Ramnabami clash

রামনবমীর সশস্ত্র মিছিলে তৃণমূল-বিজেপি একাকার

রাজ্য

  রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে রাজ্যের নানা এলাকায় বিজেপি এবং তৃণমূল মিলেমিশে একাকার। বৃহস্পতিবার এই দুই দলের সাংসদ, বিধায়ক, নেতা, কর্মীরা একসঙ্গে মিছিল করেছে, উত্তেজনা তৈরির চেষ্টাও চালিয়েছে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ জায়গায় দুই শাসক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে সশস্ত্র মিছিল করা হয়েছে। এদিন হাওড়ার শিবপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় উত্তেজনা চরমে ওঠে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে শিবপুরে পুলিশকে র্যাউফ নামাতে হয় এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়। অন্যদিকে ডালখোলায় উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতেই আগুন লাগিয়ে দেয়। 
বৃহস্পতিবার বিকেলে হাওড়ার শিবপুর এলাকায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটি মিছিল বি গার্ডেন থেকে শুরু হয়ে রামকৃষ্ণপুর ঘাটে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কসাই গলির সামনে মিছিলের উপর ইট ছোঁড়ার অভিযোগ ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা হয় শিবপুর এলাকায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বহু গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় দোকানপাট। পথচলতি মানুষ ভয় পেয়ে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। বন্ধ হয়ে যায় চারপাশের দোকান। গত বছর রামনবমীর মিছিল ঘিরে এই একই জায়গা রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। সেদিনও জ্বলেছিল বহু গাড়ি, ভাঙচুর হয়েছিল বহু দোকানে। 
এদিন হাঙ্গামার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। নামানো হয় র্যানফ। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যা সের সেল ফাটানো হয়। আগুন নেভাতে দমকলের গাড়ি এসে পৌঁছলে মল্লিক ফটকের মোড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দমকলের গাড়ি যেতেও বাধা দেওয়া হয়। অস্ত্র হাতে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় বহু মানুষকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় বিশাল পুলিশ। শিবপুর এলাকায় রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা প্রশমণের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আহ্বান জানান জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ ঘোষ। অযথা গুজবে কান না দেওয়ার জন্য এবং  এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।  
এদিকে, রামনবমীর সশস্ত্র মিছিল ঘিরে এদিন রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলাও। জাতীয় সড়ক থেকে মিছিল শহরে আসার সময় উত্তর ডালখোলা হাইস্কুলের উলটোদিকে পুলিশের সাথে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একদল লোককে বোমা পিস্তল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। হাতে হাতে ঢিল নিয়ে এলোপাতাড়ি ছুঁড়তে থাকে তারা। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশি টহল শুরু হলেও পুরো এলাকায় রয়েছে থমথমে পরিবেশ। ডালখোলার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য পুলিশ প্রশাসনই পুরোপুরি দায়ী। রামনবমীর মিছিল নিয়ে তৃণমূল, বিজেপি, আরএসএস মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল এখানে। ইসলামপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের বুক চাপড়ে অভিবাদন জানালেন বিজেপি নেত্রী রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরি। অন্যদিকে দেবশ্রী চৌধুরিকে মিছিলে দাঁড়িয়ে জলের বোতল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তৃণমূল নেতা, রাষ্ট্রমন্ত্রী গোলাম রব্বানি। 
রামনবমীকে কেন্দ্র করে এদিন তৃণমূল ও বিজেপি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল ভাটপাড়া, জগদ্দল এলাকাতেও। কে তৃণমূল, কে বিজেপি আলাদা করে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে তৃণমূল ও বিজেপির লোকজন একই সঙ্গে ঝান্ডা, ব্যানার  টাঙাচ্ছে। রামনবমীকে কেন্দ্র করে কাকিনাড়া, জগদ্দল সহ বারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল ও বিজেপি। এদিন ভাটপাড়া থানার সামনে অস্ত্র হাতে রামনবমীর মিছিল করে তৃণমূল। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং সহ তৃণমূলের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নেতৃবৃন্দ।
তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের একইসঙ্গে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে বর্ধমান শহরেও। এসব মিছিলে বিজেপি’র জেলা সভাপতি, আরএসএস নেতাদের যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই তাদের পাশে দেখা গিয়েছে বর্ধমানের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস এবং অন্য তৃণমূল নেতাদেরও। রামনবমী উপলক্ষে কার্জন গেটের সামনে যে মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সেখানে ছিলেন দুই দলের নেতারাই। প্রকাশ্য রাস্তায় বিজেপি ও তৃণমূলের নেতাদের সামনে অস্ত্রের ঝনঝনানি চোখে পড়েছে। তলোয়ার, ভোজালি, ত্রিশূল নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় দাপাদাপি করেছে দুই দলের কর্মীরা। এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক, মহিলাদের হাতেও অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। সকাল থেকেই হনুমান মন্দিরে দেখা যায় দু’দলের নেতাদের। পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। এদিন বর্ধমান শহরের জিটি রোড দুপুর থেকে অবরুদ্ধ করে দেয় পুলিশ। যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। 
হুগলীর চুঁচুড়ায় রবীন্দ্র নগর থেকে জিটি রোড হয়ে খাদিনা মোড় ঘুরে তোলাফটক দিয়ে ঘড়ির মোড় হয়ে তরোয়াল-মিছিল হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে রামনবমীর সশস্ত্র মিছিলে এদিন সকাল থেকে সারাদিন স্তব্ধ থাকল শিলিগুড়ি শহরও। পুলিশ প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুলিশের সামনেই হাতে তরোয়াল নিয়ে হয় শোভাযাত্রা। পুলিশ অবশ্য নীরব দর্শক হয়েই ছিল।

 

Comments :0

Login to leave a comment