Thunderstorms

দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ঝড়ের দাপট, নিহত পাঁচ

রাজ্য

Thunderstorms


ঘণ্টায় ৬২ কিমি এবং ৮৪ কিমি বেগের দুটি ভয়ঙ্কর ঝড়ের তাণ্ডবলীলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। সেই সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ সহ তুমুল বৃষ্টিতে রাজ্যে পরপর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে প্রবল ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ঝড়ে ইলেক্ট্রিক খু্ঁটি গায়ে পড়ে নিহত হয়েছেন একজন। এদিন বিকেলে ঝড়ের সময় উলুবেড়িয়া থানার বহিরা গ্রামের কুলতলায় বাডির ভিতরে বসেছিলেন রামচন্দ্র মন্ডল (৭৫)। স্থানীয় সূত্রে খবর সেইসময় আচমকাই বাড়িটি ভেঙে পড়লে বৃদ্ধ বাড়ির নীচে চাপা পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উলুবেড়িয়া মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে এদিন বিকেলে ঝড়ের বাগনান থানার দেউলটি চক কমলা গ্রামের গৃহবধূ রজনী প্রসাদ (৪২) বাড়ির বাইরে বের হলে একটি শুকনো খেজুর গাছ ভেঙে তার মাথার উপর পড়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। উত্তর ২৪ পরগনার মোহনপুরে  সরস্বতী বিশ্বাস নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া খবরে জানা গেছে এদিন ঝড় বৃষ্টি দাপটে রাজ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।   


তুমুল ঝড় বৃষ্টি কলকাতায়, জেলায় জেলায় শুরু প্রবল দুর্যোগ। এদিন বিকেল থেকেই জেলায় জেলায় শুরু হয় বৃষ্টিপাত। হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় তুমুল ঝড় সেই সঙ্গে বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিসের মতে এদিন কলকাতায় ঘণ্টায় ৮৪ কিমি বেগে ঝড় হয়েছে। প্রায় তিন মিনিট ধরে তান্ডব চলে ঝড়ের। এদিন বিকেল ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এদিন বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়াতেও বৃষ্টির খবর পাওয়া গিয়েছে।  
স্বস্তির বৃষ্টি এলেও ঝড়ে বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রবল ঝড় বৃষ্টি লালগড়ে বেশ কিছু মাটির ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। কোলাঘাটে বড় বড় গাছ পড়ে গিয়েছে। দোকানঘর উড়ে গেছে তমলুক, নন্দকুমারে। ঝড়ে ইলেক্ট্রিক খু্ঁটি গায়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। নিহতের নাম সেক আসরফ খাঁন (৬২)। পাঁশকুড়া থানার শ্রীধরবসান গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। 


কয়েক মিনিটের ঝড়ে রেল লাইনে গাছ পড়ে শিয়ালদা মেইন ও দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। দক্ষিণ বারাসাত ও জয় নগরের মাঝে রেল লাইনের ওভার হেড তারের ওপর ফ্লেক্স উড়ে এসে পড়ায় আপাতত বন্ধ ট্রেন চলাচল। 
ঝড়ের দাপটে ট্রেন চলাচল ব্যাহত না হলেও অস্বাভিক দেরিতে চলছে বনগাঁ শাখার ট্রেন।
এদিন বিকেলে আকাশ কালো করে আচমকাই নেমে আসে ঝড় বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে বিহার থেকে বাংলার উপকূল পর্যন্ত নিম্নচাপ অক্ষরেখা সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকেও ঢুকছে জলীয় বাষ্প। যা বৃষ্টির জন্য আদর্শ বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ারও।
 

ভেঙে পড়া গাছটিকে সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছবি অনিল কুন্ডু।


এদিন সন্ধ্যায় আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে কালবৈশাখীর প্রবল ঝড়ের দাপটে একটি গাছ ভেঙে পড়ে। গাছের নীচে থাকা একটি গাড়ির উপর। প্রশাসন ও সিডিভি-র তৎপরতায় গাছটিকে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। ওই ঘটনায় একজনকে উদ্ধার করা হয় তৎক্ষণাৎ এবং আরও একজন আহত ব্যক্তিকে এমআরবাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর জানানো হয়েছে যে তাঁর অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।


হুগলীর জেলার সর্বত্রই জড় বৃষ্টিতে স্বস্তি আবহাওয়া নেমে আসে। সঙ্গে বজ্রপাতও হয় । জেলার গোঘাট , খানাকুল, তারকেশ্বর, আরামবাগ , পুরশুড়া, ধনিয়াখালি, হরিপাল, সিঙ্গুর, জাঙ্গিপাড়া, চন্ডীতলা, বলাগড়,পান্ডুয়া,চন্দননগর, হিন্দমোটর, উত্তরপাড়া সহ সব জায়গায় ঝড় বৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন বৃষ্টির অভাবে মাঠের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। জেলার খানাকুল, পুরশুড়া, তারকেশ্বর সহ বিভিন্ন মাঠে বাদাম গাছ জলের অভাবে ঝলসে যাচ্ছিল। সব মিলিয়ে এই বৃষ্টিপাতের ফলে বাদাম, তিল, পাট সহ সব ধরনের সবজি ফসলের বেশ উপকার হবে বলে কৃষকরা জানান।
 

Comments :0

Login to leave a comment