DA protest

ডিএ আন্দোলন রুখতে মমতার চাকরি ছেদের বিজ্ঞপ্তি

রাজ্য

কর্মবিরতির আন্দোলনকে দমন করতে চাকরি ছেদের বিজ্ঞপ্তি জারি করলো নবান্ন!
চিরকুটে মাত্র ৩ শতাংশ ডিএ প্রাপ্তির ক্ষোভে সোমবার ও মঙ্গলবার- দু’দিন রাজ্যে সমস্ত সরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপক কর্মচারীরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কর্মচারী ও শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে ঠেকাতে রবিবার ছুটির দিনে নির্দেশিকা জারি করেন রাজ্যের অর্থ দপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ পন্থ।


এরআগে এই ধরনের নির্দেশিকা নবান্ন থেকে ধর্মঘট ভাঙার জন্য জারি করা দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন এরাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। কিন্তু এবার ধর্মঘটের কোনও আহ্বান নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধর্মঘট ভাঙার ছকেই কর্মবিরতি ভাঙতে হুমকি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। অর্থ সচিবের জারি করা নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে, আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার বেশ কিছু সংগঠন পেন ডাউন অথবা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দুই দিন রাজ্যের সমস্ত সরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান প্রাপ্ত সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে খোলা রাখতে হবে। আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার- কোনোভাবেই ছুটি নেওয়া যাবে না। 
এরসঙ্গে কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি নির্দেশিকা অমান্য হলে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ‘ডায়াস নন’ অথবা ‘ব্রেক ইন সার্ভিস’ এর শাস্তি দেওয়া হবে। ডায়াস নন মানে একজন কর্মচারীর গোটা চাকরি জীবন থেকে একদিন চলে যাওয়া। কিন্তু ভয়ানক কোনো অপরাধের অভিযোগ কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হলে সরকার ‘ব্রেক ইন সার্ভিস’ বা চাকরিচ্ছেদ করতে পারে। ২০১১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ধর্মঘট ভাঙার জন্য রাইটার্স বিল্ডিংয়ে মমতা ব্যানার্জি মুখে ‘ব্রেক ইন সার্ভিস’-এর হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি নির্দেশিকাতে স্রেফ ডায়াস নন’এর শাস্তির বিধানই লেখা হয়েছিল। এবারই তার ব্যাতিক্রমী নির্দেশিকা জারি করলো নবান্ন।
সরকারের এই নির্দেশিকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি। তাঁর বক্তব্য,‘‘ চিরকুটে মাত্র ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মচারীদের ক্ষোভের বহর সরকার টের পেয়েছে। কলকাতায় এসে টানা দু ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে ফিরে গেছেন কর্মচারীরা। মঙ্গলবার আমাদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। সরকারের হুমকি উড়িয়েই কর্মবিরতি হবে।’’ সরকারের এদিনের নির্দেশিকা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত কর্মচারী সমিতি সমূহের যৌথ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ রায় বলেন,‘‘ সরকারের নির্দেশিকা উড়িয়ে গোটা রাজ্যে সর্বাত্মক কর্মবিরতি হবে। আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। সরকার যে অর্ডারই করুক না কেন, আমরা কাজে যোগ দিয়ে কাজ করবো না। সরকার তাকিয়ে, তাকিয়ে শুধু দেখবে।’’ 


ঘটনা হলো, বিধানসভার বাজেট পেশের দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে চিরকুট নিয়ে ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। রাজ্যের কর্মচারীদের ডিএ বকেয়া ৩৫ শতাংশ। সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভ শুরু হয়ে যায় কর্মচারী মহলে। এমনিতেই ডিএ’র দাবিতে শহীদ মিনার ময়দানে টানা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। একইসঙ্গে অনশন শুরু হয়েছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফ থেকে সোমবার ও মঙ্গলবার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। গত শুক্রবারই ১২ই জুলাই কমিটির আহ্বানে কলকাতায় বকেয়া ডিএ’র দাবিতে ব্যাপক কর্মচারী সমাবেশ থেকে মঙ্গলবার রাজ্যের সব সরকারি দপ্তরে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
ডিএ নিয়ে কর্মচারীদের ক্ষোভ টের পেতেই সরকারও নির্দেশিকা জারি করে কার্যত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল।
 

Comments :0

Login to leave a comment