মহাকাশ অভিযানই ব্যবসা স্পেস এক্স’র। সিইও ইলন মাস্কের এই সংস্থার অভিযান বিশ্বময় প্রচারিতও। মাস্ক নিজে বিশ্বে সবচেয়ে ধনীদের অন্যতম। তবে তাঁর সংস্থায় মারাত্মক অবহেলা রয়েছে কর্মী সুরক্ষায়।
সংবাদ প্রতিষ্ঠান রয়টার্স তদন্তধর্মী প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, ২০১৪ থেকে অন্তত ৬০০ কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে মাস্কের সংস্থায়। সুরক্ষা বিধি, অমানবিক কাজের শর্তে প্রতিবাদ জানিয়ে বরখাস্ত সংস্থার প্রাক্তন কর্মীদের সাক্ষাৎকারও নিয়ে রয়টার্স।
মাস্কের নাকি গাঢ় রঙে আপত্তি রয়েছে। সুরক্ষা বিধির জন্য গাঢ় রঙের জ্যাকেট পরার কথা। টেক্সাসের হথ্রনে স্পেস এক্সের একটি নির্মাণ কেন্দ্র ঘুরে এমন জ্যাকেট পরতে বারণ করে দিয়েছেন মাস্ক। গাঢ় রঙ তাঁর পছন্দ নয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানাচ্ছে সে দেশের পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রশাসক ‘ওএসএইচএ’ নিজস্ব তদন্ত চালিয়েছে। দেখা গিয়েছে, প্রশাসককে যে যে তথ্য নিয়মিত দেওয়ার কথা, দেয়নি মাস্কের সংস্থা।
সংস্থা থেকে গত বছর বরখাস্ত হন টম মলিন। এই উড়ান প্রযুক্তিবিদ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘সুরক্ষাবিধির তোয়াক্কা না করে কাজ করতে উৎসাহিত করাই ম্যানেজমেন্টের নীতি। বলা হয়, পৃথিবীর আয়ু ফুরিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গল বা ‘মার্স’-এ কলোনি গড়তে হবে মানবতা বাঁচাতে। সময়ের সঙ্গে লড়াই করে পৌঁছাতে হবে লক্ষ্যে।’’
মলিন তাঁর আর কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে স্পেসএক্সের অমানবিক ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। লিখেছিলেন খোলা চিঠি। তারপরই বরখাস্ত হন।
তদন্তে এসেছে এক কর্মী লনি ল ব্ল্যাঁয়ের মৃত্যুর বিবরণ। নৌসেনা থেকে অবসর নিয়ে স্পেসএক্স-এ যোগ দেন লনি। উড়ান পরীক্ষার জন্য ফোম আনার দায়িত্ব ছিল তাঁর। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা বিধি ছিল না। খোলা ট্রাক থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল।
কর্মীরাই জানিয়েছেন, অন্তত ১০০ জনের অঙ্গহানি হয়েছে। হাত-পা ভেঙেছে ২৯ জনের। ১৭ জনের আঙুল থেঁতলে গিয়েছে। ৯ জনের গুরুতর আঘাত রয়েছে মাথায়। তবু বেপরোয়া মাস্ক।
সমস্যা রয়েছে কাজের সময় নিয়েও। সম্প্রতি ভারতে ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি বলেছেন ভারতকে উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা করে কাজ করতে হবে প্রত্যেক কর্মীকে। বিতর্কও হচ্ছে। মাস্কের সংস্থায় সপ্তাহে ৮০ ঘন্টা কাজ করতেও বাধ্য করা হয়। অনেক কর্মী বাড়ি ফিরতে পারেন না। থেকে যেতে হয় নির্মাণক্ষেত্রে। স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
অভিযোগ উঠেছে, সুরক্ষাবিধির জন্য প্রয়োজনী প্রশিক্ষণও কর্মীদের দেয় না স্পেসএক্স। সুরক্ষা পরীক্ষা করাও হয় না। কত দ্রুত কাজ শেষ করা যাবে, এই এক এবং একমাত্র লক্ষ্যে চালানো হয় কর্মীদের।
মঙ্গলে উপনিবেশ গড়ার কথা হলেও মহাকাশ বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ক্ষেত্রটিতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। নতুন নতুন সংস্থা আসছে। মুনাফা স্থির রাখতে কর্মীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করাতে বাধ্য করছে মাস্কের সংস্থা।
Comments :0