md salim at bardhaman

নিজেকে বাঁচাতে রাজ্যকে বাজি ধরছেন মমতা অভিযোগ সেলিমের

রাজ্য

md salim at bardhaman


 

নিজেকে, ভাইপোকে এবং দলের বাছাই করা কয়েকজন নেতাকে বাঁচাতে রাজ্যকে বাজি রেখে জুয়া খেলছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার বর্ধমানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, লুট দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতে বিজেপি’র কাছে মাথা নত করে দিয়েছেন। গোপন আলোচনায় রাজ্যের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন। মোদী-শাহকে সন্তুষ্ট করে তিনি রাজ্যের অর্থনীতি, রাজনীতি,  শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিষেবা এমনকি রাজ্যের ঐক্য ও সম্প্রীতি নিয়েও বাজি খেলছেন।  


সেলিম বলেছেন, মোদী অমিত শাহের ইচ্ছাকে পূরণ করতে দার্জিলিঙে মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের পূর্বতন রাজ্যপালকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের মতো উত্তরবঙ্গকে ভাগ করে ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন ও শোষণ বজায় রাখার পরিকল্পনা করছেন। এরপরে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। অথচ সংবাদমাধ্যম তা নিয়ে কিছু প্রকাশ করছে না, কোনও অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে না। আমরা রাজ্যভাগের বিরোধী। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলুন,  প্রশাসনিক বৈঠক,  দলীয় বৈঠক নিয়ে মিডিয়াতে তো অনেক হইচই করলেন,  কিন্তু বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন প্রকাশ্য ঘোষণা করলেন না?  রাজ্যবাসীর স্বার্থবাহী কোনও আলোচনাই হয়নি বলে ওঁরা চুপ করে আছেন বৈঠকের পরে।


রাজ্যবাসীর স্বার্থরক্ষার বদলে তৃণমূলের সর্বোচ্চস্তর পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্তদের রক্ষার শর্তেই যে বিজেপি’র সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আপসমূলক আলোচনা পর্ব চলছে তা উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, ইডি, সিবিআই’র হাত থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে বাঁচাতে তড়িঘড়ি মামলা রুজু করে রাজ্য পুলিশ তাঁকে হেপাজতে নিয়েছে। এর আগে অনুব্রতকে পাশে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বগটুইকাণ্ডে মিথ্যা মামলা কীভাবে সাজাতে হবে তা রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বলে দিয়েছিলেন। এখন মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য অনুব্রতর দিল্লি যাওয়া আটকানো। কারণ ওকে জেরা করলে অনেক কিছু বেরিয়ে পড়বে,  এতেই মমতা ব্যানার্জির ভয়। উনি নিজে ও পরিবারকে বাঁচানোর জন্য আপস করছেন। আর কতদিন অনুব্রতের মতো নেতাকে বাঁচাতে লালন শেখের মতো তৃণমূল কর্মীকে খুন হতে হবে? ভোটে জেতার জন্য তৃণমূল নেতাদের মজুত বোমাতে তৃণমূলেরই পরিবারের শিশুদের মরতে হবে?


তিনি বলেছেন, আমরা মানুষের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি, আর তৃণমূল এবং বিজেপি গোপনে আপস করছে। বাইরে মিডিয়ার সাহায্যে নকল যুদ্ধ দেখাচ্ছে, আমরা তা ফাঁস করে দেবো। আগামী দু-মাস ধরে লাল ঝান্ডার আন্দোলন-সংগ্রাম আরও তীব্র হবে, বড় রাস্তা থেকে ছোট রাস্তা, সাঁকো, গ্রামীণ পথ পেরিয়ে মানুষের উঠোনে পৌঁছে যাবে। জমিদার জোতদার, জরুরি অবস্থার স্বৈরতন্ত্র ইত্যাদির বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষের যে সংগ্রামী ঐতিহ্য আছে তা নিয়েই আমরা এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদির দাবি নিয়ে রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য এবং রাজ্যের মানুষের ঐক্যের জন্য লড়াই চালাবো।


শুধু তৃণমূল নয়, বিজেপিও কীভাবে চোর ধরার পরিবর্তে বাংলার মানুষকে প্রতারণা করছে তার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন,  চোর ধরার বদলে চোরেদের বাঁচানোর জন্য বিজেপি’র তৎপর হয়ে উঠেছে। চোরের ওপর বাটপাড়ির জন্য ইডি, সিবিআই’কে ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে বেআইনি কাজকারবারকে মদত দেওয়া হচ্ছে। মোদী শাসনে অপরাধীরা কেউ শাস্তি পায়নি। বরং তোলাবাজদের কাছ থেকে বাড়তি তোলা আদায় করেছে বিজেপি। তৃণমূলের লুটের টাকা বিজেপি’তেও গিয়েছে। এই সব লুটের টাকায় দুই দলের মধ্যে এমএলএ এমপি কেনাবেচা চলেছে। পঞ্চায়েত ভোটেও এই কালো টাকায় ওরা ভোটে জেতার চেষ্টা করবে।


এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, আরএসএসের কর্মসূচিই মমতা ব্যানার্জি এরাজ্যে প্রয়োগ করছেন। গোটা দেশের সমস্ত নদীর, নাব্যতা, সেচের টাকা নিয়ে গঙ্গা দপ্তর করা হয়েছে। অথচ আমাদের রাজ্যে মালদহে  জলঙ্গী নদীতে ভাঙনে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাঁদের পুর্নবাসন দেওয়া হচ্ছে না। সমস্ত টাকা নিয়ে বেনারসে ট্যুরিস্ট স্পট করা হচ্ছে। ২২হাজার কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে,  দুর্নীতি হয়েছে। আমি সংসদে থাকাকালীন সংসদীয় তদন্ত কমিটি এই নিয়ে রিপোর্টও দাখিল করেছিল, কিন্তু সেই রিপোর্ট গায়ের জোরে পাশ করাতে দেওয়া হয়নি সংসদে। লোক দেখানো গঙ্গা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কলকাতায় এর বৈঠক হওয়ার কথা। প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, নদী বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, পরিষদের কোনও হুঁশ নেই। দামোদর সহ একাধিক নদীতে অবৈধ বালি খাদান করে বালি লুট হচ্ছে। তিস্তা প্রকল্প জাতীয় প্রকল্প ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হলো। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে উত্তরবঙ্গের চেহারা বদলে যেতো। এসব নিয়ে তৃণমূলের কোনও সাড়াশব্দ নেই, ওরা লুটে ব্যস্ত। নদীভাঙন রোধ থেকে সেচের দাবিতে বামপন্থীরাই লড়াই করছে।

মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মানুষের অভাব অভিযোগ শুনেই লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে এগতে হবে। একমাত্র লুটেরা, চোর জোচ্চোর ছাড়া সব মানুষের বাড়িতেই যাবেন আমাদের নেতা কর্মীরা। ইতিমধ্যে রাজ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িতেই পৌঁছে গেছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। মানুষের জীবন যন্ত্রণার কথা শুনতে সব মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা হবে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)’র পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, পার্টিনেতা অপূর্ব চ্যাটার্জি প্রমুখ।

Comments :0

Login to leave a comment