর এবং রিষড়ার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ে বলেন,‘‘বিজেপি বাইরের গুন্ডাদের ভাড়া করে নিয়ে এসে দাঙ্গা করছে। এটা দাঙ্গা নয়। এটা ক্রিমিনালদের নিয়ে ভায়োলেন্স করা। যে ছেলেটা বন্দুক নিয়ে মিছিল করছে তাকে মুঙ্গের থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছিল। বিহার থেকে গুন্ডা নিয়ে আসছে।’’ তাঁর দাবি,‘‘আমরা শান্তির প্রতীক। রামনবমীর মিছিল হোক। আমরা কিন্তু কাউকে বাধা দিইনি। কিন্তু রামের নাম বদনাম করাবার জন্য বুলডোজার নিয়ে মিছিল করেছে। পেট্রোল মশলা নিয়ে ঢুকেছে। মশলা বন্দুক নিয়ে মিছিল করেছে। পুলিশের অনুমতি ছিল না। অনেক মানুষের ঘর জ্বালিয়েছে দোকান জ্বালিয়েছে। আমরা সরকার থেকে সবাইকেই ক্ষতিপূরণ দেব। হাওড়াতে যেই শান্তি হলো পরের দিন রিষড়াতে চলে গেল দাঙ্গা করতে। মিটিং থেকে ইশারা করছে যাও এবার কাজ করো।’’

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment